চট্টগ্রাম

সারা বছর জলাবদ্ধ থাকে যে কলেজের ক্যাম্পাস

স্থায়ী জলাবদ্ধতায় কচুরিপানা জন্মেছে চট্টগ্রাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ক্যাম্পাসে। ছবি: স্টার

সারা বছর ধরে জলাবদ্ধ থাকে চট্টগ্রাম সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটিসি) পুরো ক্যাম্পাস। এতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হয় প্রশিক্ষণার্থীদেরকে।

চট্টগ্রাম নগরীর শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চকবাজার এলাকায় এই কলেজ ক্যাম্পাস। কলেজের প্রশিক্ষণার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মতে, এখানে জলাবদ্ধতা সাম্প্রতিক কোনো সমস্যা নয়। গত পাঁচ বছর ধরে তারা এই দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

টিটিসির প্রশিক্ষণার্থী মাদ্রাসাশিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই সমস্যাটি সমাধানের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

তিনি বলেন, 'আমি এই কলেজ থেকে ছয়-সাত বছর আগে বিএড এবং এমএড সম্পন্ন করেছি। তখন ক্যাম্পাসের অবস্থা খুব ভালো ছিল। বিকেলে আমরা কলেজ মাঠে ফুটবল, বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলতাম। এখন মাঠটি পানির নিচে।

সারা বছরই পুরুষ ও মহিলা হোস্টেলের নিচতলায় এবং ক্যাম্পাসের চারপাশে বৃষ্টির পানি জমে থাকে বলেও জানান তিনি।

মিজানুর বলেন, পাঁচ বছর আগে থেকে ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিবেশ খারাপ হতে থাকে। 

চট্টগ্রাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ক্যাম্পাসের মাঠে সারা বছর পানি জমে থাকে। ছবি: স্টার

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি কলেজিয়েট হাইস্কুলের সিনিয়র শিক্ষক থুইচি মং মারমা একই কথার প্রতিধ্বনি করে বলেন, তিনি এই কলেজ থেকে ২০০৯ সালে বিএড এবং ২০১০ সালে এমএড সম্পন্ন করেছেন। তখন ক্যাম্পাসে কোনো জলাবদ্ধতা ছিল না। চারপাশ অনেক সুন্দর ছিল।

থুইচি গত সপ্তাহে একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে যোগ দিতে টিটিসিতে আসেন। ক্যাম্পাসের দুরবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের হোস্টেলের প্রবেশপথে ও নিচতলায় সারা বছর জলাবদ্ধতা থাকে। হোস্টেলের নিচতলায় জমে থাকা পানি মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার উত্তর মুবাছড়ি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মিতালী দেবী চাকমা বলেন, 'মহিলা হোস্টেলের নিচতলায় জমে থাকা নোংরা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এই অবস্থায় হোস্টেলে থাকা খুবই কষ্টসাধ্য। রাত কাটে মশার আতঙ্কে।'

সরেজমিনে দেখা গেছে, কলেজ মাঠে, পুরুষ ও মহিলা উভয় হোস্টেলের প্রবেশপথে এবং নিচতলায় পানি জমে আছে। বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা পানি ছেয়ে গেছে কচুরিপানায়। আর তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে হোস্টেলে। এই পানি মাড়িয়েই প্রশিক্ষণার্থীদের যাতায়াত করতে হয়। যদিও প্রবেশপথে কিছু ইট এবং কাঠের তক্তা বিছানো হয়েছে। এর উপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

দুর্বল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা

চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সাজানো গুছানো ক্যাম্পাসের জন্য একসময় টিটিসির সুখ্যাতি ছিল। একাডেমিক ভবনের সামনে একটি বাগান ছিল। কলেজের বিশাল মাঠে প্রশিক্ষণার্থীরা অবসর সময়ে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিতেন। সকাল-বিকেল মাঠের আশপাশে রাস্তায় হাঁটতেন প্রশিক্ষণার্থীসহ আশপাশের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ।

জানা যায়, ১৯৭৭ সালে প্রথম এই কলেজে বিএড কোর্স চালু হয়। আর ১৯৯৬ সালে চালু হয় এমএড কোর্স। এর মধ্যে কলেজ সংলগ্ন মাধ্যমিক শিক্ষা ও বিজ্ঞান উন্নয়ন কেন্দ্রে ১৯৮৭ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ে স্বল্প মেয়াদী কোর্স চালু আছে। কলেজ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এই কলেজে বিএড ও এমএড কোর্সে প্রায় চারশ প্রশিক্ষণার্থী রয়েছেন। বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত কোর্সে আছেন আরও প্রায় সাড়ে চারশ প্রশিক্ষণার্থী। যাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে আসেন। এদের বড় একটি অংশ কলেজের আবাসিক হলগুলোতে থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রশিক্ষণার্থী বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে কলেজ কর্তৃপক্ষ সংলগ্ন রাস্তাগুলো উঁচু করার পর মাঠ ও হোস্টেলের কম্পাউন্ডে বৃষ্টির পানি জমতে শুরু করে। দুর্বল নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে জমে থাকা পানি সরছে না।

যোগাযোগ করা হলে, কলেজের উপাধ্যক্ষ ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলরুবা আক্তার চৌধুরী বলেন, বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেতে কলেজের আশপাশের রাস্তা ও ভবনের মালিকেরা নিজেদের স্থাপনা উঁচু করার কারণে বৃষ্টির সব পানি কলেজের মাঠ এবং হোস্টেল কম্পাউন্ডে এসে জমে।

তিনি বলেন, এর মধ্যে বর্ষাকালে শিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের চলাচলের সুবিধার জন্য তারাও মাঠের চারপাশের রাস্তা উঁচু করেছেন। এ কারণে বর্ষাকালে কলেজ ক্যাম্পাসের চারপাশে পানি জমে থাকে। এই পানি আর সারা বছর বের হতে পারে না।

যোগাযোগ করা হলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তিনি এই সমস্যার কথা জানেন।

'আগে আমাদের বাজেট ছিল না কিন্তু এই অর্থবছরে আমাদের বাজেট আছে। এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে,' বলেন তিনি।

আগামী মাসে কাজ শুরু হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
government decision to abolish DSA

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

12h ago