শিক্ষার্থীকে গুলি করা সেই শিক্ষকের ব্যাগে ২টি পিস্তল, ৮১ রাউন্ড গুলি, ১২টি চাকু
শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় গ্রেপ্তার সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক রায়হান শরীফের ব্যাগ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৮১ রাউন্ড গুলি ও ১২টি চাকু উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার ক্লাসরুমে এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার পর অস্ত্রের ব্যাগসহ পুলিশ কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের এই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, অস্ত্রের প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ ছিল। অবৈধ অস্ত্র কেনা, বহন ও অস্ত্র প্রদর্শন ছিল তার শখ।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, রায়হান শরীফ প্রায়ই শিক্ষার্থীদের অস্ত্র দেখিয়ে এগুলোকে তার 'পোষা পাখি' বলে অভিহিত করতেন।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার তদন্তে পুলিশসহ একাধিক সংস্থা কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অবৈধ অস্ত্র কেনার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন রায়হান। ঘটনাটি তদন্তে পুলিশ আদালতে তার সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে। একইসঙ্গে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দির আবেদনও করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি জুলহাজ উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অবৈধ অস্ত্র কেনার কথা স্বীকার করেছেন। তার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অবৈধ অস্ত্রের আরও তথ্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডিবির ওসি জুলহাজ উদ্দীন বলেন, রায়হান শরীফের ব্যাগ থেকে সেভেন পয়েন্ট ফাইভ সিক্স বোরের দুটি বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, চারটি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। আরও অস্ত্র আছে কি না, খোঁজ নিতে তাকে নিয়ে তার বিএ কলেজ রোডের প্রফেসর গার্ডেন নামের বাসায় অভিযান চালানো হয়। তবে বাসা থেকে নতুন কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আরাফাত তমালের বাবা বগুড়ার নাটাইপাড়া ধানসিঁড়ি এলাকার আবদুল্লাহ আল আমিন সোমবার রাতেই শিক্ষক রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে তার ছেলেকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছে। দুটি মামলাই তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
শিক্ষার্থীর উরুতে গুলি করার ঘটনায় গতকালই রায়হান শরীফকে আটক করা হয়। তখন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অবৈধ অস্ত্র কেনার কথা স্বীকার করেন বলে জানায় পুলিশ। তিনি ইন্টারনেট থেকে বিদেশি পিস্তলের ছবি ডাউনলোড করে রাখতেন। এরপর বিদেশি অস্ত্র কেনার দিকে ঝুঁকে পড়েন।
সিরাজগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন, তিনি একজন চিকিৎসক এবং একজন শিক্ষক। কেউ হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি তার কাছে অবৈধ অস্ত্রের মজুত থাকতে পারে। পুরো চিকিৎসক সমাজের জন্য এটা লজ্জার।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে কলেজে অস্ত্র প্রদর্শন ও শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ নতুন নয়। আগে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় গুলি চালানোর ঘটনাটি ঘটেছে।
তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরি ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে আগে কোনো অভিযোগ আসেনি। গুলির ঘটনার পর এখন অনেকেই এ ধরনের কথা বলছে। সব দিক খতিয়ে দেখে সম্পূর্ণ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, এ ঘটনার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত দল মঙ্গলবার মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেছে। ভুক্তভোগী, অভিযুক্ত, প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত দল। কলেজ ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
Comments