এক অ্যাপার্টমেন্টে বিশ্ব ক্রিকেটের বিপুল রত্ন ভাণ্ডার

ব্লেডস অফ গ্লোরি ক্রিকেট মিউজিয়ামে ঘণ্টা দুয়েকের উপস্থিতিতে সত্যিই মুগ্ধ না হয়ে পারা গেল না। বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক মনি রত্নেই যে ভরপুর আছে পুরো অ্যাপার্টমেন্ট। পাশের ভবনে গুদাম ঘরে রাখা আছে আরও বিপুল ভাণ্ডার! সব একটা একটা করে খতিয়ে দেখতে গেলে পুরো দিন পার হয়ে যাবে।

পুনে থেকে

এক অ্যাপার্টমেন্টে বিশ্ব ক্রিকেটের বিপুল রত্ন ভাণ্ডার

ব্লেডস অফ গ্লোরি ক্রিকেট মিউজিয়াম
কিংবদন্তিদের ব্যাট

পুনের একটি অভিজাত আবাসিক এলাকার বহুতল ভবনের সামনে গিয়ে প্রথমে মনে হলো ভুল ঠিকানায় চলে এলাম নাকি! জাদুঘরের কিউরেটর ত্রিনিদাদের নাগরিক ফিল ড্যানিয়েল অভ্যর্থনা জানাতে এসেও বললেন, 'ভাবছিলেন, হয়ত এখানে আসলেই ক্রিকেটের মিউজিয়াম আছে?' হেসে সম্মতি দিতেই বলেন, 'ভেতরে গেলে আমি নিশ্চিত ধারণা বদলে যাবে।'

ব্লেডস অফ গ্লোরি ক্রিকেট মিউজিয়ামে ঘণ্টা দুয়েকের উপস্থিতিতে সত্যিই মুগ্ধ না হয়ে পারা গেল না। বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক মনি রত্নেই যে ভরপুর আছে পুরো অ্যাপার্টমেন্ট। পাশের ভবনে গুদাম ঘরে রাখা আছে আরও বিপুল ভাণ্ডার! সব একটা একটা করে খতিয়ে দেখতে গেলে পুরো দিন পার হয়ে যাবে।

Cricket Museum
বিশ্বকাপ জয়ী দলগুলোর খেলোয়াড়দের স্বাক্ষর

এখনো পর্যন্ত ওয়ানডে  ও টেস্টে ১০ হাজার রান করা সব ব্যাটারের স্বাক্ষর করা ব্যবহৃত ব্যাট। টেস্টে  তিনশো, চারশো, পাঁচশো উইকেট পাওয়া বোলারদের স্বাক্ষর করা বল। বিশ্বকাপ জেতা সব অধিনায়কের স্বাক্ষর করা ব্যাট, বিশ্বকাপ জেতা সবগুলো দলের ফাইনাল খেলা খেলোয়াড়দের স্বাক্ষরিত ব্যাট সাজিয়ে রাখা হয়েছে আলাদা কর্নার করেন।

এক কোণায় পাওয়া গেল ২০১৮ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের স্বাক্ষরিত একটি জার্সি। সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমানের জার্সিও আছে। প্রদর্শনীতে রাখার অপেক্ষায় তামিম ইকবালের জার্সি। মুশফিকুর রহিম যে ব্যাট দিয়ে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন সেটি ব্যাট করোনাভাইরাসের সময় নিলামে তুলেছিলেন। নিলাম থেকে সেই ব্যাট কিনে নেন শহীদ আফ্রিদি। আফ্রিদির কাছ থেকে এই মিউজিয়ামের মালিক রোহান পাটে আবার সেটা সংগ্রহ করে এনেছেন। সেটাও রাখা হবে গ্যালারিতে।

ক্রিকেটের অসাধারণ এই সংগ্রহশালা ২০১২ সালে উদ্বোধন করেন শচিন টেন্ডুলকার। উদ্যোক্তা রোহান পাটের অনুরোধে শুরুতে একশো আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির মালিকই দেন তার ব্যবহৃত একটি ব্যাট। পরে সেখানে আশ্রয় পেয়েছে শচিনের ৫০তম টেস্ট সেঞ্চুরির সময়ের এলবো, চেস্ট গার্ড। শচিনের দেওয়া আরেকটি ব্যাট সবাইকে স্পর্শ করার জন্যও রাখা হয়েছে।

মাস্টার শচিনের কর্নারে শোভা পাচ্ছে তার বিশ্বকাপের জার্সিসহ অনেক কিছু। একইভাবে বিরাট কোহলির জন্যও আছে একটি কর্নার। কোহলি যে ব্যাট দিয়ে ২০১৬ সালে বিশ্ব ক্রিকেট রাজত্ব করেছিলেন, সেটি যত্ন করে ফ্রেমবন্দি করা হয়েছে এখানে। কোহলির জার্সি, প্যাড, গ্লাভস এসব তো আছেই। তার জন্য একটি স্কোরবোর্ডও রাখা আছে। তিনি রান করলে সেই স্কোরবোর্ড আপডেট হয়।

Cricket Museum
আছে সাকিবের ব্যবহৃত জার্সিও

এই মিউজিয়ামের উদ্যোক্তা রোহান নিজেও ছিলেন ক্রিকেটার। ক্রিকেটে বড় কিছু করতে না পারলেও ক্রিকেটের স্মৃতি সংরক্ষণের ঝোঁক তাকে পেয়ে বসেছে প্রবলভাবে। এই যুগের ক্রিকেটার তো বটেই দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে সংগ্রহ করে এনেছেন জিওফ্রি বয়কট থেকে অ্যালান বোর্ডার কিংবা ভিভ রিচার্ডসের টুপিও।

অজি কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যান দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার ড্যারেল কালিনানকে স্বাক্ষর করে একটি জার্সি উপহার দিয়েছিলেন, সেটিও এখন রোহানের জাদুঘরে।

গ্যালারিতে রাখা সব সংগ্রহ দেখানোর পর গুদাম ঘরে নিয়ে গিয়ে অবাক করে দিলেন তিনি। সেখানে শত শত স্মারক রাখা আছে যা দিয়ে একাধিক মিউজিয়াম হয়ে যাবে সহজেই।

গুদাম ঘরে রাখা আছে মনি রত্নের আরও বিপুল ভাণ্ডার

বিপুল সংগ্রহের কারণেই তার দাবি এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট মিউজিয়াম,  'এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট মিউজিয়াম। কারণ আমাদের সংগ্রহে ৭০ হাজারের বেশি স্মারক আছে। ২০১০ সালে শচিনের উপহার দেওয়া ব্যাট দিয়ে যাত্রা শুরু। ১৯৭৫ থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত সব জয়ী দলের ক্রিকেটারদের ব্যাট, জার্সি, জুতো, প্যাড, গ্লাভস, স্টাম্প এসব আছে।'

চলতি বিশ্বকাপেও চলছে রোহানের স্মারক সংগ্রহের কাজ। অংশ নেওয়া প্রতিটি দলের ক্রিকেটারদের স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেছে ব্যাট। বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দলের ক্রিকেটারদের স্বাক্ষরও নেওয়া হয়ে গেছে।

আগের রাতে বাংলাদেশের টিম হোটেলে গিয়েই কাজ সেরে পাওয়া ব্যাটটা দেখালেন। দাওয়াতও দিয়ে এসেছেন সাকিবদের, 'এই মিউজিয়ামে দেশ বিদেশের অনেক বড় বড় ক্রিকেটার এসেছেন।  বাংলাদেশ দলও এই মিউজিয়ামে দু'একদিনের মধ্যে আসবে বলে আশা করি।' 

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পূর্বাচলে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম করছে শুনে ইতোমধ্যে তিনি বিসিবির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। বাংলাদেশে ক্রিকেট জাদুঘর হলে তিনি সেখানে যুক্ত থাকতে আগ্রহী,  'যদি সুযোগ পাই বাংলাদেশেও এমন জাদুঘর হলে আমি যুক্ত থাকতে চাই। জানতে পেরেছি বাংলাদেশে নতুন স্টেডিয়াম হচ্ছে, সেখানে মিউজিয়াম হতে পারে। আগামী এক বছরের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন শহরে আমরা ১০টি মিউজিয়াম করব আমাদের সংগ্রহশালা দিয়ে।'

প্রতি সপ্তাহে শ'খানেক লোক পুনের এই জাদুঘর দেখতে যান। প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছে দুশো রূপি। তবে ব্যবসার জন্য নয়, ক্রিকেটের পোকা থেকেই এই মহাযজ্ঞে নেমেছেন তিনি,  'আমি বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলতাম। রোহান কানাইয়ের নাম থেকে আমার নাম রাখা। মহারাষ্ট্রের রঞ্জি দলেও আমি ছিলাম। নানা কারণে খেলায় এগুতে পারিনি, কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে কিছু করার প্যাশনটা রয়ে গেছে।'

'এখানে কিশোর-কিশোরীরা বেড়াতে আসে অনুপ্রাণিত হয় এই ভেবে যে একদিন আমার স্মারকও হয়ত এখানে থাকবে। আমার কাছে এটাই গুরুত্বপূর্ণ।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt relieves Kuet VC, Pro-VC of duties to resolve crisis

A search committee will soon be formed to appoint new candidates to the two posts

1h ago