সার-কীটনাশকহীন ‘গানজিয়া’র চাহিদা বাড়ছে

গানজিয়া
ব্রহ্মপুত্রপাড়ের চর জোরগাছ হাটে বেচাকেনা হচ্ছে গানজিয়া ধান। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লাল চালের ধান 'গানজিয়া' পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা আছে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে। এ কারণে ব্রহ্মপুত্রপাড়ের এই চাল চলে যাচ্ছে শহরগুলোয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চরের কৃষকদের কাছে এ ধান কিনে পাঠাচ্ছেন শহরের চাল ব্যবসায়ীদের কাছে। জানা গেছে, চরের কৃষকরা গানজিয়া চাষ করে আশানুরূপ লাভ করতে না পারলেও লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে শতাধিক চরে গানজিয়া চাষ হয়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ ধান মূলত বিক্রি হয় চরের হাটে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রতি বছর কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার প্রায় ১০০ চরে ৫০০-৬০০ হেক্টর জমিতে গানজিয়া চাষ হয়। এর ফলন কম। প্রতি বিঘায় ধান পাওয়া যায় সাত থেকে আট মণ। অন্য জাতের ধান পাওয়া যায় ১৪ থেকে ১৫ মণ।

গানজিয়া
প্রতি বিঘায় গানজিয়া ধান পাওয়া যায় সাত থেকে আট মণ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'গানজিয়া' ব্রহ্মপুত্রপাড়ে চরাঞ্চলের কৃষকদের নিজস্ব জাত। বহুকাল ধরে চরের কৃষকরা এ ধান চাষ করে আসছেন।

এ জাতের ধান শুধু চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুরের চরাঞ্চলে চাষ হয়। সেখানকার কৃষকরা বংশ পরম্পরায় এ ধান চাষ করে আসছেন। এ ধানের বীজ কৃষকরাই সংরক্ষণ করেন। আগে নিজেদের উৎপাদিত এ ধান নিজেরাই ব্যবহার করতেন। গত ১০-১২ বছর ধরে এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তারা তা বিক্রি করছেন।

এ ধানের চাল চিকন হওয়ায় শহরের মানুষের কাছে চাহিদা বাড়ছে।

বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, 'গানজিয়া ধান নিয়ে কৃষি বিভাগ কোনো গবেষণা করেনি। এ ধান চরের কৃষকের নিজস্ব। এটি তাদের কাছে ঐতিহ্য।'

চিলমারী উপজেলার চর শাখাহাতির কৃষক নুরুজ্জামান শেখ (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গানজিয়ার উৎপাদন কম হলেও এর উৎপাদন-খরচও কম। সেচ দিতে হয় না। সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন নেই। চারা রোপণ করলে তা স্বাভাবিক বেড়ে উঠে। এ ধানে পোকার আক্রমণ হয় না। শুধু শ্রমিক খরচ দরকার হয়।'

গানজিয়াকে 'অবহেলার ফসল' বলা হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বন্যার পর চরে যেখানে পলি জমে সেখানে এ ধান চাষ করা হয়। দুই যুগ আগে চরে এর ব্যাপক চাষ হয়েছিল। ধীরে ধীরে কমছে।'

তিনি প্রতি বছর ৫-৬ বিঘা জমিতে গানজিয়া ধান চাষ করেন।

গানজিয়া
কৃষকরা জানিয়েছেন তারা গানজিয়া চাষ করে আশানুরূপ লাভ করতে না পারলেও লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

রাজিবপুর উপজেলার চর কোদালকাটির কৃষক নজরুল ইসলাম (৬৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক সময় গানজিয়ার চাল খেতাম। এতে প্রচুর পুষ্টি। গত কয়েক বছর ধরে এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছি।'

'চরের মানুষের কাছে মোটা চাল বেশি প্রিয়। গানজিয়া ব্রহ্মপুত্রপাড়ের ঐতিহ্যবাহী ফসল। এর সঙ্গে পূর্ব পুরুষের স্মৃতি মিশে আছে।'

চিলমারী উপজেলার জোরগাছ চরে ব্যবসায়ী মোকাদ্দম আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরে কৃষকের কাছ থেকে প্রতি মণ গানজিয়া ধান এক হাজার ১৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ দরে কিনছি। প্রতি মণ ধান চর থেকে বহন করতে খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা।'

তারা ঢাকাসহ অন্য স্থানের ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি মণ ধান বিক্রি করেন এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা দরে। তারা কখনো ধান থেকে চাল করে শহরের ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠান।

সাধারণত প্রতি মণ ধান থেকে ২৮ থেকে ২৯ কেজি চাল হয়। কিন্তু, গানজিয়া থেকে পাওয়া যায় ২৫ থেকে ২৬ কেজি। গানজিয়া ধান থেকে প্রতি কেজি চাল তৈরি করতে খরচ হয় ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। ঢাকার ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট ক্রেতাদের কাছে তা বিক্রি করছেন।

চিলমারী উপজেলার শিক্ষক ও লেখক নাহিদ হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা গানজিয়ার চাল খেতে পছন্দ করেন। আমাদের এখানে গানজিয়া চাষ হলেও আমরা এটা কম খাই। সব ধান চলে যায় শহরে।'

'গানজিয়া ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ঐতিহ্যবাহী ধানের জাত হলেও তা নিয়ে কোন গবেষণা হয়নি,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

12h ago