গাজার সমুদ্রতীরের ক্যাফেতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২১

গাজার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ক্যাফেতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজার পশ্চিমাঞ্চলের ওই ক্যাফে অধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
আজ সোমবার চিকিৎসাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
আল-বাকা ক্যাফেটেরিয়া থেকে উদ্ধারকর্মীরা ২০টি মরদেহ ও আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় সরিয়ে নিয়ে গেছে। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত নাগরিক সুরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, সমুদ্রতীরে তাঁবু খাটিয়ে ওই ক্যাফের কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
বিস্ফোরণে মাটিতে একটি বেশ বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান মুখপাত্র। সেখানে এখনো উদ্ধারকর্মীরা আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
অপরদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, গাজা সিটির আল-বাকা বিশ্রামাগারে ইন্টারনেট সেবা নিতে ও খাবার খেতে আসা ২১ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় একটি প্রযোজনা সংস্থার চিত্রগ্রাহক আজিজ আল-আফিফি বিবিসিকে বলেন, 'আমি ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য ক্যাফের দিকে যাচ্ছিলাম। আমার অবস্থান থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে ছিল ক্যাফেটি। এ সময় বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটে।'

'আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখানে আমার সহকর্মী ছিলেন। ছিলেন এমন সব মানুষ, যাদের সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হয়। যেয়ে ভয়াবহ দৃশ্যের মুখোমুখি হই—চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানবদেহ, রক্ত আর আহতদের নারকীয় চিৎকার।'
সামাজিক মাধ্যমে অধিকারকর্মীদের দেওয়া ভিডিও দেখে ধারণা করা যায়, ওই ক্যাফে ও সংলগ্ন এলাকায়কায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। হামলার পরের ভিডিওতে মাটিতে বেশ কয়েকটি মানবদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও দূরবর্তী কাজ (রিমোট ওয়ার্ক) করেন যারা, তাদের কাছে গাজার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত ওই ক্যাফে খুবই জনপ্রিয়। ক্যাফেটিতে ইন্টারনেট, বসে খাওয়াদাওয়া ও কাজ করার সুবিধা ছিল।
এ বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিক ভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
এই হামলার আগে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে রাতভর বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এতে শত শত ফিলিস্তিনি পরিবার নিজ নিজ বাড়ি থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
আহতদের চিকিৎসার জন্য গাজা সিটির আল-আহলি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়।
এর আগে এএফপি গাজার নাগরিক সুরক্ষা দপ্তরের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আজ সোমবার ইসরায়েলি হামলায় ৩৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জন গ্লোবাল হিউম্যানিট্যারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ত্রাণ নিতে এসে নিহত হন।
তবে এই সংখ্যায় ক্যাফের নিহতরা অন্তর্ভুক্ত কী না, তা নিশ্চিত নয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনী হামাসের অতর্কিত হামলায় এক হাজার ২১৯ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর সেদিনই গাজায় প্রতিশোধমূলক, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ শুরু করে ইসরায়েল। মাঝে দুই দফায় স্বল্প মেয়াদে যুদ্ধে বিরতি পড়লেও এ বছরের মার্চ থেকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় নেতানিয়াহু প্রশাসন। সব মিলিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৫৩১। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।
Comments