আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে অচেনা ইংল্যান্ডের বিদায় সম্পন্ন

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার কাছে তারা হারল ৩৩ রানে।

অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে অচেনা ইংল্যান্ডের বিদায় সম্পন্ন

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার কাছে তারা হারল ৩৩ রানে।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে অচেনা ইংল্যান্ডের বিদায় সম্পন্ন
ছবি: এএফপি

স্রেফ একটি জয় পাওয়া অচেনা এক ইংল্যান্ডকেই দেখল ভারত বিশ্বকাপ। তবে এবারের আসরে এটিই যেন আগেরবারের চ্যাম্পিয়নদের চেনা রূপ! সপ্তম ম্যাচে এসে ষষ্ঠ হারে আনুষ্ঠানিকভাবেই বিশ্বমঞ্চ থেকে বিদায়ই ঘটে গেল ইংলিশদের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার কাছে তারা হারল ৩৩ রানে। ডাভিড মালান, বেন স্টোকস ও মঈন আলীর ব্যাটে আশা জাগলেও ১১ বল বাকি থাকতেই দলটি গুটিয়ে গেল।

শনিবার আহমেদাবাদে টস হেরে আগে ব্যাট করে ৪৯.৩ ওভারে ২৮৬ রানে অলআউট হয় অজিরা। জবাবে ইংলিশরাও পুরো ওভার খেলতে পারেনি। তারা থামে ২৫৩ রানে।

ব্যাটারদের পর অজি বোলাররাও রাখেন সম্মিলিত অবদান। অ্যাডাম জ্যাম্পার ৩ উইকেটের সঙ্গে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউড পান দুটি করে উইকেট। ৭ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানেই তাই থাকল অজিরা। আর ৭ ম্যাচে এক জয়ে ইংলিশরা এখন তলানিতে। বাংলাদেশের সমান পয়েন্ট হলেও নেট রান রেটে পিছিয়ে পড়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দৌড়েও দুশ্চিন্তায় জস বাটলারের দল। 

ইংল্যান্ডের পাওয়ারপ্লের দুর্গতি দূর হয়নি এদিনও। প্রথম বলেই পড়ে যায় উইকেট। স্টার্কের ডাউন দ্য লেগের বলেই উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে মরণ ডেকে আনেন জনি বেয়ারস্টো। জো রুট এসেও কিছুক্ষণ ক্রিজে কাটিয়ে ১৩ রানেই চলে যান স্টার্কের বলে আউট হয়ে।

১৯ রানে ২ উইকেট খুইয়ে ফেলা ইংল্যান্ডের উপর ভর করা চাপ শুষে নেওয়ার চেষ্টা চালান মালান ও স্টোকস। দুজনে মিলে বেশ সতর্ক থেকে খেলে যান। অজি বোলাররা লাইন-লেংথে হেরফের করেননি একটুও। পাওয়ার প্লেতে ৮০ শতাংশের বেশি বলই তারা করেন গুড লেংথে।

মালান অস্বস্তিতে না পড়লেও স্টোকস গ্যাপ খুঁজে নিতে পারছিলেন না কোনোমতেই। দুই অঙ্কের ঘরে যেতে স্টোকসের লাগে ৩৩ বল। ৭৪ বলে দুজনের জুটি অবশ্য পঞ্চাশ পেরিয়ে যায়। তাদের জুটিতে ২২তম ওভারে শতরান ছুঁয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু লক্ষ্য তাড়ায় শক্ত অবস্থানে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে আউট হয়ে যান মালান। ফিফটি পূর্ণ করার পরপরই।

৬৪ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কার ইনিংস শেষে যখন মালান ফেরেন, ২৩তম ওভারে ১০৩ রানে ইংল্যান্ড হারায় তৃতীয় উইকেট। দ্রুতই অধিনায়ক বাটলারের উইকেটও খুইয়ে ইংলিশরা পড়ে যায় ব্যাকফুটেই। ফর্ম হারিয়ে বসা বাটলার খুঁজে নেন লংঅফের হাত।

মাত্র ১ রানে বাটলার ফেরার পর গিয়ার পাল্টান স্টোকস। তিন বলের মধ্যে দুই ছক্কা হাঁকান। প্রথম ছক্কায় ফিফটি পেয়ে যান ৭৪ বলে। মঈন এসেও যোগ্য সঙ্গ দেন তিন ওভারে চারটি চার মেরে। বলপ্রতি রানে পঞ্চাশের জুটি গড়ে ফেলেন দুই বাঁহাতি। কিন্তু আচমকাই জ্যাম্পার নিরীহ এক বলে সুইপ খেলতে গিয়ে ফাইন লেগের কোলে বল তুলে দেন স্টোকস।

৯০ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৪ রানের ইনিংস খেলে বিধ্বস্ত স্টোকস ফিরে যান দলকে ১৬৯ রানে রেখে। স্কোরবোর্ডের চার উইকেট দ্রুতই পরিণত হয় পাঁচ উইকেটে। লিয়াম লিভিংস্টোন টিকতে পারেননি। ৪০ ওভারের আগে মঈনও ফিরে গেলে ইংল্যান্ড মুমূর্ষু হয়ে পড়ে। জ্যাম্পার বলে বাউন্ডারিতে ধরা পড়ে মঈন আউট হন ৬ চারে ৪৩ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলে।

শেষ দশ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন পড়ে ১০০ রানের। ৩ চার মেরে ১৫ রানে আউট হয়ে যান ডেভিড উইলি। ক্রিস ওকস ও আদিল রশিদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ৫ ওভারে ৬১ রানের কঠিন দূরত্বে আসে। ৩৩ বলে ৩২ রান করে ওকস ৪৯তম ওভারে আউট হয়ে যাওয়ার পর ২০ রানে আদিল রশিদও সে ওভারেই আউট হন। ফলে আরেকটি হারের কবলে পড়তে হয় ইংল্যান্ডকে।

এর আগে টসে জিতে বোলিং নেওয়া ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট তুলে নেয়। ভয়ঙ্কর ট্রাভিস হেডকে ফিরে যেতে হয় ১১ রান করেই। স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে হেডকে ফেরানোর পর তার বিপজ্জনক সঙ্গীকেও ফিরিয়ে দেন ক্রিস ওকস। দুর্দান্তভাবে কাটারে ধোঁকা দিয়ে ডেভিড ওয়ার্নারকেও ক্যাচে পরিণত করেন। ১৫ রান করে ওয়ার্নার ফেরেন যখন, অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৩৮। বিধ্বংসী দুই ওপেনারকে হারিয়ে সতর্কভাবে খেলতে থাকে দলটি। পাওয়ার প্লে শেষ করে ৪৮ রানে। 

একপাশে স্মিথ স্বস্তিতে খেলে গেলেও লাবুশেন ভোগান্তিতে পড়ে যান। স্ট্রাইক বদল করতে ব্যর্থ হয়ে ধীরগতিতে শুরু করেন লাবুশেন। ডানহাতি এই ব্যাটার প্রথম ৩০ বলে আনতে পারেন মাত্র ১৩ রান। এরপর তার ইনিংসের গতি বাড়ান যদিও। ২০তম ওভারেই একশ পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। তখনও আদিল রশিদকে আক্রমণে আনেনি ইংল্যান্ড। লেগ স্পিনার রশিদ এসেই ভেঙে দেন স্মিথ-লাবুশেনের ৯৬ বলে ৭৫ রানের জুটি।

স্মিথের ৫২ বলে ৩ চারে ৪৪ রানের ইনিংস থেমে যায় কাট খেলতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়ে। স্মিথ ফেরার ৪ রানের মধ্যেই আরেকটি উইকেট হারিয়ে বসে অজিরা। জশ ইংলিসও রশিদের বলে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে। 

ততক্ষণে সেট হয়ে যাওয়া লাবুশেন দায়িত্ব সহকারে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন অস্ট্রেলিয়াকে। ৬৩ বলে নিজের ফিফটি পেয়ে যান তিনি। গ্রিন এসেও ভালো শুরু করেন। দুজনের জুটি পঞ্চাশের ঘরে পৌছে যায় ৫৩ বলে। কিন্তু তাদের সে জুটি বড় হুমকি হওয়ার আগেই থামায় ইংল্যান্ড।

গতিময় পেসার মার্ক উড এসে লাবুশেনকে এলবিডব্লিউয়ে শিকার করলে ৬১ রানের বড় হয়নি অজিদের পঞ্চম জুটি। ৮৩ বলে ৭ চারে ৭১ রানের ইনিংস খেলে বিদায় ঘটে লাবুশেনের। একাদশে ফেরা দুই ব্যাটার গ্রিন ও মার্কাস স্টয়নিস মিলে এরপর বিপদ বাড়তে দেননি। দুজনের ব্যাটে ৩৭ ওভারেই দলীয় দুইশ স্পর্শ করে অস্ট্রেলিয়া।

তাদের জুটিটাও ইংলিশদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হওয়ার আগে থেমে যায়, ডেভিড উইলির বলে গ্রিন বোল্ড হয়ে গেলে। ৫ চারে ৫২ বলে ৪৭ রানে আউট হয়ে ফিফটি মিস করেন গ্রিন। 

স্টয়নিস তার পেশির জোর দেখান একপাশে থেকে। ৪৪তম ওভারে লিয়াম লিভিংস্টোনকে ছক্কার পর মারেন চার। আবার ছক্কা মারতে গেলে কাটা পড়েন মিডউইকেটে। ঝড়ের আভাস দিয়ে ৩২ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চার মেরে আউট হন ৩৫ রান করে। ২৪১ রানে সপ্তম উইকেট হারানো অজিরা এরপর দ্রুতই হারায় অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে।

তবে ইংল্যান্ডকে হতাশ করে অপ্রত্যাশিতভাবে নবম উইকেট জুটিতে ২৯ বলে ৩৮ রানের জুটি পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। অ্যাডাম জ্যাম্পা খেলেন ১৯ বলে চারটি চারে ২৯ রানের ক্যামিও। শেষ ওভারে জ্যাম্পার পর মিচেল স্টার্ককেও আউট করে দেন ওকস।

৫৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে সেরা বোলিং পারফরম্যান্স দেখান ওকস। সঙ্গে রশিদ ও উড পান দুটি করে উইকেট। মঈন আলী কোনো উইকেট না পেলেও উইলি ও লিভিংস্টোনের ঝুলিতে যায় একটি করে উইকেট।

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice is just murder

Sadly, when one lynching can be said to be more barbaric than another, it can only indicate the level of depravity of some our university students

1h ago