বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা-বৈঠক বসছে দিল্লিতে: রিজভী

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রুহুল কবির রিজভী। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অতীতের তিনটি ভুয়া নির্বাচনের মতোই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিল্লির প্রকাশ্য প্রভাবে বাংলাদেশের জনগণ উদ্বিগ্ন।

আজ শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা-বৈঠক বসছে দিল্লিতে। বাংলাদেশের নাগরিকদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ বাংলাদেশের নাগরিকদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ারই অংশ। যা বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক নয়।' 

ভারতীয় কূটনীতিকরা বাংলাদেশে এসে প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার একতরফা ডামি নির্বাচনের পক্ষে বক্তব্য রাখছেন বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
 
তিনি বলেন, 'বিএনপিসহ অধিকাংশ দলবিহীন নির্বাচনে তারা সমর্থন দিচ্ছেন। দিল্লি থেকে বলা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা চান। তার মানে গণতন্ত্র তাদের কাছে এখন অপাংক্তেয়। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মতো দেশটির গণমাধ্যমে বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা যেসব মতামত প্রকাশ করছেন, তা প্রায় সবই তাদের সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতির পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছু নয়।'

রিজভী বলেন, 'সেখানকার পত্রিকায় লেখা হচ্ছে "মোদির কৌশলে বাজিমাত করতে সক্রিয় শেখ হাসিনা"। আরও বিস্ময়ের কথা হচ্ছে, তারা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি বহুমত ও সহনশীলতার নীতিকে অগ্রাহ্য করে প্রতিবেশী দেশের স্থিতিশীলতা, অন্য কথায় বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকাকে অপরিহার্য গণ্য করছেন গণতন্ত্রকে বর্জন করে। এ ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার বাংলা হলো স্বৈরতন্ত্র।'

তিনি বলেন, 'তাদের কথায় স্পষ্ট যে, এখানে তারা কি লেন্দুপ দর্জি চান? দিল্লি তার নিজ স্বার্থের জন্য আমাদের দেশের গণতন্ত্র হত্যায় মুল ভূমিকা পালন করে আমাদের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে? জনগণের প্রশ্ন দিল্লি কি বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তে একটি গণবিরোধী ভোট ডাকাত দলের সঙ্গে সম্পর্ক চায়?'

'তবে দেশের ১৮ কোটি জনগণ চায় দিল্লি সৎ প্রতিবেশী সুলভ আচরণ করুক। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাক। জনগণের ভোটাধিকার গলা টিপে হত্যার পক্ষে অবস্থান পরিবর্তন করুক', বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, 'শেখ হাসিনা তার পূর্বনির্ধারিত ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার কৌশল হিসেবে নাশকতা ও জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা নিচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি, একজন ডিআইজিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করার। এজন্য বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজনকে তুলে নিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের দিয়ে জঙ্গি নাটক মঞ্চায়ন হতে পারে।'

তিনি বলেন, 'পার্শ্ববর্তী দেশের পরিকল্পনায় ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়েই তারা জঙ্গি নাটক করে তাদের স্বার্থসিদ্ধি করেছিল। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ মুহূর্তেও একই নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে পারে।'

'আমি পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বলছি, আপনারা আওয়ামী লীগের কোনো নাটককে বিশ্বাস করবেন না। একতরফা সাজানো ডামি নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার হোন এবং এ দেশের জনগণের একান্ত চাওয়া গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন', বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, 'মেরুদণ্ডহীন দলদাস নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার পাঠানো সিট বণ্টনের তালিকায় সিলমোহর দেওয়ার জন্য একটি একতরফা নির্বাচনের নাটকের আয়োজন করেছে। এই নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশনারদের কথাবার্তা-আচার-আচরণ রীতিমত হাস্যকর। গণভবনের সুতোয় পুতুলের মতো নাচছে ইসি। তারা প্রায়শই বিএনপিকেও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'গোটা দেশের জনগণ জানে, কারা কারা এমপি হবেন, সেই তালিকা হয়ে গেছে। আর নির্বাচন কমিশনাররাও ভেক ধরছেন। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান আজ বলেছেন, "রুহুল কবির রিজভীর কাছে যদি তালিকা থাকে প্রকাশ করতে বলেন"। কী হাস্যকর কথা। তিনি সাধু-সন্ত হওয়ার অভিনয় করছেন। তিনি গণভবনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মুখিয়ে আছেন আর তিনি জানেন না? এতো অর্বাচীনতার নাটক করে ভাবছেন জনগণ কিছু বোঝে না? তালিকা আমি কেন দেবো? শেখ হাসিনাকে বলেন, পেয়ে যাবেন। আপনার প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেন, পেয়ে যাবেন।'

রিজভী বলেন, 'আপনাদের নেতা ওবায়দুল কাদের আগেই ঘোষণা করেছেন, "১৮৯৬ জন প্রার্থী এবারের নির্বাচনের ফাইনাল খেলায় অংশ নিচ্ছে। ৭০ শতাংশ মানুষ ভোট দেবে"। ওবায়দুল কাদের জানেন কত পার্সেন্ট ভোট কাস্ট করবে, তা-ও তারা গণভবনে বসে ঠিক করে রেখেছেন। আপনাদের কাজ হলো ঘোষণা করা। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতোই আরেকটি পূর্ব নির্ধারিত ফলাফল ঘোষণার এসব নাটক বাদ দিয়ে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন। অন্যথায় মীরজাফরদের পরিণতি কী হয় তা ইতিহাসে পড়ে নিন।'

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

44m ago