এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের তুলনায় উপশাখায় আগ্রহী হচ্ছে ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বাংলাদেশের কোটিপতি,

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের পরিসর বেড়েছে, তাই মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা নির্বিঘ্নে পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের তুলনায় উপশাখা খোলার দিকে মনোনিবেশ করছে দেশের ব্যাংকগুলো।

ব্যাংকগুলো তাদের উপশাখার প্রতিদিনের কার্যক্রম সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এতে জালিয়াতি বা অনিয়ম হওয়ার সম্ভাবনা কম, তাই ব্যাংকগুলোর পছন্দ এখন উপশাখার দিকে।

অন্যদিকে, এজেন্ট ব্যাংকিং হলো স্বতন্ত্র। এর মাধ্যমে একটি ব্যাংকের পক্ষে নির্দিষ্ট অঞ্চলে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

ব্যাংকাররা বলছেন, গত বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট খোলার গতি বেশ কমে গেছে। কারণ অনেক এজেন্ট অর্থের অপব্যবহার করেছেন, এতে ব্যাংকের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে এজেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে ১৫ হাজার ৫৪২টিতে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, ২০২২ সালের একই সময়ে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০২১ সালে ছিল ১২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ৩১ শতাংশ।

সাধারণত এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামাঞ্চলে বেশি প্রচলিত। কারণ সেখানে স্থানীয়দের নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগণকে সহজে ব্যাংকিং সেবা দেয়া যায়। সেখানে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়, যারা আগে থেকেই ওই অঞ্চলে পরিচিত।

জয়তুন বিজনেস সলিউশনসের চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার মো. আরফান আলী বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম কমার একটি কারণ হতে পারে চলমান মূল্যস্ফীতির চাপ।

'কারণ বর্তমানে মূল্যস্ফীতি এতটাই বেশি যে, গ্রামাঞ্চলের মানুষ জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় মেটাতে ব্যয় সংকোচনে বাধ্য হচ্ছেন, ফলে ব্যাংকিং লেনদেন কম হচ্ছে,' বলেন তিনি।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে তিনি জানান, গত বছরের অক্টোবরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৭০ হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। তাই এজেন্ট ব্যাংকারদের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ এখনও কম নয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে এজেন্ট ব্যাংকারদের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ২৫ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪০ শতাংশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু এজেন্ট ব্যাংকারের জালিয়াতি ও অনিয়মের তথ্য জানার পর ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণে সতর্ক হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'ব্যাংকগুলো উপশাখা খোলার দিকে জোর দেওয়ায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম কমে যাচ্ছে। কারণ ব্যাংক তাদের এজেন্ট ব্যাংকারদের জালিয়াতির দায় নিতে চায় না। তাই উপশাখাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩ হাজার ৪০০টিরও বেশি উপশাখা আছে, অথচ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যা ছিল মাত্র ৩৯৩টি।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) গোলাম আউলিয়া বলেন, ব্যাংকের উপশাখা মূল শাখার মতোই সেবা দিতে পারে, আর এটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

এছাড়াও, উপশাখার জন্য জায়গা ও জনবল নিয়োগের নির্দিষ্ট সীমা আছে। তাই ব্যাংকগুলো উপশাখার মাধ্যমে কম খরচে গ্রামীণ অঞ্চলে সেবা পৌঁছে দিতে পারে।

'আবার ব্যাংকগুলো উপশাখার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দিতে পারে। যেমন- মাইক্রো-ফাইন্যান্সিং ব্যাংকগুলোর জন্য একটি সাশ্রয়ী উপায় হয়ে উঠেছে,' বলেন তিনি।

অন্যদিকে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকি আছে, কারণ কিছু এজেন্ট ব্যাংকার অর্থের অপব্যবহার করেছে।

গোলাম আউলিয়া বলেন, 'সুতরাং উপশাখা অবশ্যই ব্যাংকগুলোর জন্য একটি ভালো উদ্যোগ।'

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির অলটারনেটিভ ব্যাংকিং চ্যানেলের প্রধান নাজমুর রহিম বলেন, গত কয়েক বছরে এজেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়েছে। সুতরাং, এখন প্রবৃদ্ধি একটু কমতেই পারে।

তিনি জানান, গত কয়েক মাসে প্রবাসীয় আয় কমেছে। এরও প্রভাব পড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লেনদেনে।

এজেন্ট ব্যাংকারদের মাধ্যমে বিতরণ করা প্রবাসী আয় ২০২৩ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে ৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকায়।

বাংলাদেশের ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকের উপশাখা সবচেয়ে বেশি।

আইএফআইসি ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তাদের ১ হাজার ১৬৬টি উপশাখা আছে এবং এগুলোতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, জনগণের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপশাখাগুলোতেও ভল্টের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, 'বিদেশি বাণিজ্য কার্যক্রম ছাড়া উপশাখাগুলোর মাধ্যমে সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং ব্যাংকগুলোকে মূল শাখাগুলোর মতো উপশাখাকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।'

২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং বুথ স্থাপনের নীতিমালা জারি করেছিল, যেন জনগণ কম খরচে ব্যাংকিং সেবা নিতে পারে।

এর আগে, শুধু শাখা ব্যাংকিং, কৃষি শাখা, এসএমই শাখা, কালেকশন বুথ (ফাস্ট ট্র্যাক ও ইলেকট্রনিক) ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যেত।

এরপর ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং বুথগুলোকে উপশাখায় রূপান্তর করতে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

9h ago