নরসিংদী

ফরম ফিলাপ ফি আত্মসাৎ, দাখিলের ২২ শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় বসা অনিশ্চিত

নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালীর চরমাধবপুর মদিনাতুল উলুম আলিম মাদ্রাসায় দাখিলের (এসএসসি সমমান) ২২ পরীক্ষার্থীর ফরম ফিলাপ ফি বোর্ডে জমা না দিয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু এই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসা নিয়েই এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

অভিযুক্ত কর্মচারীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। শুধু ফরম পূরণের টাকা আত্মসাৎই নয়, যে শিক্ষার্থীরা এবার দশম শ্রেণিতে উঠেছে তাদের মধ্যে ৩৫ জনের নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনের টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেছেন। আগামী বছর তাদের দাখিল পরীক্ষায় বসা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে আলিম (দ্বাদশ) শ্রেণি পর্যন্ত পায় পাঁচশ শিক্ষার্থী রয়েছে।

সম্প্রতি এ ঘটনা সামনে আসার পর, মাদ্রাসা থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ ফি ছাড়াও বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়, চরমাধবপুর মদিনাতুল উলুম আলিম মাদ্রাসার অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর কবির হোসেন, ২০২২-২৩ বর্ষের ২২ জনের ফরম ফিলাপ এবং ২০২৩-২৪ বর্ষের ৩৫ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন ফি মাদ্রাসা বোর্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের ফরম পূরণের কাজ সম্পূর্ণ করা যায়নি। ফলে, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।'

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, তদন্তে দেখা গেছে তিনি ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে ১ লাখ ২১ হাজার টাকা মাদ্রাসার তহবিল থেকে আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়াও ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গত বার্ষিক পরীক্ষার ফি ও বেতন আত্মসাৎ করেছেন। এসব ছাড়াও ২৪টি অপরাধে সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।'

আন্দোলনকারী ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের একজন বলেন, 'গত সোমবার আমরা জানতে পেরেছি বোর্ডে আমাদের রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দেওয়া হয়নি। গত ৩০ নভেম্বর ছিল ফি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র পেলেও আমাদেরকে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে আমাদের এক বছর নষ্ট হতে চলেছে। তাই গত মঙ্গলবার থেকে প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করছি। প্রবেশপত্র না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।'

মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট বেনজির আহমদ বলেন, 'আমরা মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ডে গত মঙ্গলবার থেকে নিজের পকেট থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করতে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করতে পারিনি। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসতে পারবে কিনা এখনও অনিশ্চিত। তবে, আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।'

চরমাধবপুর মদিনাতুল উলুম আলিম মাদ্রাসাটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অভিযুক্ত কবির হোসেন স্থানীয় হওয়ায় সবার সাথে প্রভাব খাটায়। আমরা জানতে পেরেছি সে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। নামে বেনামে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে থেকে অযৌক্তিক ফি আদায় করেছে। সে নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।'

অভিযুক্ত কবির আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'আমাদের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আশাবাদী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রবেশ পত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করতে পারব। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বোর্ডে ফি জমা দিয়েছি। আর অন্য সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক।'

নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরিন বলেন, 'আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্তে কবির আহমেদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মে সম্পৃক্ত থাকার সত্যতা পেয়েছি। আমরা তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। যাদের পরীক্ষায় বসা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তাদেরকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ তৈরি করতে আমরা কাজ করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

4h ago