৩০ বছর ধরে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত রেমাক্রির ১৮টি পাড়ার বাসিন্দা

প্রাথমিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অপুষ্টি ও নানা রোগ-শোক নিয়ে বেড়ে উঠছে বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮টি গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের শিশু-কিশোর। ছবি: মংসিং হাই মারমা/স্টার

৩০ বছরের মধ্যে সেখানে পৌঁছায়নি কোনো স্বাস্থ্যকর্মী। অসুস্থ হলে একমাত্র ভরসা নিজেদের তৈরি টোটকা। নবজাতক থেকে শুরু করে শিশু-কিশোর এমনকি বহু যুবকও কোনোদিন পাননি ভিটামিন এ ক্যাপসুল বা অন্যান্য রোগপ্রতিরোধের টিকা; গড়ে ওঠেনি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ফলে প্রাথমিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অপুষ্টি ও নানা রোগ-শোক নিয়ে বেড়ে উঠছে বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮টি গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের শিশু-কিশোর।

সম্প্রতি রেমাক্রি ইউনিয়নের বড়মদকে সাঙ্গু নদীর শেষ প্রান্তের এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে পাড়াবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

লইক্রি পাড়ার প্রধান কারবারি মুই তং ম্রো (৭৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে ২০-২২টি পরিবার মিলে লইক্রি পাড়ায় বসতি গড়ে তোলেন। বর্তমানে সেখানে ম্রো সম্প্রদায়ের ৩৭টি পরিবারের প্রায় আড়াই শ মানুষের বসবাস।

মুই তং ম্রো জানান, এই ৩০ বছরের মধ্যে কোনো স্বাস্থকর্মী সেখানে যাননি। সরকারিভাবে কোনো টিকা দিতে বা 'ভিটামিন-এ' ক্যাপসুল খাওয়াতেও দেখা যায়নি।
 
তিনি আরও জানান, এত বছর ধরে সেখানে কোনো স্কুল ছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে লোইকক্রি পাড়ায় চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। তবে বাকি ১৭টি পাড়ায় কোনো বিদ্যালয় না থাকায় পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে না সেখানকার ছেলেমেয়েরা।

পাড়াগুলো হলো, মেনহাত ম্রো পাড়া, বুলু পাড়া, তাংখোয়াই ম্রো পাড়া, কোয়াইং ক্ষ্যং পাড়া, য়ং ডং পাড়া, ইয়াংবং পাড়া, ম্রঃক্ষ্যং পাড়া, চন্দ্র মোহন ত্রিপুরা পাড়া, লোইকক্রি পাড়া, রুইওয়াই ম্রো পাড়া, কংকং ত্রিপুরা পাড়া, ইয়ং ক্লাং ম্রো পাড়া, মংবাউ মারমা (মালুমগ্যা) পাড়া, সূর্য্যমনি ত্রিপুরা পাড়া, লাই পুং পাড়াংবং এবং নিচে য়াংবং পাড়াসহ মোট ১৮টি পাড়া রয়েছে। বড়মদক বাজারের আরও কিছুটা ভেতরে সাঙ্গু নদীর শেষ সীমান্ত এলাকায় এসব পাড়া অবিস্থত।

এদিকে কোয়াইং ক্ষ্যং পাড়ায় গিয়ে অল্প বয়সী এক নারীকে তার ৬ দিনের শিশুকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সন্তান জন্মের আগে বা পরে কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেননি। অন্যান্য নারীরাও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই সন্তান জন্ম দেন।

রেমাক্রি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ডলুঝিরি পাড়ার কারবারি (পাড়াপ্রধান) চন্দ্র মোহন ত্রিপুরা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কোয়াইং ক্ষ্যং ম্রো পাড়ার কারবারী (পাড়া প্রধান) কাইং ওয়াই ম্রোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড মিলে ১৮টির বেশি পাড়ায় প্রায় ২ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করলেও আজ পর্যন্ত সেখানে কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী যাননি। ফলে পাড়ার বয়স্ক ও শিশু থেকে শুরু করে গর্ভবতী মায়েরাও কোনো স্বাস্থ্যসেবা পান না।

তা ছাড়া এসব এলাকায় কোনো বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষার আলো থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা।

২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, রেমাক্রি ইউনিয়নের জনসংখ্যা ৮ হাজার ৬০০ জন। তবে, ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যমতে, বর্তমানে এই ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার।

১৮টি পাড়ার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন মো. মাহাবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।'

তবে কিছুদিন আগে সেখানে যোগদানের কারণে ওই এলাকার কিছু বিষয় সম্পর্কে জানা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যতটুকু শুনেছি ওই এলাকাগুলো বেশ দুর্গম। তবুও সবার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে রেমাক্রির ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম এলাকাগুলোতে অন্তত প্রতি ৩ মাস অন্তর একটি ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

এ ছাড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মান্নান বলেন, 'সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, যদি কেউ স্কুলের জায়গা দিতে রাজি থাকেন এবং নিয়ম অনুসারে আবেদন করেন তাহলে দুর্গম রেমাক্রি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago