লিটন-তাওহিদের তাণ্ডবে ফাইনালে কুমিল্লা

জেমস নিশামের ঝড়ো ইনিংসের পরও হারতে হলো রংপুর রাইডার্সকে

জেমস নিশামের বিধ্বংসী এক ইনিংসে বড় পুঁজিই পেয়েছিল রংপুর রাইডার্স। তখন মনে হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে দুই দলের মধ্যে। কিন্তু দানবীয় ব্যাটিংয়ে রংপুরকে জমিয়ে লড়াইটাও করতে দেননি তাওহিদ হৃদয় ও লিটন দাস। এ দুই ব্যাটারের তাণ্ডবে দারুণ এক জয়ে ফাইনালের টিকিট কাটল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৫ রান করে রংপুর। জবাবে ৯ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা।

এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিপিএলের ফাইনালে উঠল কুমিল্লা। এর আগে চার বার ফাইনালে উঠে চারবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি। অন্যদিকে হারলেও বিদায় নেয়নি রংপুর। এখনও ফাইনাল খেলার সুযোগ রয়েছে তাদের। স্বপ্নের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগামী বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে দলটি।  

এর আগে গ্রুপ পর্বে দুইবার মুখোমুখি হয়েছিল কুমিল্লা ও রংপুর। সেখানে একটি করে জয় উভয় দলেরই। সিলেটে দুই দলের প্রথম মোকাবেলায় জয় পেয়েছিল রংপুর। ৮ রানের দারুণ জয় মিলে তাদের। এরপর চট্টগ্রামের মাঠে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হয় দলদুটি। এই লড়াইয়ে ৬ উইকেটের সহজ জয়ই পায় গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।

লক্ষ্য তাড়ায় এদিন ইনিংসের প্রথম বলেই ধাক্কা খেয়েছিল কুমিল্লা। ওপেনিংয়ে নামা সুনীল নারিনকে হারায় খালি হাতেই। তবে এরপর তাওহিদ হৃদয়কে দলের হাল ধরেন আরেক ওপেনার লিটন। ৮৯ বলে গড়েন ১৪৩ রানের দারুণ এক জুটি। যা চলতি আসরের সর্বোচ্চ জুটিও বটে। এ জুটিতেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় দলটি।

১৫তম ওভারে এসে তাওহিদকে ফিরিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন আবু হায়দার রনি। আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে ফিফটি স্পর্শ করা তাওহিদ খেলেন ৬৪ রানের ইনিংস। ৪৩ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান এই তরুণ।

এরপর জনসন চার্লসকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন লিটন। জনসন অবশ্য খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৩ বলে ১০ রান করে আউট হন ফজলহক ফারুকির বলে। এরপর দ্রুত ফিরে যান লিটনও। তবে শেখ মেহেদী হাসানের শিকার হওয়ার আগে খেলেন ৮৩ রানের ইনিংস। ৭ বলের ইনিংসে ৯টি চার ও ৪টি ছক্কা মারেন অধিনায়ক। এরপর বাকি কাজ শেষ করেন আন্দ্রে রাসেল ও মঈন আলী।  

এদিন টস জিতে রংপুরকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় কুমিল্লা। বোলিং নিয়ে শুরুটাও দারুণ করে দলটি। দলীয় ২৭ রানেই দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও শামিম হোসেন পাটোয়ারি সহ ছন্দে থাকা সাকিব আল হাসানকে ফিরিয়ে দেয় তারা।

ভাগ্যও সঙ্গ দেয় কুমিল্লাকে। তানভির ইসলামের বলে সপাটে ব্যাট চালিয়েছিলেন শামিম। বুলেট গতিতে আসা ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি বোলার তানভির। কিন্তু হাতে লেগে চলে যায় মিডঅফে, ঠিক যেমন ফুটবলে পাঞ্চ করে তুলে দেন গোলরক্ষকরা। দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ লুফে নেন আন্দ্রে রাসেল। খালি হাতে ফিরে যান শামিম।

আর অভিষিক্ত রহনত দৌলা বর্ষণের বলে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আরেক ওপেনার রনি তালুকদার। ১১ বলে ১৩ রান করেন এই ওপেনার। হতাশ করেন সাকিবও। ব্যক্তিগত ৫ রানে রাসেলের বলে টপএজ হয়ে সাজঘরে ফেরেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার। এরপর শেখ মেহেদী হাসানকে নিয়ে দলের হাল ধরেন জেমস নিশাম। ৩৯ রানের জুটি গড়ে চাপ সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন তারা।

শেখ মেহেদীকে ফিরিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটি ভাঙেন সুনীল নারিন। ১৭ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২২ রান করেন মেহেদী। এরপর নিশামকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন ক্যারিবিয়ান তারকা নিকোলাস পুরান। তবে সুবিধা করে উঠতে পারেননি। ৯ বলে ১৪ রান করে আউট হন মুশফিক হাসানের বলে।

তবে অপর প্রান্তটা ঠিকই আগলে রাখেন নিশাম। অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে গড়েন ৫৩ রানের দারুণ একটি জুটি।  যেখানে ২৪ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩০ রান করেন সোহান। তাতেই বড় পুঁজির ভিত পেয়ে যায় দলটি।

এরপর শেষ ওভারে নিশামের তাণ্ডব। তরুণ মুশফিকের বলে ২৮ রান তুলে নেন তিনি। যেখানে একটি নো-বলও করেন এই তরুণ পেসার। ৩টি ছক্কা সহ মোট টি বাউন্ডারি খরচ করায় বিব্রতকর এক রেকর্ডও সঙ্গী হয় এই তরুণের। বিপিএলে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি খরচ করা বোলার এখন মুশফিক। ৪ ওভারে ৭২ রান খরচ করে একটি উইকেট পান তিনি।

তবে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩ রান দূরে আটকে থাকতে হয় তাকে। ক্যারিয়ার সেরা ৯৭ রানের ইনিংস খেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। ৪৯ বলে ৮টি চার ও ৭টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago