নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত ব্যয় ১৮ নন-লাইফ বিমা কোম্পানির

২০২২ সালে দেশের ১৮টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানি তাদের ব্যবস্থাপনা বাবদ নির্ধারিত বা অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করেছে। যা এসব বিমা কোম্পানির সামগ্রিক ব্যবসায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এতে ১৮টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানির দাবি নিষ্পত্তির সক্ষমতা কমে গেছে।

অবশ্য এসব বিমা কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারিসহ অন্যান্য বৈশ্বিক সংকটের পরে সৃষ্টি হওয়া অস্থিতিশীল ব্যবসায়িক পরিবেশ এই অতিরিক্ত খরচের জন্য দায়ী।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) এক নথি অনুযায়ী কোম্পানিগুলো হলো—কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স ও মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

এ ছাড়া, এই তালিকায় আছে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, নিটল ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স।

অনুমোদিত ব্যবস্থাপনা ব্যয় বলতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিমা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে ব্যয় করার অনুমোদন দিয়ে থাকে তাকে বোঝায়। বিশেষ করে এজেন্ট কমিশন ও পরিচালন ব্যয়।

মূলত এক বছরে মোট প্রিমিয়াম আয়ের ভিত্তিতে এই সীমা নির্ধারণ করা হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, বিমাকারীরা অগ্নি ও অন্যান্য ধরনের বিমা থেকে প্রিমিয়ামের আকারে যে অর্থ পায় তার একটি নির্দিষ্ট শতাংশ ব্যয় করতে পারে। তবে, নৌ বিমার বিষয়টি কিছুটা আলাদাভাবে বিবেচিত হয়।

যেমন: এক পঞ্জিকা বছরে মোট প্রিমিয়াম আয়ের প্রথম ১৫ কোটি টাকার মধ্যে একটি নন-লাইফ বিমা কোম্পানি অগ্নি ও অন্যান্য বিমা বাবদ যে পরিমাণ অর্থ পায় তার ৩৫ শতাংশ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের পেছনে ব্যয় করতে পারে। নৌ বিমার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ২৬ শতাংশ।

এর পরবর্তী ১৫ কোটি টাকার ক্ষেত্রে কোম্পানিটি অগ্নি ও অন্যান্য বিমার জন্য প্রিমিয়ামের ৩৩ শতাংশ এবং নৌ বিমার আওতায় আদায় করা প্রিমিয়ামের ২৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে।

কোনো কোম্পানি পরিচালনার ব্যয়ে কতটা ব্যয় করতে পারবে তার সীমাসহ এ ধরনের আটটি নিয়ম আছে।

আইডিআরএর এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি ব্যয় করলে সময়মতো বিমা দাবি নিষ্পত্তি করতে পারে না।

এই ১৮টি কোম্পানি মূলত বেতন, এজেন্টদের অতিরিক্ত কমিশন, গাড়ি কেনা, বিজ্ঞাপন, প্রিন্টিং ষ্টেশনারী ও মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করছে বলে জানান তিনি।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৬টি নন-লাইফ ও ৩৫টি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি আছে।

আইডিআরএর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স নির্ধারিত সীমার চেয়ে ২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় করে এই তালিকার শীর্ষে আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবসা না থাকায় ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি হয়েছে। অতিরিক্ত খরচের সিংহভাগ বেতন বাবদ খরচ হয়েছে।'

মেঘনার পরে আছে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স ও ইসলামী ইন্স্যুরেন্স। গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স নির্ধারিত সীমার চেয়ে ২৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং ইসলামী ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।

গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোশাররফ হোসেন বলেন, করোনা মহামারি ও অন্যান্য বৈশ্বিক সংকটের পর থেকে ব্যবসার পরিবেশ আর আগের মতো নেই।

'মুনাফা কমে গেছে। এছাড়া আমরা যতটা আশা করেছিলাম ততটা লাভ করতে পারিনি বা ব্যবসা করতে পারিনি। ফলে খরচ নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে,' বলেন তিনি।

আইডিআরএর মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০২২ সালের নিরীক্ষিত তথ্য হওয়ার কারণে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, দেশে ডলার ঘাটতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়েছে বলে কোম্পানিগুলো দাবি করছে।

এ ছাড়া, মোটর বিমা বন্ধের পর ব্যবসায় মন্দার কারণে বাড়তি ব্যয় করতে হয়েছে বলেও দাবি করেছে কোম্পানিগুলো।

এক সময় সব ধরনের যানবাহন, যেমন: মোটরসাইকেল, গাড়ি, বাস ও ট্রাকের জন্য বিমা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু, সরকার ২০১৮ সালে তা তুলে নেয়, যা তাদের ব্যবসার জন্য একটি ধাক্কা হয়ে আসে।

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, যেসব বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় সীমা অতিক্রম করেছে তাদের বিষয়ে গত ২৯ জানুয়ারি শুনানি শেষ হয়েছে।

এরপরে কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত ব্যয় সম্পর্কিত নথি জমা দিতে বলা হয়েছে। সেগুলো পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, নন-লাইফ বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় কীভাবে নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে আজ আইডিআরএ'র সঙ্গে সবাই বসবে।

Comments