লাশ হয়ে বাড়ির পথে ‘কাচ্চি ভাই’য়ের কর্মী নাইম ও ‘এমব্রোসিয়া’র শেফ জুয়েল

(বাম থেকে) নাইম ও জুয়েল। ছবি: সংগৃহীত

মাত্র তিন দিন আগে রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়েছিলেন নাইম (২২)। গতকাল বৃহস্পতিবার সাত তলা ওই ভবনের অগ্নিকাণ্ডে মারা যান তিনি।

ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন ভবনটির সাততলার 'এমব্রোসিয়া' রেস্টুরেন্টের শেফ জুয়েল রানা (৩৫)।

খবর পেয়ে আজ শুক্রবার তাদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না গ্রামের নান্টু দফাদারের একমাত্র ছেলে নাইম বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

দিনমজুর বাবার অভাবের সংসারে সহযোগিতা করতে মাসখানেক আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন নাইম। গত ৩ দিন আগে বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন তিনি।

ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবা নান্টু দফাদার আজ সকালে মরদেহ আনতে ঢাকা গেছেন।

দুপুরে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা লাকি বেগম বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে লাকি বেগম বলেন, 'রাতে ওই ভবনে আগুন লাগার পর ছেলে ফোন করে তার বাবাকে জানায়। ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিল নাইম। সিঁড়িতে আগুনের কারণে নিচে নামতে পারছিল না। বাবা তাকে ছাদেই থাকতে বলেন। কিন্তু সকালে শুনি আমার বুকের ধন মারা গেছে।'

প্রতিবেশিরা জানান, নান্টু দফাদারের দুই সন্তান। নাইমের বড় এক বোন আছে। বাবা নান্টু দিনমজুর। কলেজ বন্ধ থাকায় অভাব—অনটনের সংসারে কিছুটা আর্থিক যোগান দিতেই নাইম ঢাকা যায়।

অগ্নিকাণ্ডে নিহত জুয়েলের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মধুখালী গ্রামে। 

বেইলি রোডের ওই ভবনটির সাততলায় 'এমব্রোসিয়া' রেস্তোরাঁয় গত ৪-৫ বছর ধরে বাবুর্চির (শেফ) কাজ করতেন তিনি। বাবা ইসমাইল গাজী, স্ত্রী রেবেকা সুলতান, মেয়ে তাসমিম (৮), ছেলে তাইফুরকে (৩) নিয়ে বেইলি রোডের কাছে একটি বাসায় থাকতেন। 

মা ফাতেমা বেগম গ্রামের বাড়িতে থাকেন। ছেলের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন তিনি। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'ছেলের আয় দিয়াই চলত সংসার। এখন আমাদের কীভাবে চলবে? আমরা কার কাছে যাব।'

একই রেস্তোরাঁয় জুয়েলের ভাগনে রাকিব আকনও কাজ করতেন। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে রাকিব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভবনটিতে আগুন লাগার পর আমরা তিনজন ছয়তলায় নেমে একটি জানালা ভেঙে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করি।'

তিনি জানান, প্রথমে তিনি ও পরে রেস্তোরাঁর আরেক কর্মী ক্যাবল তার বেয়ে নিচে নামেন। তার মামা জুয়েল জানালা দিয়ে বের হয়ে একটি এসির ওপর বসেন। এ সময় এসিসহ ভেঙে তিনি নিচে পড়ে যান। 

রাকিব বলেন, 'ভবনটির জানালার কয়েকটি কার্নিশের সঙ্গে মামা ধাক্কা খেয়ে আঘাত পেতে পেতে নিচে পড়ে যান। এতে তার মাথা ফেটে যায় এবং মেরুদণ্ড ভেঙে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Seven killed in Mymensingh road crash

At least seven people were killed and several others injured in a head-on collision between a bus and a human haulier in Mymensingh’s Phulpur upazila last night

1d ago