সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সিকে ঢেলে সাজান, নাগরিকদের তথ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করুন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) চালুর পর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির কার্যক্রম শুরু হয়নি। এ বিষয়টি জানতে পেরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়েছি।

সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম বদলে সাইবার নিরাপত্তা আইন হওয়ার পর সংস্থাটির নামও পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি রাখা হয়।

দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও জনবল পায়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর সংস্থাটি 'গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামোর জরুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত' করার দায়িত্ব পায়। কিন্তু এখনো এই সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আবশ্যক ন্যাশনাল কম্পিউটার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম ও ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার বেহাল দশা নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে সরকারের উদাসীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

দায়িত্বশীলদের জন্য প্রাধান্যের বিষয় হওয়া উচিত ছিল এই সংস্থার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও সক্ষমতা সৃষ্টিতে কাজ করা। এ বিষয়ে এই সংস্থার মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামানের মন্তব্য চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'সরকারি সংস্থাগুলোতে সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব সম্পর্কে ভুল ধারণার কারণেই মূলত এই এজেন্সিতে কর্মকর্তাদের নিয়োগে দেরি হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, নাগরিকদের ডেটাকে নিরাপদ রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক কর্মকর্তার কোনো ধারণাই নেই। এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের অনেক লোকবল দরকার।

বিষয়টি যদি এমনই হয়ে থাকে, তাহলে সাইবার নিরাপত্তা নজরদারি সফটওয়্যারে সরকারের বড় বিনিয়োগের বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? এই বিনিয়োগের মধ্যে আছে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কহীন রাষ্ট্র ইসরায়েলের কাছ থেকে কেনা ব্যয়বহুল স্পিয়ারহেড সিস্টেম। সার্বিক পরিস্থিতি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এটি এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয় যে সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে সাইবার হামলা বাড়ছে। কারণ সেগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতটা শক্তিশালী নয়। ফলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। অক্টোবরে বড় আকারের তথ্য চুরির ঘটনার পর কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি নাগরিকের স্মার্ট এনআইডি কার্ডের তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামের একটি চ্যানেলে পাওয়া যাচ্ছে।

সম্প্রতি প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ওয়্যার্ড জানতে পেরেছে, জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (এনটিএমসি) ডেটাবেজের তথ্য একটি গোয়েন্দা এজেন্সির সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। সরকার ২৯টি কার্যালয়ের সার্ভারকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে আছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় এবং জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির অন্যতম দায়িত্ব এসব ওয়েবসাইটকে সুরক্ষিত রাখা। কিন্তু এ ধরনের তথ্য চুরির ঘটনাগুলো আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামোর ভঙ্গুর অবস্থা ও সরকারের প্রাধান্যের বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করতে না পারার ব্যর্থতাকে উন্মোচন করেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চালু থাকলেও এই আইনের ইশতেহার অনুযায়ী জনগণের তথ্য সুরক্ষা দিচ্ছে না কোনো সংস্থা। বরং এই আইনকে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা রুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের রূপান্তরিত সংস্করণ সাইবার নিরাপত্তা আইনেও আগের আইনের দুর্বলতাগুলো থেকে গেছে। ফলে এই আইনের ব্যবহারে আগের মতোই ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন-পীড়ন অব্যাহত থাকার ঝুঁকি থাকছে।

বলাই বাহুল্য, প্রকৃত সাইবার নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হয় না, বরং এর ব্যবহারে নাগরিকরা সুরক্ষা পান। এ কারণে আমরা সরকার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কাছে দাবি জানাচ্ছি, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সিকে ঢেলে সাজাতে, যাতে এই সংস্থাটি দেশের সাইবার অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বটি সঠিকভাবে পালন করতে পারে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

4h ago