চরম বিব্রতকর হার!

লাল-সবুজ জার্সি পরা সমর্থকদের চেহারায় বিষন্নতার চেয়েও বেশি ছিলো অনেক রাগ, যন্ত্রণা। একজন চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তাই বলে নেদারল্যান্ডসের কাছেও হারবে!’ তিক্ত হলেও এই বাস্তবতা এখনো সত্য। ডাচদের বিপক্ষে বাংলাদেশ কেবল হারেইনি, রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছে।

কলকাতা থেকে

চরম বিব্রতকর হার!

বাংলাদেশকে ৮৭ রানে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস

৮ম ব্যাটার হিসেবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আউট হতে গ্যালারি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন অনেক দর্শক। লাল-সবুজ জার্সি পরা সমর্থকদের চেহারায় বিষন্নতার চেয়েও বেশি ছিলো অনেক রাগ, যন্ত্রণা। একজন চিৎকার করে বলছিলেন, 'তাই বলে নেদারল্যান্ডসের কাছেও হারবে!' তিক্ত হলেও এই বাস্তবতা এখনো সত্য। ডাচদের বিপক্ষে বাংলাদেশ কেবল হারেইনি, রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছে

শনিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে হাজার বিশেষ দর্শকদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন বাংলাদেশি। টানা চার হারের পর এই ম্যাচে জয় দেখার আশা বড় চওড়া ছিল সবার। কিন্তু আইসিসি সহযোগী সদস্য দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশ এদিন ম্যাচ হারল ৮৭   রানে। নেদারল্যান্ডসের ২৩০ রানের জবাবে টেনেটুনে ১৪২ রান করতে পারল সাকিব আল হাসানের দল। কেউ যদি বলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের অস্তিত্বের ভিতই তো নড়ে গেল! খুব বেশি তর্ক করার সুযোগ নেই।

দলের স্কোর তখন ৮ উইকেটে ১১৫! টিভি পর্দায় ভেসে উঠল গ্যালারিতে থাকা কয়েকজন বাংলাদেশের সমর্থকদের একটি প্ল্যাকার্ড 'আমাদের সব সময়ের লক্ষ্য পরের বিশ্বকাপ'। এই বিশ্বকাপে যদিও এখনো তিনটা ম্যাচ বাকি। তবে এই বাণী ছাড়া বাংলাদেশের আর সম্ভব কি?

নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের পর বাংলাদেশের বিশ্বকাপ তো আসলে শেষই। এই দল বাকি তিন ম্যাচ জিতে যাবে, এমন আশাবাদী ব্যক্তি গোটা দুনিয়ায় পাওয়া যাবে না।

এই ম্যাচে কে কেমন করল। কীভাবে আউট হলো তার বর্ণনা দেওয়া পাঠকের কাছে যথেষ্ট বিরক্তিকর হবে। করুণ দশার একই গল্প কেই বা পড়তে চায়! পল ফন মিকরেনকে বাহবা দেওয়া যায়। ২৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই বাংলাদেশের মূল হন্তারক। তবে তাকে জাসপ্রিট বুমরাহ বানিয়ে ফেললে তো মুশকিল।

লক্ষ্যটা ছিলো ২৩০ রানের। বিশ্বকাপের স্পোর্টিং উইকেটে এই রান মামুলি। কন্ডিশন যদি একটু কঠিনও হয়ে যায় তবে মাঝারি বলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটারদের কাছে এটা মনে হলো পাহাড়সম পুঁজি। গ্যালারিতে, 'বাংলাদেশ', 'বাংলাদেশ' আওয়াজেও জেগে উঠতে পারলেন না তারা। কেউ বিদায় নিলেন সুইপের ভুল প্রয়োগে, অনেকেই ধরা দিলেন উইকেটের পেছনে। কারো ব্যাট-প্যাডে বিশাল ফাঁক উড়িয়ে নিল স্টাম্প।

এই ম্যাচের আগে দল ছেড়ে দেশে গিয়ে দুদিন অনুশীলন করে বিতর্কের জন্ম দেন সাকিব। অধিনায়ক রানে ফেরার মরিয়া প্রচেষ্টায় পারেননি। ১৪ বলে ৫ রান করে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পথে দর্শকরা তাকে দেন দুয়োধ্বনি। বাংলাদেশের শীর্ষ ক্রিকেটারের জন্য নিশ্চয়ই এমন দিন একদম প্রত্যাশিত না। এই দিন কেন এলো তিনি হয়ত মনে মনে হলেও এই উত্তর খুঁজবেন।

 এদিন বোলিংকে পাশ মার্ক দেয়া যায়, কিন্তু ফিল্ডিংয়ে পড়ল তিন ক্যাচ। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়েও পুরো ইউনিট হিসেবে জ্বলে উঠতে পারেনি। ইডেনের উইকেট সাধারণত পেস বান্ধব ও রানে ভরা থাকে। এদিন উইকেট ছিলো কিছুটা মিরপুরের মতন। কিছুটা মন্থরতা থাকায় খানিকটা থেমে আসছিল বল। গ্রিপ করে এমন উইকেট আদর্শ মোস্তাফিজুর রহমানসহ পুরো বোলিং ইউনিটের।

মোস্তাফিজ দারুণ বলই করেছেন। তিন ক্যাচের সবগুলোই পড়েছে তার বলে। অধিনায়ক সাকিবও আঁটসাঁট ছিলেন। কিন্তু উইকেটের পরিস্থিতি বিচারে বোলিং রদ বদল ঠিক ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। বিশাল হারের পর ব্যাটারদের দায়ই বড় হবে। কিন্তু তাসকিন আহমেদ থাকতেও শেষ ওভারে শেখ মেহেদীকে বল দেওয়া কেন হয়েছে কারণ বোঝা যায়নি। ওই ওভারে মেহেদী দেন ১৭ রান। ম্যাচের ফল দেখলে এটা কোন প্রভাবক নয়। কিন্তু শেষের ওভারে ওই মোমেন্টামও গেছে ডাচদের পক্ষে।

২৩০ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে দেখা যায়নি পরিকল্পনার ছাপ। কোন অ্যাপ্রোচে রান তাড়া করতে হবে সেই ভাষা ছিল না তাদের ব্যাটা। দিকহারা কিংবা দিশেহারা শব্দ দিয়ে হয়ত দলের ব্যাটারদের ছবি কিছুটা ধারণ করা যায়। বিশ্বকাপে বড় স্বপ্নে বিভোর হয়ে আসা দলটির এই অবস্থা কেন? এই উত্তর দেবে কে? 

Comments

The Daily Star  | English

A budget without illusions

No soaring GDP promises. No obsession with mega projects. No grand applause in parliament. This year, it’s just the finance adviser and his unemotional speech to be broadcast in the quiet hum of state television.

6h ago