ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও দীর্ঘায়িত হবে

হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী। ছবি: পলাশ খান/স্টার

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ইতোমধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে হওয়া বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শীতের আগমন ঘিরে গত মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমতে শুরু করে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে হওয়া এই বৃষ্টিপাত এডিস মশার জন্য নতুন প্রজননক্ষেত্র সৃষ্টি করবে। যার ফলে রোগটির প্রাদুর্ভাব আরও দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে গতকাল সারা দেশেই মাঝারি থেকে ভারী ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোলায় সর্বোচ্চ ১৭৬ মিলিমিটার ও ঢাকায় ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

গতকাল সকাল পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১১ জন এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৫৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩৯ জনে এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৯৯ হাজার ৫০ জনে।

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মশা প্রায় ৪০ দিন বেঁচে থাকে। এই সময়ের মধ্যে যদি তারা পানি না পায়, তাহলে তারা ডিম দিতে না পেরে মারা যাবে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে মশা এখন ডিম দেওয়ার জন্য পানি পাবে। ফলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও ৪০ থেকে ৫০ দিন স্থায়ী হবে।'

বৃষ্টি মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি করবে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও বলেন, 'সম্ভাব্য সব প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।'

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ জি এম সাইফুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নভেম্বরে মশার প্রজনন কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, এই বৃষ্টির কারণে তা আরও বৃদ্ধি পাবে।'

'শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে কিউলেক্স মশার মৌসুম শুরু হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে মনোনিবেশ করবে। তবে এডিস মশার দিকেও তাদের নজর রাখতে হবে, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে', বলেন তিনি।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে কর্তৃপক্ষের মনোযোগ হারানোর কোনো সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন এই কীটতত্ত্ববিদ।

সাইফুর রহমান আরও বলেন, '২০০০ সাল থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে পারে। তবে রাজধানীর বাইরে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।'

'এডিস মশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী মৌসুমেও এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় ক্লাস্টার চিহ্নিত করতে হবে এবং এডিস মশার প্রজনন-শৃঙ্খল পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত লার্ভিসাইড ও কীটনাশকের ব্যবহারসহ ব্যাপক অভিযান চালিয়ে যেতে হবে', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Election Roadmap: BNP unhappy as Yunus gives no specific timeline

The election must be held by December, as any delay could cause the situation to spiral out of control, the BNP said after a meeting with the chief adviser yesterday.

7h ago