ইসরায়েলের কারাগারে কত ফিলিস্তিনি বন্দি

বর্তমানে, ইসরায়েলের কারাগারে রয়েছেন ৫ হাজার ২০০ জন ফিলিস্তিনি। বন্দিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৩৩ ও ১৭০। তাদের বিচার হলেও সেটা হয় সামরিক আদালতে।
ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি জানাতে তাদের ছবি নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ। ১৭ এপ্রিল ২০২৩, নাবলুস, পশ্চীম তীর। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের শতাধিক সামরিক ও বেসামরিক নাগরিককে জিম্মি করার কথা দাবি করেছে হামাস। তারা বলেছে গাজার বিভিন্ন জায়গায় তাদেরকে রাখা হয়েছে।

শনিবার গাজা থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে অতর্কিত হাজারো রকেট ছোড়া হয়। সেই সঙ্গে হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালায়। ভিডিওতে দেখা যায়, হামাস যোদ্ধারা বিভিন্ন গাড়ি, গলফ কার্ট, ভ্যান ও মোটরসাইকেলে করে ইসরায়েলের নাগরিক ও সেনা সদস্যদের গাজা উপত্যকায় নিয়ে গেছে।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তি করতে তারা জিম্মি হওয়া ইসরায়েলিদের ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।

তবে প্রশ্ন উঠতে পারে ইসরায়েলের কারাগারে কতজন ফিলিস্তিনি বন্দি আছেন এবং তাদের মধ্যে কত জন শিশু রয়েছে?

অনেকে মনে করেন, গোটা গাজা উপত্যকা কার্যত একটি উন্মুক্ত কারাগার। ভূমধ্য সাগরের পাড়ে ১৪০ বর্গমাইলের এই উপকূলীয় ছিটমহলটিতে ২২ লাখ ফিলিস্তিনি অবরুদ্ধ জীবন যাপন করেন। কখনো না কখনো ইসরায়েলের কারাগারে ছিলেন এমন ফিলিস্তিনিদের সংখ্যাও প্রায় একই রকম।

২০০৬ সালে, গাজা সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার উল্টো দিক থেকে একজন ইসরায়েলি নাগরিককে অপহরণ করেছিল হামাস যোদ্ধারা। পাঁচ বছর বন্দি রাখার পর তার মুক্তির বিনিময়ে এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল ইসরায়েল।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬৭ সালে যখন ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম, গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীর দখল করে, তখন তারা আনুমানিক ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে বন্দি করে।

তখন, প্রতি পাঁচ জন ফিলিস্তিনির মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১ হাজার ৬০০টি সামরিক আদেশের আওতায় তাদের অভিযুক্ত করা হয়। এভাবে ইসরায়েলের দখল করা অংশে থাকা ফিলিস্তিনিদের জীবনের প্রতিটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফিলিস্তিনি পুরুষদের মধ্যে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে অন্তত দুই জন ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কারাবন্দি মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের। সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের কারাগারে যাওয়ার হার দেশটির সামগ্রিক পরিসংখ্যানের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি। তবে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে তুলনা করলে সেটি অতি সামান্যই হবে।

ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের অধিকার নিয়ে সক্রিয় গোষ্ঠী 'অ্যাডামির' ইসরায়েলি কারাব্যবস্থাকে 'দমন ও হত্যার জন্য একটি জটিল, আইনি এবং নীতিগতভাবে নিপীড়নমূলক' বলে আখ্যায়িত করেছে।

বর্তমানে, ইসরায়েলের কারাগারে রয়েছেন ৫ হাজার ২০০ জন ফিলিস্তিনি। বন্দিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৩৩ ও ১৭০। তাদের বিচার হলেও সেটা হয় সামরিক আদালতে।

এত ফিলিস্তিনি বন্দি কেন

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ফিলিস্তিনি ও আরব ভূখণ্ড দখল করে নেওয়ার দুই মাস পর সামরিক আদেশ ১০১ জারি করে। এর মাধ্যমে মূলত 'বিদ্বেষমূলক প্রচারণা ও উসকানি নিষিদ্ধ' আইনের আওতায় ফিলিস্তিনিদের অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে এখনো এই আদেশটি ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া; সংগঠন করা; রাজনৈতিক দাবি সম্বলিত লেখা ছাপানো ও বিতরণ; পতাকা বা অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতীক ওড়ানোকে সামরিক আদেশের অধীনে বেআইনি বলে বিবেচনা করা হয়।

এর তিন বছর পর ইসরায়েল সরকার আরেকটি সামরিক আদেশ (৩৭৮) জারি করে। এই আদেশে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সব ধরনের প্রতিরোধকে 'সন্ত্রাস' আখ্যা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের বিচারে সামরিক আদালতও প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এরপর থেকে ফিলিস্তিনিদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংকুচিত করতে আরও শত শত সামরিক আদেশ ব্যবহার করা হয়েছে।

ইসরায়েলে যত কারাগার

ইসরায়েলের ভেতরে ১৯টি কারাগার আছে এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে আছে আরেকটি কারাগার। যেখানে ফিলিস্তিনি বন্দিদের রাখা হয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব কারাগারের বিষয়ে বলেছে, 'বন্দিদের জন্য এটি বেআইনি ও নিষ্ঠুর একটি বিষয়। কারাবন্দি ফিলিস্তিনিরা মাসের পর মাস এবং কখনো কখনো বছরের পর বছর তাদের প্রিয়জনের দেখা পান না। এর পরিণতি ধ্বংসাত্মক হতে পারে।'

 

সূত্র: আল জাজিরা

Comments

The Daily Star  | English

Phase 2 UZ Polls: AL working to contain feuds, increase turnout

Shifting focus from its earlier position to keep relatives of its lawmakers from the upazila election, the ruling Awami League now seeks to minimise internal feuds centering on the polls and increase the voter turnout.

8h ago