আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

হতশ্রী ব্যাটিং-বোলিংয়ে বাংলাদেশের বড় হার

বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের কাছে ধরাশায়ী হলো তারা।

হতশ্রী ব্যাটিং-বোলিংয়ে বাংলাদেশের বড় হার

বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড
ছবি: এএফপি

ইংল্যান্ড বড় পুঁজি গড়ার পরই বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেকখানি কমে গিয়েছিল। বোলিংয়ের পর টাইগারদের ব্যাটিংয়েও দেখা গেল হতশ্রী দশা। রান তাড়ায় প্রতিপক্ষকে কোনো চ্যালেঞ্জ জানাতে পারল না। বিবর্ণ পারফরম্যান্সে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কাছে ধরাশায়ী হলো তারা।

মঙ্গলবার ধর্মশালায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল। ৩৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১০ বল বাকি থাকতে ২২৭ রানে গুটিয়ে গেছে তারা। এবারের আসরে এটি তাদের প্রথম হার। নিজেদের আগের ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়েছিল তারা। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের কাছে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী বিধ্বস্ত হওয়া ইংলিশরা জয় দিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল।

বল হাতে ইংল্যান্ডের সেরা পারফর্মার একাদশে ঢোকা রিস টপলি। এই বাঁহাতি পেসার ১০ ওভারে ৪৩ রান খরচায় নেন ৪ উইকেট। ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারেই জোড়া শিকার ধরেন তিনি। শুরুর ওই ধাক্কা সামলে আর ফেরা হয়নি বাংলাদেশের।

প্রথম ওভারে ডানহাতি পেসার ক্রিস ওকসকে টানা তিনটি মারেন লিটন দাস। তবে এই আনন্দের ব্যাপ্তি স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। পরের ওভারেই বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেন একাদশে ফেরা বাঁহাতি পেসার রিস টপলি।

জায়গায় দাঁড়িয়ে ঠিকমতো খেলতে ব্যর্থ হন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। বল তার ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে জনি বেয়ারস্টোর হাতে। ২ বলে তার রান ১। পরের বলেই বড় শিকারের উল্লাসে মাতে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ড্রাইভ করার চেষ্টায় লিয়াম লিভিংস্টোনের তালুবন্দি হন নাজমুল হোসেন শান্ত। গোল্ডেন ডাকের তিক্ত স্বাদ জোটে তার।

১৪ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর প্রয়োজন ছিল প্রতিরোধ গড়ার। কিন্তু সপ্তম ওভারে সাকিব আল হাসান বোল্ড হন টপলির অসাধারণ একটি ডেলিভারিতে। অফ স্টাম্পে পিচ করে সোজা যাওয়া বল বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাট এড়িয়ে ভেঙে দেয় স্টাম্প। ৯ বলে ১ রান করেন সাকিব।

বিপদ আরও বাড়িয়ে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। ওকসের বলে ইংলিশ দলনেতা ও উইকেটরক্ষক জস বাটলারের গ্লাভসে ক্যাচ দেন তিনি। আগের ম্যাচে তিনে খেলা মিরাজ এদিন পাঁচে নেমে ৭ বলে ৮ রান করেন। ফলে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

রানের খোঁজে থাকা লিটন ভাঙেন ব্যর্থতার বৃত্ত। তিনি আগ্রাসী ঢঙে খেলে ফিফটি তুলে নেন। সাজিয়ে বসেন বাহারি সব শটের পসরা। প্রতিরোধ লড়াইয়ে তার সঙ্গী হন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। তবে সেঞ্চুরির সুবাস জাগিয়ে থামতে হয় লিটনকে।

আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৩৮ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন লিটন। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটি, বিশ্বকাপের মঞ্চে দ্বিতীয়। দৃঢ়তা দেখানো মুশফিকের সঙ্গে তার জুটির রান পঞ্চাশ ছাড়ায় ৫৮ বলে। দুই তারকার কল্যাণে ১১ থেকে ২০- এই ১০ ওভারে কোনো উইকেট পড়েনি বাংলাদেশের।

২১তম ওভারের শেষ বলে থামতে হয় লিটনকে। আক্রমণে ফেরা ওকসের অফ কাটারে পরাস্ত হন তিনি। ক্যাচ চলে যায় উইকেটের পেছনে থাকা জস বাটলারের গ্লাভসে। ৬৬ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় লিটনের রান ৭৬। তার বিদায়ে ভাঙে মুশফিকের সঙ্গে তার ৭৫ বলে ৭২ রানের জুটি। বিপদ আরও ঘনীভূত হয় বাংলাদেশের।

৬১ বলে ফিফটি পান অভিজ্ঞ মুশফিক। তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে তার ৪৩ রানের জুটির ইতি ঘটে এর পরপরই। টপলির বলে বড় শট খেলার চেষ্টায় থার্ডম্যানে আদিল রশিদের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। তার ৬৪ বলে ৫১ রানের ইনিংসে ছিল ৪টি চার।

এরপর হৃদয় ও শেখ মেহেদী হাসানের ব্যাটে দেখা যায়নি কোনো তাড়া। দুজনই খেলেন মন্থর ইনিংস। বল হাতে পেয়েই লেগ স্পিনে ৬১ বলে ৩৯ রান করা হৃদয়কে ফেরান লিভিংস্টোন। রশিদের গুগলি বুঝতে না পেরে ৩২ বলে ১৪ রানে বোল্ড হন শেখ মেহেদী। শেষদিকে তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামরা কেবল হারের ব্যবধানই কমান।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রানের বিরাট পুঁজি পায় ইংল্যান্ড। এতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা বাংলাদেশ পায় রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেটা অনেক দূরের পথ হয়ে থাকল।

হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার খেলেন দুর্দান্ত ইনিংস। এর সঙ্গে যোগ হয় বাংলাদেশের হতাশাজনক বোলিং ও ফিল্ডিং। শেষদিকে অবশ্য বোলাররা ঘুরে দাঁড়ান। শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৬ রান তুলতে ইংলিশরা হারায় ৬ উইকেট। নইলে তাদের সংগ্রহ চারশ ছাড়িয়ে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা ছিল।

আগ্রাসী সেঞ্চুরি হাঁকানো ডাভিড মালান ওপেনিংয়ে বেয়ারস্টোর সঙ্গে ১১৫ ও দ্বিতীয় উইকেটে জো রুটের সঙ্গে ১৫১ রানের জুটি গড়েন। মালান ১০৭ বলে ১৬ চার ও ৫ ছক্কায় ১৪০ রান করেন। রুট ৬৮ বলে খেলেন ৮২ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস। তার ব্যাট থেকে আসে ৮ চার ও ১ ছক্কা। বেয়ারস্টো ৮ চারে ৫৯ বলে করেন ৫২ রান।

একাদশে ঢোকা শেখ মেহেদী বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন। তবে ৮ ওভারে তিনি দেন ৭১ রান। ১০ ওভারে ৭৫ রানের বিনিময়ে শরিফুল শিকার ৩ উইকেট। বাংলাদেশের ব্যবহার করা ছয় বোলারের মধ্যে ওভারপ্রতি ছয়ের কম রান দেন কেবল সাকিব। ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে তিনি পান ১ উইকেট।

Comments

The Daily Star  | English
NBR speeds up auction process of abandoned goods

NBR moves to speed up auction of abandoned goods

About 2 lakh tonnes of imported goods left abandoned at Chattogram port alone for years

1h ago