নীরবতা ভেঙে রোহিত বললেন, ‘জীবন চলতে থাকে’

ছবি: রয়টার্স

অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটতে থাকা ভারত মুখ থুবড়ে পড়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে। নিজেদের মাটিতে ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শকের সামনে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় তারা— আসরে যা ছিল তাদের একমাত্র হার। শিরোপা জিততে না পারার গভীর বেদনা নিয়ে এতদিন চুপ করে ছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিন সপ্তাহের বেশি সময় পর অবশেষে নীরবতা ভেঙে তিনি বললেন, জীবন থেমে থাকে না।

২০২৩ বিশ্বকাপ শেষে ছুটি নিয়ে লন্ডনে গিয়েছিলেন রোহিত। সেখান থেকে ফিরে বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে একটি ভিডিও আপলোড করেছেন ৩৬ বছর বয়সী তারকা। সেটার ক্যাপশনে লেখা, 'বিশ্বকাপের পর প্রথমবার সরাসরি হৃদয় থেকে।'

ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপার স্বাদ এখনও অচেনা ডানহাতি ড্যাশিং ওপেনার রোহিতের। ফাইনালে হৃদয় ভাঙার পর তার অনুভূতি কেমন ছিল সেটা তিনি জানান এভাবে, 'এটা (বিশ্বকাপের ফাইনালে হার) থেকে কীভাবে বের হব সে বিষয়ে কোনো ধারণা প্রথম কয়েক দিনে আমার ছিল না। আমি জানি না আসলে এমন সময়ে কী করতে হয়। আমার পরিবার ও বন্ধুরা আমাকে স্বাভাবিক রেখেছে, চারপাশের পরিবেশ হালকা রেখেছে— এসব ব্যাপার অনেক সাহায্য করেছে আমাকে।'

'এটা হজম করা কঠিন ছিল, কিন্তু জীবন চলতে থাকে। সত্যি বলতে, এটা ভীষণ কঠিন ছিল। নতুন করে শুরু করাটা মোটেও সহজ না। আমি ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ দেখে বড় হয়েছি এবং আমার কাছে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের শিরোপাই চূড়ান্ত পুরস্কার।'

নিজেদের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতিই নিয়েছিল ভারত। কিন্তু তীরে গিয়ে তরী ডোবে তাদের। গত ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদে হওয়া ফাইনালে কোথায় তারা ভুল করেছিলেন তা আলাদাভাবে চিহ্নিত করেননি রোহিত, 'আমরা সেই বিশ্বকাপের জন্যই এত বছর ধরে কাজ করেছি এবং এটা (জিততে না পারা) হতাশাজনক, তাই না? আপনি যদি সফল না হন এবং যা চান সেটা না পান যেটা আপনি এতদিন ধরে খুঁজছিলেন এবং যেটার স্বপ্ন দেখছিলেন, তখন মনঃক্ষুণ্ণ হন এবং হতাশও হন।'

'মাঝে মাঝে আমি ভেবেছি যে আমাদের দিক থেকে যা কিছু করা সম্ভব ছিল তা করেছি। যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করে, কোথায় ভুল হয়েছে? কারণ আমরা ১০টা ম্যাচ জিতেছি আর সেই ১০ ম্যাচেও কিছু না কিছু ভুল করেছি। কিন্তু সেরকম ভুল প্রতিটি ম্যাচেই ঘটে। আপনি একেবারে নিখুঁত ম্যাচ খেলতে পারবেন না। আপনি হয়তো প্রায় নিখুঁত ম্যাচ খেলতে পারেন কিন্তু কখনোই একদম নিখুঁত ম্যাচ নয়।'

হতাশ হলেও পুরো দলের পারফরম্যান্সে গর্ববোধ করেন তিনি, 'মুদ্রার অন্য পিঠটা দেখলে, আমি আসলেই এই দলটাকে নিয়ে গর্বিত। কারণ আমরা যেভাবে খেলেছি সেটা অসাধারণ। আপনি প্রতিটা বিশ্বকাপে এরকম পারফর্ম করতে পারবেন না।'

পুরো আসরে নিজ দেশের ভক্ত-সমর্থকদের অকুণ্ঠ সমর্থন পায় ভারত। শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার পরও তারা প্রশংসা করেন ক্রিকেটারদের প্রচেষ্টার। রোহিত যেখানেই গেছেন, সেখানেই এমন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হন, '(শিরোপা জিততে পারলে) সেই ফাইনালের পর এই দলের খেলা দেখাটা মানুষকে অনেক আনন্দ দিত, অনেক গর্ব হতো তাদের। ঘুরে দাঁড়ানো ও নতুন করে শুরু করাটা খুব কঠিন ছিল। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমাকে দূরে কোথাও যেতে হবে এবং আমার মনকে এই অবস্থা থেকে বের করে আনতে হবে। তবে এরপর আমি যেখানেই ছিলাম না কেন, আমি বুঝতে পেরেছি, লোকেরা আমার কাছে এসেছে এবং তারা (দলের) প্রত্যেকের প্রচেষ্টার প্রশংসা করছে।'

'আমি (সেই লোকদের) সকলকে অনুভব করতে পারি। কারণ তারা সবাই আমাদের সঙ্গে ছিল, তারা আমাদের সঙ্গে বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার স্বপ্ন দেখছিল। আমরা এই গোটা বিশ্বকাপের সময় যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই সবার কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি।'

সবকিছু মিলিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ জুটেছে তার, 'আর এসবের সঙ্গে সঙ্গে আমিও মানসিকভাবে ভালো বোধ করতে থাকি। কারণ আমি ঠিকঠাক বোধ করছিলাম। আপনি জানেন যে এই ধরনের কথাবার্তাই আপনি শুনতে চান। যেসব লোকদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে, তাদের কাছ থেকে স্রেফ বিশুদ্ধ ভালোবাসাই পেয়েছি এবং এটা দেখতে পাওয়া দারুণ ছিল।'

'সুতরাং, এটা আপনাকে ঘুরে দাঁড়াতে, আবার কাজ শুরু করতে এবং অন্য কোনো সর্বোচ্চ পুরস্কার জেতার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।'

বিশ্বকাপের পর থেকে মাঠের বাইরে আছেন রোহিত। তিনি ক্রিকেটে ফিরবেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভারতের প্রথম টেস্ট দিয়ে। ওই ম্যাচটি শুরু হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর।

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Remittance rises 30% in July

Migrants sent home $2.47 billion in the first month of the current fiscal year

5h ago