সহসাই কাটছে না রিজার্ভের চাপ

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
রয়টার্স ফাইল ফটো

দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপ সহসাই কাটছে না। কারণ, আর্থিক হিসাবের ঘাটতি বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের অক্টোবর শেষে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর ছিল ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার।

আর্থিক হিসাব হলো একটি দেশের পেমেন্ট ভারসাম্যের উপাদান, যা আর্থিক সম্পদ সম্পর্কিত অনাবাসীদের দাবি বা দায় মেটায়। এর উপাদানগুলোর মধ্যে আছে- প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ, বাণিজ্য ঋণ, নিট সহায়তা প্রবাহ, পোর্টফোলিও বিনিয়োগ এবং রিজার্ভ সম্পদ।

সাধারণত আর্থিক হিসাবের ঘাটতির মানে হলো দেশের মধ্যে বিনিয়োগ আসার চেয়ে দেশের বাইরে বেশি বিনিয়োগ চলে যাওয়া। তাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার পিছনে এটি একটি প্রধান কারণ।

অক্টোবরের শেষে দেশের মোট রিজার্ভ প্রায় ২০ দশমিক ৬ বিলিয়নে ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

তবে, নভেম্বরে ডলারের মজুত আরও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ডিসেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর কমবে না। কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

এ ছাড়া আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ আলোচনা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, আইএমএফ ও এডিবির ঋণ কিছুটা স্বস্তির জায়গা তৈরি করবে, তবে বিদেশি লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর চাপ বেশি থাকবে।

তিনি বলেন, ট্রেড ক্রেডিটের বহিঃপ্রবাহের কারণে চাপ এখনো বেশি আছে। কারণ এটি আগের বছরের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে।

ট্রেড ক্রেডিট হলো রপ্তানি চালান ও রপ্তানি আয়ের মধ্যে পার্থক্য।

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ট্রেড ক্রেডিটের ঘাটতি ছিল ৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক বছর আগে যা ছিল ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের আগে রপ্তানিকারকরা তাদের রপ্তানি আয় দেশে আনতে অনিচ্ছুক।

জাহিদ হোসেন বলেন, আর্থিক হিসাবের ঘাটতির আরেকটি কারণ হলো বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদী বিদেশি ঋণ কমে যাওয়া।

অক্টোবরের শেষে নিট স্বল্পমেয়াদী বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯৮ মিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগে ছিল ১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার।

'এখন স্বল্পমেয়াদী বিদেশি ঋণ নেওয়ার বিকল্প আর পাওয়া যাচ্ছে না, যদিও বেসরকারি খাতে এর চাহিদা আছে।'

বছরের শুরুতে স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। ১০ মাস পর তা দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে।

জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান বছরে ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, কারণ আমদানি ২০ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে এবং রপ্তানি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।

এই সময়ে, গত বছরের ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতির বিপরীতে চলতি হিসাবের ব্যালেন্স উদ্বৃত্ত ছিল ২৩৩ মিলিয়ন ডলার।

কিন্তু চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত নিয়ে সান্ত্বনার কিছু নেই, কারণ শুধু অক্টোবরে এটি ৮৭৭ মিলিয়ন ডলার সংকুচিত হয়েছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, 'রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে যাচ্ছে। সুতরাং চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত আগের মাসের তুলনায় কমেছে। বিদেশি লেনদেনের ভারসাম্যের চ্যালেঞ্জগুলো এখনো বেশি, সে কারণেই রিজার্ভের ওপর চাপ আছে।'

(প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন রবিউল কমল)

Comments

The Daily Star  | English

Cumilla rape: Main accused among two more arrested

Three others were arrested in the same case early today

1h ago