আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে জয়ে ফিরল অস্ট্রেলিয়া

অজিরা দুই ম্যাচে বিশাল ব্যবধানে হেরে ফিরল এবার দাপটের সহিত

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে জয়ে ফিরল অস্ট্রেলিয়া

কোথায় অস্ট্রেলিয়া! ব্যাটে, বলে, ফিল্ডিংয়ে- অস্ট্রেলিয়া যেন হারিয়ে গিয়েছিল কোথাও। বিশ্বকাপের সর্দার অজিরা দুই ম্যাচে বিশাল ব্যবধানে হেরে ফিরল এবার দাপটের সহিত। শ্রীলঙ্কাকে তারা হারিয়ে দিয়েছে ৫ উইকেটে। মার্শ-ইংলিসের ফিফটিতে জয়ের বন্দরে যখন পা রাখে অজিরা, বল বাকি ৮৮টি।

২১০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঝড়ো শুরু পেয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দশ ওভারেই তুলে ফেলে ৬৪ রান, তবে দুই উইকেট হারিয়ে। দুর্দান্ত পেস বোলিং প্রদর্শনীতে মাধুশাঙ্কা এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন দুই অজি ব্যাটারকে। ওয়ার্নারের পর স্মিথকেও করেন এলবিডাব্লিউ। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম 'ডাক' মেরে যখন স্মিথ ফিরছেন, অস্ট্রেলিয়া ২৪ রানে হারায় দ্বিতীয় উইকেট।

মাধুশাঙ্কা প্রথম দুই ওভার মেডেন নিয়ে পাঁচ ওভারের স্পেল শেষ করেন ১৪ রানে। উইকেট না পেলেও মার্শ-লাবুশেনের সামনে অবিরাম প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। তবে একপ্রান্তে মাধুশাঙ্কার দুর্দান্ত বোলিংয়ের বিপরীতে অপরপ্রান্তে যেন ঠিক তার উল্টোটা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, একপ্রান্তে চলছে এক খেলা, যেখানে অস্ট্রেলিয়া ব্যাকফুটে। অন্যপ্রান্তে অন্যখেলা, যেখানে শ্রীলঙ্কা ব্যাকফুটে। মাধুশাঙ্কা একপ্রান্তে ১৪ রান দিলেও অপর পাঁচ ওভারে তিনজন- থিকশানা, কুমারা, ভেলালাগে মিলে দেন ৫০ রান।

লো-স্কোরিং ম্যাচে খেলা এগিয়ে যাচ্ছিল তরতর করে। সেটার মূল কারিগর মিচেল মার্শ। মাধুশাঙ্কা বাদে কেউই তার সামনে সুবিধা করতে পারেননি। নিয়মিত বাউন্ডারি বের করে ৩৯ বলেই ফিফটি পেরিয়ে যান মার্শ। মার্শের ব্যাটে শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনা দূরে যাচ্ছিল শুধু, কিন্তু হুট করেই তার উইকেট পেয়ে যায় লঙ্কানরা। রানআউট হয়ে মার্শ ফিরে যান ৫১ বলে ৫২ রান করে। এরপর যদিও লাবুশেন-ইংলিস মিলে দেখেশুনে খেলে লঙ্কানদের ম্যাচ থেকে ছিটকেই দেন। ৪৬ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেন জস ইংলিস। মাধুশাঙ্কা বাদে কেউই কোন হুমকি হতে পারেননি। ছন্নছাড়া বোলিংয়ে কুমারা ৪ ওভারে ৪৭ রান দেন। মাধুশাঙ্কাই শেষমেশ ইংলিস-লাবুশেনের ৭৭ রানের জুটি ভাঙ্গেন। লাবুশেন আউট হয়ে যান যখন ৬০ বলে ৪০ রান করে, তখন অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গেছে ১৫৮ রানে।

ম্যাক্সওয়েল এসে মারদাঙ্গা ব্যাটিংয়ে হিটিং শুরু করেন। মাধুশাঙ্কাকেই ওভারে তিনটি চারের পর থিকশানাকে মারেন দুটি ছয়। অন্যপাশে ৫৯ বলে ৫৮ রানে ইংলিস আউট হয়ে গেলেও ম্যাক্সওয়েল-স্টয়নিস মিলে জয় এনে দেন ৩৬তম ওভারেই। ম্যাক্সওয়েল অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ৩১ রানে, স্টয়নিস ৯ বলে ১৪ রানে।

ম্যাচে শ্রীলঙ্কা যে শুরু পেয়েছিল, এরপর যেভাবে তারা শেষ করেছে, তা নিয়ে আফসোসের অন্ত থাকে না। শ্রীলঙ্কার ওপেনিংয়ের একপাশে দুশ্চিন্তার ছায়া ছিল। তবে লখনউয়ে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর লঙ্কানরা দুর্দান্ত শুরু পায়। কুসল পেরেরা ও পাথুম নিসাঙ্কা, অজিরা সামান্য লাইনে হেরফের করলেই দুজনে বাউন্ডারি খুঁজে নিয়েছেন। ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে পঞ্চাশ পেরিয়ে যান, ছয় ম্যাচ পর ওপেনিংয়ে ফিফটি পায় শ্রীলঙ্কা।

পাওয়ারপ্লের পর অস্ট্রেলিয়ানরা লাইনে গড়বড় করে বাউন্ডারির সুযোগ দেয় আরও, লঙ্কানদের রানের গতি বেড়ে যায় তাই। এরপর অফফর্মে থাকা জ্যাম্পা এদিনও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভুগে তিন ওভারে দিয়ে দেন ২২ রান। পেরেরা ও পাথুম সমানতালে খেলে যাচ্ছিলেন। ১৮তম ওভারে একশ ছাড়িয়ে যায় লঙ্কানরা। পরের ওভারে ৫৭ বলে নিজের ফিফটি করে ফেলেন পেরেরা, নিসাঙ্কাও কিছুক্ষণ পর তার ফিফটির দেখা পান ৫৮ বলে। ফিফটির পর সুযোগ পেলে পেরেরা বড় শট খেলতে দ্বিধাবোধ করেননি একটুও। অজিদের রিভিউ না নেওয়ার আফসোস বাড়াচ্ছিলে, দশম ওভারে ম্যাক্সওয়েলের বলে রিভিউ না নিয়ে পরে দেখতে পায় এলবিডাব্লিউ ছিলেন পেরেরা।

তবে নিসাঙ্কার সঙ্গ হারিয়ে ফেলেন তিনি। ৬১ রানে নিসাঙ্কাকে কামিন্স ফিরিয়ে দিলে ১২৫ রানের জুটি ভেঙ্গে যায় তাদের। এরপর আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলা কুসল পেরেরা সেঞ্চুরির সুবাসই পাচ্ছিলেন। কিন্তু হুট করে কামিন্সের লেংথ ডেলিভারীতে বোল্ড হয়ে যান ৭৮ রানে। ১৫৭ রানে দুই উইকেট হারানো লঙ্কানরা বড় স্কোরের পথ হারিয়ে ফেলে এরপর। জ্যাম্পাকে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে বসেন কুসল মেন্ডিস, সামারাবিক্রমা এলবিডাব্লিউ হয়ে যান। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে এসে জ্যাম্পা এ দুজনকেই এক অঙ্কে ফিরিয়ে দিলে ১৬৬ রানেই ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।

আসালাঙ্কা ও ধনঞ্জয়ার পুনরুদ্ধার কাজে পরে বাগড়া বাধায় বৃষ্টি। মাঝখানের বিরতিও ৩২.১ ওভারে ১৭৮ রানে থাকা লঙ্কানদের উইকেটের মিছিলে বিরতি আনেনি। ধনাঞ্জয়া ইনসাইডে এজে বোল্ড হয়ে যান। বিপদ বাড়িয়ে দেন ভেলালাগে রানআউট হয়ে। করুনারত্নের পর থিকশানাও চলে যান দুইশ পেরুনোর আগেই। একপাশে একা হয়ে যাওয়া আসালাঙ্কাও শেষমেশ ২৫ রানে যখন উইকেট দেন, শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়ে যায় ৩৯ বল বাকি থাকতেই। এরপর অস্ট্রেলিয়া জয় নিশ্চিত করেছে ৮৮ বল হাতে রেখে।

Comments

The Daily Star  | English

Seven killed in Mymensingh road crash

At least seven people were killed and several others injured in a head-on collision between a bus and a human haulier in Mymensingh’s Phulpur upazila last night

1d ago