শিক্ষককে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তদন্তের নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের

দ্য ডেইলি স্টারে সংবাদ প্রকাশের পর নাটোরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে মারধর ও হিরোইন দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার ঘটনা তদন্ত করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে স্বপ্রনোদিত হয়ে নির্দেশ দিয়েছেন কমিশন।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিনের সই করা চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে এই নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

চিঠিতে বলা হয়, 'রাষ্ট্রের পেশাদার শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশের দুই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে একজন নাগরিককে মারধর করে, হাতকড়া পরিয়ে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুতর, অগ্রহণযোগ্য ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন মর্মে কমিশন মনে করে। কোনো অফিসার ছাড়া কেবল দুজন কনস্টেবল ও পুলিশের তথাকথিত সোর্স কর্তৃক তল্লাশি ও গ্রেপ্তার, ওসির পরামর্শে আসামির তালিকা থেকে দুই কনস্টেবলের নাম বাদ দেওয়া, উদ্ধারকৃত মাদকের বিষয়ে ওসির একেক সময় একেক ধরণের বক্তব্য প্রদানসহ সার্বিক দিক যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন।'

বিষয়গুলো তদন্ত করে আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক এম রবিউল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'একজন শিক্ষকের সঙ্গে যে আচরণ করেছে পুলিশের কনস্টেবলরা, এটা কোনো ক্রিমিনালের সঙ্গেও করা উচিত নয়। পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্ত করে কমিশনে প্রতিবেদন দেবেন। পুলিশ কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'যদি পুলিশের প্রতিবেদন কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে না হয়, সেক্ষেত্রে কমিশন সেই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে পুনরায় তদন্তের আদেশ দিতে পারেন। তবে যেহেতু পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা তদন্ত করবেন, তারা নিশ্চয়ই সঠিক প্রতিবেদনই জমা দেবেন বলে কমিশন আশা করে।'

ভুক্তভোগী শিক্ষক বাদল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'গত রোববার স্কুল ছুটির পর মোটরসাইকেলে নাটোর শহরের বাসায় ফেরার পথে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ক্ষিদ্র মালঞ্চি এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল সজিব খান ও মো. আসাদুজ্জামান এবং পুলিশের স্থানীয় সোর্স বিদ্যুৎ তার পথরোধ করে এলোপাতাড়ি পেটান। এসময় দৌড়ে পার্শ্ববর্তী কওমি মাদ্রাসায় আশ্রয় নিলে মাদ্রাসার শিক্ষকরা এগিয়ে এলে পুলিশের দুই সদস্য গিয়ে বলেন, "তোর কাছে মাদক আছে"। পরে তারা তল্লাশি করে তাদের কাছে থাকা দুটি কাগজ দেখিয়ে বলে এই যে দুই পুরিয়া হিরোইন পাওয়া গেছে।'

'এরপর দুই পুলিশ সদস্য আমাকে হাতকড়া পরিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পথে দুই হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন। টাকা না থাকায় তাদের বিকাশ নাম্বার দিয়ে টাকা পাঠাতে বলে আমার পকেটে থাকা ৪০০ নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেন। পরে তারা বেশ কয়েকবার টাকার জন্য ফোন করলেও আমি টাকা দেইনি। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি হই,' বলেন বাদল উদ্দিন।

এ ঘটনায় ওই দুই কনস্টেবলকে সোমবার প্রত্যাহার করা হয়। শিক্ষক বাদল উদ্দিন ইতোমধ্যে দুজনের নামে মামলা করলেও ওসির পরামর্শে আসামির তালিকা থেকে বাদ পড়েছে দুই কনস্টেবলের নাম।

 

Comments

The Daily Star  | English

Interim govt must not be allowed to fail: Tarique addresses BNP rally

Thousands join BNP rally from Nayapaltan to Manik Mia Avenue

3h ago