২ দিন খুঁজেও না পেয়ে দালালের মাধ্যমে জুটল আইভি স্যালাইন

আইভি স্যালাইন
ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৩ বছর বয়সী মেয়েকে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর হন্যে হয়ে ইনট্রাভেনাস (আইভি) স্যালাইন খোঁজা শুরু করেন আব্দুর রব।

ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হলেও দুই দিন ধরে হাসপাতালের দোকান ও স্থানীয় ১৪-১৫টি ওষুধের দোকান খুঁজেও আইভি স্যালাইন পাননি খুলনার রূপসার এই বাসিন্দা। অসহায় হয়ে তখন তিনি একজন মধ্যস্থতাকারীর কাছে যান।

দ্য ডেইলি স্টারকে আব্দুর রব বলেন, 'দালাল ২১০ টাকায় স্যালাইনের এক লিটারের ব্যাগ এনে দেয়। আমি তাকে আরও ৩০ টাকা দিই।'

দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় আইভি স্যালাইনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আইভি স্যালাইনের খুচরা দাম ৮৫-৮৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে।

রাজধানীর শাহবাগের একাধিক ওষুধের দোকানের চারজন বিক্রয়কর্মী জানান, আইভি স্যালাইনের চাহিদা বিপুল পরিমাণে বাড়লেও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

ডেইলি স্টারের সংবাদদাতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের কিছু ওষুধের দোকানে যে পরিমাণ আইভি স্যালাইন অর্ডার দেওয়া হয়েছিল, পাওয়া গেছে তার ১০ শতাংশ। আর বরিশালে এর পরিমাণ পাঁচ শতাংশ।

এই সংকটকে গুরুত্ব দেয়নি ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, আইভি স্যালাইনের চাহিদা অনেক বেড়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছি।

কিন্তু রাজধানী ও এর বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ফার্মেসিগুলোতে আইভি স্যালাইনের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এমএইচ চৌধুরী লেলিন বলেন, সরবরাহ সংকটের কারণে হাসপাতালটি আইভি স্যালাইনের মারাত্মক ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে।

'আমরা যদি ১০০ ব্যাগের অর্ডার দেই, সরবরাহকারীরা মাত্র ২০-৩০ ব্যাগ দেয়। আমরা মিটফোর্ডের পাইকারি ওষুধের বাজারসহ অন্যান্য উৎস থেকে বেশি দামে স্যালাইন কিনছি।'

চাহিদা-সরবরাহের এই ব্যবধানের প্রভাব অন্যান্য রোগীদের ওপরেও পড়ছে।

ক্যানসার আক্রান্ত নাসিমা আক্তারকে দৈনিক দুই লিটার স্যালাইন ইনজেকশন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক। নাসিমার ছেলে আল আমিন জানান, মঙ্গলবার ১০-১২টি ওষুধের দোকানে গিয়েও আইভি স্যালাইন পাননি তিনি।

এই সংকটের কথা স্বীকার করে এর পেছনে মজুতদারদের দায়ী করেছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুল আলম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ওষুধ প্রশাসন সম্প্রতি ছয়টি ওষুধ কোম্পানিকে স্যালাইন উৎপাদন বাড়াতে বললেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে সরকার ২০ লাখ ব্যাগ আইভি স্যালাইন আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও অধ্যাপক এহসানুল কবির জানান, ভারত থেকে ৭ লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানির অর্ডার দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা ৭০ হাজার ব্যাগ পেয়েছে।

গতকাল তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে খুচরা ওষুধের দোকানে এগুলো পাওয়া যাবে।'

তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান চাহিদার মধ্যে স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে তাদের উৎপাদনের পরিমাণ সক্ষমতার কাছাকাছি নিয়ে গেছে। এ জন্য আমাদের আমদানির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আইভি স্যালাইন উৎপাদনকারী দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল বাশার জানান, প্রতিষ্ঠানটি তাদের দৈনিক উৎপাদন বাড়িয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার ব্যাগ পর্যন্ত করেছে।

গতকাল ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'কিন্তু চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে আমরা চাহিদার মাত্র ৯০ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছি।'

'সরকার স্যালাইন আমদানি করলে আমরা খুচরা দোকানে সরবরাহ বাড়াব। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলো আমাদের মোট উৎপাদনের ৬০ শতাংশ সংগ্রহ করে থাকে।'

অন্য পাঁচটি স্যালাইন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হলো বেক্সিমকো, লিব্রা, অপসোনিন, পপুলার ও অ্যাকমি।

অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটি গতকাল ১২ লাখ ব্যাগ সোডিয়াম ক্লোরাইড ও ৮ লাখ ব্যাগ গ্লুকোজ স্যালাইন কেনার জন্য সরাসরি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।

১১ ধরনের ইনজেকশনযোগ্য স্যালাইনের মধ্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড সলিউশন সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বাজার কারসাজি রোধে সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক মাস ধরে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ইনজেকশনযোগ্য স্যালাইনের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। মশাবাহিত এই রোগে চলতি বছর এখন পর্যন্ত অন্তত ৮৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮১০ জন সংক্রমিত হয়েছেন, যা ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথম এই রোগের খবর পাওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন ডেইলি স্টারের চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, রংপুর, খুলনা, নোয়াখালী ও নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতারা)

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

2h ago