হামাসের বিরুদ্ধে পূর্ণ বিজয় অর্জন করতে রাফাহ অভিযানের বিকল্প নেই: নেতানিয়াহু

মার্কিন ইহুদি প্রতিষ্ঠানের এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স (১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪)
মার্কিন ইহুদি প্রতিষ্ঠানের এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স (১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪)

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকা থেকে বেসামরিক ব্যক্তিদের সরিয়ে নেওয়ার একটি পরিকল্পনা দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে আজ এ বিষয়ে একটি ঘোষণা এসেছে।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

তবে এর আগে নেতানিয়াহু জানান, হামাসের বিরুদ্ধে 'পূর্ণ বিজয়' অর্জনে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের দক্ষিণে অবস্থিত রাফাহ শহরে স্থল অভিযান চালানোর কোনো বিকল্প নেই।

বিভিন্ন দেশের সরকার ও ত্রাণসংস্থাগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এ ধরনের অভিযানে অসংখ্য বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি হতে পারে।

এখন পর্যন্ত গাজার বড় শহরগুলোর মধ্যে শুধু রাফাহর বিরুদ্ধে স্থল হামলা চালায়নি ইসরায়েল। যার ফলে, গাজার বাকি সব অংশ থেকে আসা বাস্তুচ্যুত মানুষ জমায়েত হয়ে বর্তমানে রাফাহর জনসংখ্যা ১৪ লাখে গিয়ে ঠেকেছে।

রাফাহ অন্য একটি কারণেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলে কোনো কার্যকর বিমানবন্দর না থাকায় পার্শ্ববর্তী দেশ মিশর থেকে রাফাহ সীমান্ত হয়েও সব ধরনের ত্রাণসামগ্রী গাজায় প্রবেশ করে।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে আজ সোমবার হিব্রু ভাষায় লিখিত এক বক্তব্যে জানানো হয়, 'ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার কাছে গাজা উপত্যকার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে মানুষকে সরিয়ে আনা এবং আসন্ন অভিযানের বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দিয়েছে।'

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি যুবক হাসান আবু সামান নিজের পাশাপাশি তার পোষা কুকুরদের দেখভাল করতে হিমশিম খাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে রাফাহ এসে তাকে খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স (২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪)
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি যুবক হাসান আবু সামান নিজের পাশাপাশি তার পোষা কুকুরদের দেখভাল করতে হিমশিম খাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে রাফাহ এসে তাকে খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স (২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪)

তবে এই বিবৃতিতে কীভাবে এবং কোথায় বেসামরিক মানুষদের সরিয়ে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি।

এই ঘোষণা আসার আগে মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের 'বিশেষজ্ঞরা' গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের দোহায় এক বৈঠকে অংশ নেন। এই বৈঠকে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরাও ছিলেন বলে জানিয়েছে একটি মিশরীয় সরকারী গণমাধ্যম।

রমজান মাসের আগে যুদ্ধবিরতি চালুর জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, চলমান উদ্যোগে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে 'বোঝাপড়া' তৈরি হয়েছে। তবে হামাসের এক সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনটি এখনো ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের দাবিতে অনড়। 

নেতানিয়াহু এর আগে সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাবকে 'অবাস্তব' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, রাফাহর বিরুদ্ধে স্থল অভিযান পরিচালনা করতে পারলে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে 'সম্পূর্ণ বিজয়' অর্জনের একেবারে কাছে চলে আসবে—হয়তো এরপর আর সপ্তাহ-দুয়েক যুদ্ধ চলবে।

সিবিএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গতকাল রোববার তিনি বলেন, 'আমরা যদি যুদ্ধবিরতির চুক্তি করি, তাহলে এটা (রাফাহর অভিযান) খানিকটা বিলম্বিত হবে, তবে এই অভিযান হবেই। এতে কোনো সন্দেহ নেই।'

'এই অভিযান চালাতেই হবে, কারণ আমাদের লক্ষ্য সম্পূর্ণ বিজয় এবং তা আমাদের নাগালের মধ্যেই আছে—কয়কে মাস দূরে নয়, বরং কয়েক সপ্তাহ দূরে; যখন আমরা অভিযান শুরু করব।'

ইসরায়েলি বিমানহামলার পর রাফাহর এই ভবনটি ধ্বংস হয়। ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি বিমানহামলার পর রাফাহর এই ভবনটি ধ্বংস হয়। ছবি: রয়টার্স

মধ্যস্থতাকারীরা আশা করছেন মার্চের ১০ বা ১১ তারিখে শুরু হতে যাওয়া রমজান মাসের আগেই সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি চূড়ান্ত হবে।

জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ হুশিয়ারি দেন, এই পবিত্র মাসে যুদ্ধ চললে 'এই সংঘাত অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার হুমকি বাড়াবে।'

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, মধ্যস্থতাকারীরা ছয় সপ্তাহের যুদ্ধ বিরতি নিয়ে কাজ করছেন। প্রাথমিকভাবে নারী, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অসুস্থ জিম্মিরা মুক্তি পাবেন আর বিনিময়ে আর শত শত ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পাবেন।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৬০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫০ জন মানুষ।

সেদিন থেকে গত প্রায় চার মাসে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক নির্বিচার হামলায় ২৯ হাজার ৬৯২ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments

The Daily Star  | English
judges hammer

Court to deliver verdict on Magura child rape, murder case May 17

Judge M Zahid Hasan of the Magura Women and Children Repression Prevention Tribunal passed the order

17m ago