আলুর উৎপাদন খরচ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ

‘গত বছর এক বিঘা জমিতে আলু চাষের প্রাথমিক খরচ ছিল ১৩-১৫ হাজার টাকা। এবার লাগছে ২৫ হাজার টাকার বেশি।’
আলু চাষ
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রাঙ্গামাটি গ্রামে চলছে আলু চাষ। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

সার, কীটনাশক, সেচ ও আলুর বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর আলু চাষের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগামী বছর আলুর দাম আরও বেড়ে যাবে বলছেন তারা।

এ বছর আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বীজ আলুর দাম। এমনকি সরকারি বীজের দামও গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১০ টাকার বেশি। তাছাড়া বস্তাপ্রতি সারের দাম বেড়েছে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। জ্বালানি তেলের দাম কয়েক দফা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে জমি চাষ ও সেচের খরচ। এতে করে সমস্যায় পড়েছেন অনেক কৃষক।

বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার রাঙ্গামাটি গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম কয়েকদিন আগে দুই বিঘা আলু লাগিয়েছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। অথচ গত বছর দুই বিঘা আলু চাষের খরচ ছিল ৩০ হাজার টাকা।

সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত বছর এক বস্তা এস্টারিক্স বীজ আলুর দাম ছিল এক হাজার টাকা। এ বছর সেই আলুর দাম পড়ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা। গত বছর এক বস্তা পাকড়ী বীজ আলুর দাম ছিল দুই হাজার টাকা। এবার তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা।

এ ছাড়া, প্রতি বস্তা সারের দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

শিবগঞ্জ উপজেলার অর্জুনপুর গ্রামের কৃষক সোহরাব হোসেন এক বিঘা জমিতে এস্টারিক্স আলুর চাষ করেছেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর এক বিঘা জমিতে আলু চাষের প্রাথমিক খরচ ছিল ১৩-১৫ হাজার টাকা। এবার লাগছে ২৫ হাজার টাকার বেশি।'

আলু চাষ
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানগড়ে আলু চাষ। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

তিনি জানান, গত বছর এক বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয়েছিল ২০০ টাকা। এবার খরচ হচ্ছে ৪০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে এক বার সেচ দিতে গত বছর লেগেছিল ২০০ টাকা। এ বছর খরচ হচ্ছে ৩০০ টাকা।

জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার মান্দা গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান ডেইলি স্টারকে জানান তিনি এ বছর ১০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করছেন।

তিনি বলেন, 'এবার খাওয়ার আলুর দামই বেশি। কোম্পানিগুলোর বীজ আলুর দাম আরও বেশি। ব্র্যাকের এক কেজি বীজ আলুর দাম পড়ছে ৬৮ টাকা।'

'এবার উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পড়বে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ফলে নতুন আলুর দামও গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হবে।'

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বীজ ও সারের এক ডিলার আব্বাস উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন গ্রেডের আলু বীজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে ৪০ কেজির বস্তাপ্রতি আলুর দাম বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। সারের দাম সমানুপাতিক হারে বেড়েছে।'

বীজের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বগুড়া বিএডিসির উপপরিচালক (বীজ উৎপাদন) বাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি বীজের দামও কেজিপ্রতি কিছুটা বেড়েছে। তবে বীজের সংকট নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'গত বছর বিএডিসির এক কেজি এস্টারিক্স আলুর দাম ছিল ২৯ টাকা। এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এই বছর প্রথমবার বিএডিসি "রুমানা" ও "পাকড়ী" আলুর বীজ বিক্রি করছে। বিএডিসির পাকড়ী আলুর বীজ বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি দরে।'

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বগুড়ার চাষিরা আলু লাগিয়েছেন এক হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। এ বছর জেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে।

বাংলাদেশ সাধারণত আলু রপ্তানি করে থাকে। কিন্তু বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে সরকার চলতি মাসের শুরুতে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে বাজারে খাওয়ার আলুর দাম কিছুটা কমে।

Comments