মামলা সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন বিএনপি নেতারা

বিএনপির আইনি সেলের তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় ১৯টি আদালতে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে তিন শতাধিক মামলা চলছে।
খুলনা

প্রতিদিন বিএনপি নেতাদের কোনো না কোনো মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হয়। এখন এটি তাদের নিয়মিত কাজ। অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সাথে আদালতে হাজিরা দেওয়া, জামিন নেওয়া, সাক্ষী আনা এই সব কাজ এখন তাদের নিত্যদিনের অংশ বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতাদের অনেকে।

ইতোমধ্যে নেতাদের নামে হওয়া মামলা পরিচালনায় দলীয় আইনজীবীদের নিয়ে পৃথক সেল তৈরি করেছে খুলনা মহানগর বিএনপি। দলীয় নেতারা বলছেন, এতগুলো মামলার তারিখ মনে রাখা, সাক্ষী হাজির করা, উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়া এসব কাজে অনেকে বিপর্যস্ত। এমনকি অনেকে ঠিক মতো জানেনও না তার নামে কতগুলো মামলা। কোনো কোনো নেতার চার পাঁচজন আইনজীবী রয়েছে তারা এগুলো পরিচালনা করছেন।

বিএনপির আইনি সেলের তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় ১৯টি আদালতে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে তিন শতাধিক মামলা চলছে। এর মধ্যে ৪৮টি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ মাঝ পর্যায়ে রয়েছে। একটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ঠিক কতগুলো মামলা হয়েছে তার সঠিক হিসাব রাখা কঠিন।

তবে এ সংখ্যা ৩৫০ এর বেশি বলে জানান তিনি। এখানে আসামির সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।

বিএনপির আইনজীবী সেলের প্রধান গোলাম মাওলা বলেন, আগে চার-পাঁচ মাস পর তারিখ পড়ত, দিনে দু-তিন জনের সাক্ষ্য হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রতি মাসেই তারিখ, সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে ১০-১২ জন করে। অনেক নেতাদের আদালতের বারান্দায় কেটে যাচ্ছে দিনের অনেক সময়।

'২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমার নামে ৯৮টি নাশকতা ও গায়েবি মামলা হয়েছে। এসব মামলার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, আমি স্পটে ছিলামও না। অথচ এসব মামলায় গত দেড় বছরে আমাকে চার বার জেলে যেতে হয়েছে, ছয় মাসের বেশি সময় আমি জেলে কাটিয়েছি,' বলেন খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন।

'এমন কি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে হাজির হলে আমাকে জেলে পাঠিয়েছে,' বলেন তিনি।

'প্রতিদিন চার-পাঁচটি মামলায় হাজিরা দিতে হয়। বেলা ১০টা হাজিরার সময় থাকলে সেখানে আমাদেরকে সময় ক্ষেপণ করে বিকেল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি কোনো কোনো মামলায় ৪-৫ ঘণ্টা আদালতে দাঁড় করিয়ে রাখে,' বলেন তিনি।

'গত দু মাস আগে আমার একটি মামলায় এক দিনে ২২ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। দীর্ঘ সময় আমাকে আদালতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, তারপরও নিস্তার নেই,' বলেন তিনি।

২০১৩ সালে নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ২৫ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। মামলাটির বিচার চলছে গত ১০ বছর ধরে। দীর্ঘদিন কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। গত ২৯ আগস্ট এক দিনেই ১১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে বিএনপির ৩৭ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালে বিচার শুরু হয়। গত পাঁচ বছর ধরে মামলাটির বিচার চলছিল ধীরগতিতে। তারিখও পড়েছে চার-পাঁচ মাস পর পর। তবে হঠাৎ করেই সেটা বদলে গেছে জানান বিএনপি নেতারা। গত ২৪ জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলার বাদীসহ ২০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। নতুন দিন ধার্য ছিল গত ২৭ সেপ্টেম্বর।

শুধু এই দুটি নয়, গত ৩-৪ মাস ধরে খুলনায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে চলা মামলার বিচার কার্যক্রম ও বিচারিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব মামলা বছরের পর বছর ধরে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি, সেগুলো এক দিনেই ৭ জন, ১১ জন এমনকি ২০ জনেরও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে।

মামলাগুলোয় খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাবেক সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, গত নির্বাচনে খুলনা-১ আসনের প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আসনের প্রার্থী আজিজুল বারী হেলাল, আগামীতে প্রার্থী হতে আগ্রহী অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনসহ ৫ থানা বিএনপির শীর্ষ নেতারা আসামি।

বিএনপির নেতারা বলছেন, একটি মামলায় সাজা হলেই নির্বাচনের অযোগ্য হবেন তারা।

খুলনা নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমিসহ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে একটি মামলার বিচার চলছে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে। গত ২০ মার্চ ওই মামলায় তিন জনের এবং ৩০ আগস্ট আরও সাত জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মামলার পরবর্তী তারিখ ১৮ অক্টোবর। আগে মামলার দিন ধার্য হয়েছে পাঁচ মাস পর, এখন প্রতি মাসেই দিন ধার্য হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি, নির্বাচনের আগে তারা সাজা দিতে চায়।'

Comments