কাঁচের ভবনে বিভ্রান্তি, ধাক্কা খেয়ে এক রাতে হাজার পাখির মৃত্যু

কাঁচের ভবনে ধাক্কা খেয়ে হাজার পাখির মৃত্যু
ছবি: সংগৃহীত

শরতের শুরুতে কানাডা থেকে দক্ষিণ আমেরিকার পথে যাত্রা করেছিল ধুসর হলদেটে ছোট্ট পাখি ওয়ারব্লার। খাবার আর প্রজননের তাগিদে মিশিগান লেক ঘেঁষে চলছিল গন্তব্যের দিকে।

গত বুধবার রাতে শিকাগোয় ওই লেকের পাড়ে এসে হঠাৎ মৃদু আলো দেখে বিভ্রান্তিতে পড়ে ছোট্ট পাখির দল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোথাও সজোরে ধাক্কা খেয়ে ঝরে পড়তে থাকে পাখিরা।

পরদিন সকালে সেখানে ভয়াবহ এক দৃশ্য দেখেন ডেভিড উইলার্ড। ৪০ তলা ম্যাক-করমিক কনভেনশন সেন্টারের কাঁচের দেয়ালের নিচে পড়ে আছে হাজার হাজার মৃত পাখি।

এই পাখি পর্যবেক্ষকের কাছে মনে হচ্ছিল রাতে সেখানে নীল-হলুদ রংয়ের কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে কেউ। বার্তাসংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমি ৪০ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। এতো বিপুল সংখ্যক পাখির একসঙ্গে মৃত্যু কখনো দেখিনি।'

ধূসর হলদেটে ওয়ারব্লার পাখি। ছবি: সংগৃহীত

শিকাগো শহর থেকে দুই মাইল দক্ষিণে মিশিগান লেকের তীরে প্রায় ২৬ লাখ স্কয়ার ফুট জায়গার ওপর নির্মিত উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় কনভেনশন সেন্টার- ম্যাক-করমিক। ৪০ তলা এ ভবনের অধিকাংশ দেয়ালই স্বচ্ছ কাঁচের। আর এই কাঁচেই ধোঁকা খায় পরিযায়ী পাখিরা।

পরিবেশকর্মীরা জানান, ভবনটির আশপাশের প্রায় দেড় মাইল জুড়ে মিলছে পাখিদের মৃতদেহ। এর মধ্যে রয়েছে টেনেসি ওয়ারব্লার, হারমিট থ্রাশ, আমেরিকান উডকসসহ বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য সংবার্ড। উদ্ধার করা হচ্ছে আহত পাখিদেরও।

শিকাগো বার্ড কলিশন মনিটরের পরিচালক অ্যানেট প্রিন্স বলেন, 'একদিনে একটি মাত্র ভবনে ধাক্কা খেয়ে ১ হাজার পাখির মৃত্যু- এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। বড় ধরনের বিপর্যয় এটি।'

শিকাগোর ম্যাক-করমিক কনভেনশন সেন্টার। ছবি: সংগৃহীত

কানাডার ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখি গবেষক ব্রেন্ডন স্যামুয়েল বলেন, 'ওই কাঁচের দেয়ালের নিচেই যে সব পাখির মৃতদেহ মিলবে এমনটা না। আমরা দেখেছি, গুরুতর আহত হওয়ার পরও অনেক পাখি বেশ কয়েক ঘণ্টা উড়তে পারে, তারপর মারা যায়। তার মানে হচ্ছে, পুরো শিকাগো জুড়েই আগামী কয়েক দিন এমন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা অসংখ্য মৃত পাখির দেখা মিলবে। এরপরই বোঝা যাবে, মৃত পাখির প্রকৃত সংখ্যা কত।'

২০১৪ সালে মার্কিন বন্য প্রাণী বিষয়ক সংস্থার একটি জরিপে দেখা যায়, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাঁচের জানালা বা দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে প্রায় ১০০ কোটি পাখি মারা যায়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ওয়ারব্লারের মতো পরিযায়ী পাখিরা সাধারণত রাতে আকাশের তারা দেখে পথ চলে। শহরের সুউচ্চ ভবনের আলো তাদের আকৃষ্ট করে এবং বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে পাখিরা। ওই আলোর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বিভ্রান্ত পাখিরা এক সময় ক্লান্ত হয়ে মারা যায়। 

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের মধ্যে শিকাগোতেই আলো দূষণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পরিযায়ী পাখিরা। ২০২১ সালের গবেষণায় দেখা যায়, ম্যাক-করমিক কনভেনশন সেন্টারের মতো উঁচু ভবনের অর্ধেক বাতি নিভিয়ে দিলে পাখিদের মৃত্যু ৬ থেকে ১১ গুণ কমিয়ে আনা সম্ভব।

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Remittance crosses $30 billion for first time

Inward remittance rises 26.5% in Jul–Jun period

1h ago