যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানির পরিমাণে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিবিএস, উৎপাদন,
স্টার ফাইল ফটো

পরিমাণের দিক থেকে যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। তবে, যেসব আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা কম মূল্য পেয়ে থাকেন তার মধ্যে যুক্তরাজ্য একটি।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি-অক্টোবরে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যে ১৭৮ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন কেজি ও চীন ১৫৯ দশমিক ২৫ মিলিয়ন কেজি পোশাক রপ্তানি করেছে।

গত বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ কমেছে ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, একই সময়ে চীনের কমেছে ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

২০২২ সালে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৩২ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন কেজি, যেখানে চীনের ছিল ২২২ দশমিক ৮৩ কেজি।

কিন্তু, গত বছর যুক্তরাজ্যে খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর সামগ্রিক পোশাক আমদানি কম ছিল। কারণ করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভোক্তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছেন।

গত বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে ব্রিটিশ খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাক আমদানি ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬০৪ দশমিক ২০ মিলিয়ন কেজিতে।

এদিকে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা ব্রিটিশ খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে সর্বনিম্ন দাম পেয়েছে। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশিদের চালানে কম দামি পণ্য ছিল। বিপরীতে চীন ও তুরস্কের মতো অন্যান্য দেশ বেশি দামের পোশাক রপ্তানি করে ভালো মূল্য পেয়েছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তুলনা মূল্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের গড় দাম চীনের চেয়ে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ, তুরস্কের চেয়ে ৩২ শতাংশ ও ভারতের চেয়ে ২৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এক বিবৃতিতে বলেন, 'যদিও এই তথ্য প্রতিযোগিতার প্রমাণ দেয় না, তবে বাজারের মধ্যম-উচ্চমূল্য পণ্যে ক্যাটাগরিতে আমাদের অনুপস্থিতিকে তুলে ধরে। মধ্যম-উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানির জন্য আমাদের কৌশল নির্ধারণ করা উচিত।'

তিনি জানান, যুক্তরাজ্যের পোশাক আমদানিতে আর্থিক মূল্যের দিক থেকে বাংলাদেশের অংশ ২৩ শতাংশ এবং পরিমাণের দিক থেকে ২৮ শতাংশ। মানে এই বাজারে আমাদের এখনো সুযোগ আছে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, 'এখন পর্যন্ত আমরা খরচ, সময়মতো ডেলিভারি এবং মান ধরে রেখে আমাদের অবস্থান সুরক্ষিত করতে পেরেছি, যা যুক্তরাজ্যের বাজারে প্রতিযোগিতায় আমাদের এগিয়ে রেখেছে।'

যুক্তরাজ্যে গার্মেন্টস চালানের মূল্যের দিক থেকে বাংলাদেশ চীনের খুব কাছাকাছি। গত বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক ০১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি।

অন্যদিকে গত বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে মূল্যের দিক থেকে যুক্তরাজ্যে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২১ দশমিক ০১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে।

মহামারির আগে ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৯ সালে ছিল ১৬ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হলে আমদানি ১৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল।

এরপর ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের পোশাক আমদানি আরও কিছুটা কমে ১৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

তবে, ২০২২ সালে সেখানে পোশাক আমদানি বাড়তে শুরু করে। সে বছর আমদানির পরিমাণ ১৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। যদিও এখনো পরিমাণের দিক থেকে করোনার আগের সময়ের চেয়ে কম।

আশা করা হয়েছিল ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা ২০২৩ সালেও অব্যাহত থাকবে। কিন্তু, যুক্তরাজ্যের বিশ্বব্যাপী পোশাক আমদানি জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে মূল্যের দিক থেকে ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে ১২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে মূল্যের দিক থেকে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পরে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাজ্য।

আশা করা যায়, মূল্যের দিক থেকেও বাংলাদেশ শিগগিরই এই বাজারে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম রপ্তানিতে শীর্ষে আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

6h ago