জো বাইডেনের ভাষণে গুরুত্ব পেল গাজা-ইউক্রেন ইস্যুসহ যে ৫ বিষয়

তৃতীয় স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিচ্ছেন জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স
তৃতীয় স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিচ্ছেন জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার বর্তমান মেয়াদে তৃতীয় বারের মতো স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিয়েছেন। নভেম্বরের নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে দেওয়া এই বক্তব্যে বাইডেন অর্থনীতিতে তার প্রশাসনের সাফল্য তুলে ধরেন এবং নিজেকে তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে এগিয়ে রাখার জন্য নানা যুক্তি উপস্থাপন করেন।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কংগ্রেসের যুগ্ম অধিবেশনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট বাইডেন বেশ কয়েকবার ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। তবে একবারও ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, 'আমার পূর্বসূরি।'

বাইডেন বলেন, 'আজ আমার লক্ষ্য কংগ্রেসকে জাগিয়ে তোলা এবং মার্কিন জনগণকে সতর্ক করা, কারণ এখনকার সময়টা স্বাভাবিক নয়।'

'স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র উভয়ই আক্রান্ত হয়েছে এবং তা দেশে ও দেশের বাইরে, উভয় ক্ষেত্রে', হুশিয়ারি দেন বাইডেন। 

এই বক্তব্যের মাধ্যমে বাইডেন তার অবস্থান পরিষ্কার করার সুযোগ পান।

আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী হিসেবে বাইডেনের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত হলেও অনেক ভক্ত-সমর্থক-নেতা-কর্মীরাও দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে কতটুকু উপযুক্ত, তা নিয়ে সন্দিহান। এ ছাড়া, গাজায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক ও নির্বিচার হামলায় অসংখ্য নিরীহ মানুষের প্রাণহানির পরও দেশটির প্রতি বাইডেন প্রশাসনের অবিচল সমর্থনও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

এখানে বাইডেনের বক্তব্যের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হল

গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বাড়াতে অস্থায়ী জেটি স্থাপন করবে যুক্তরাষ্ট্র

দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুরা  একটি দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহ করছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুরা একটি দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহ করছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স

বাইডেন জানিয়েছেন, তার প্রশাসন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উপকূলীয় অঞ্চলে একটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করবে। যার ফলে, গাজায় আরও বেশি পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে পারবে।

বাইডেন বলেন, এই জেটির মাধ্যমে 'জাহাজে করে বিপুল পরিমাণ খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অস্থায়ী আশ্রয় নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে আসা যাবে।'

তবে এই জেটি নির্মাণে কতদিন সময় লাগবে, তা জানাননি বাইডেন।

এক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাষ্ট্র উত্তর গাজার হাজারো ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে বিমান থেকে এয়ার ড্রপের মাধ্যমে ৩৬ হাজার খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করেছে।

বাইডেনের সমালোচকরা জানান, গাজায় জেটি নির্মাণের এই পরিকল্পনা এ অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের সমস্যা সমাধান করতে ব্যর্থ হবে। এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে এবং তারা এই কৌশল অব্যাহত রাখবে।

ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি এখন বিশ্ব নেতাদের কাছে গোলাবারুদ চেয়ে বেড়াচ্ছেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি এখন বিশ্ব নেতাদের কাছে গোলাবারুদ চেয়ে বেড়াচ্ছেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে বড় আকারে সহায়তা করে যাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ইউক্রেনে বড় আকারে মার্কিন সহায়তা পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে বাইডেন ইউক্রেনের ত্রাণ প্যাকেজের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সিনেটের প্রতি অনুরোধ জানান।

বাইডেন বলেন, 'প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আমি দীর্ঘ দিন ধরে চিনি, এবং তার প্রতি আমার বার্তা খুবই সহজ: আমরা চলে যাচ্ছি না। আমরা মাথা নত করব না। আমি মাথা নত করব না।'

কিছুদিন আগে ট্রাম্প রাশিয়ার উদ্দেশে বলেছিলেন, ন্যাটো জোটের যেসব দেশ প্রতিরক্ষায় যথেষ্ট পরিমাণ খরচ করে না, তাদেরকে 'রাশিয়া চাইলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে'। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বাইডেন বলেন, 'এক সাবেক প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেছেন। তিনি রুশ নেতার কাছে মাথা নত করেছেন।'

স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে বাইডেন বলেন, 'আমার মতে এটা নিন্দনীয়। ভয়ানক ও অগ্রহণযোগ্য।'

ট্রাম্পের বিপরীতে নিজেকে ভালো বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেন বাইডেন

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স

বাইডেন দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে মার্কিন গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন, যেখানে তার প্রতিপক্ষ হল গণতন্ত্র-বিরোধী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (মাগা) প্রচারণা। বৃহস্পতিবারের বক্তব্যেও এ বিষয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেন বাইডেন।

আল জাজিরার সাংবাদিক কিম্বারলি হলকেট জানান, এই ভাষণে বাইডেন অন্তত ১০ বার ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করেন। তবে প্রতিবারই তিনি 'আমার পূর্বসূরি' কথাটি ব্যবহার করেন।

হলকেট বলেন, 'বাইডেনের বক্তব্য শুনে মনে হয়নি তিনি স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিচ্ছেন, মনে হচ্ছিল তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত।'

'বিষয়টা খুবই অদ্ভুত যে তিনি (বাইডেন) শুধু একবার নয়, বরং পুরো ভাষণজুড়ে এবং উল্লেখিত প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ট্রাম্প নিয়ে কথা বলতে থাকেন', যোগ করেন কিম্বারলি।

গর্ভপাত ও এ সংক্রান্ত অধিকার

যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতরনিষিদ্ধের পর উল্লাস করছেন গর্ভপাতবিরোধীরা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতরনিষিদ্ধের পর উল্লাস করছেন গর্ভপাতবিরোধীরা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টে রো বনাম ওয়েড মামলার রায় নাকচ করার ফলে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে রক্ষণশীলরা আইনগতভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার সুযোগ পান।

রিপাবলিকান পার্টির দখলে থাকা কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এ ধরনের আইন পাস হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, ডেমোক্র্যাট ভোটারদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়।

বৃহস্পতিবার রাতে বাইডেন অঙ্গীকার করেন, তিনি সারা দেশে আবারও গর্ভপাতের বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নেবেন।

তিনি বলেন, 'যদি মার্কিন জনগণ আমাকে এমন একটি কংগ্রেস দেয়, যারা (সন্তানজন্মদান বিষয়ে) সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকে সমর্থন জানায়, তাহলে আমি রো বনাম ওয়েড মামলার রায় পুনর্বহাল করে সে অনুযায়ী আইনও পাস করব।'

তিনি গর্ভপাতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্যেও ট্রাম্পকে দায় দেন। ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে তিনজন রক্ষণশীল

মার্কিন অর্থনীতি

মার্কিন অর্থনীতি। প্রতীকী ছবি: রয়টার্স
মার্কিন অর্থনীতি। প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

বাইডেনের ভাষণের বড় অংশজুড়ে ছিল অভ্যন্তরীণ বিষয়, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার অর্থনীতিতে তার প্রশাসনের সাফল্য।

বাইডেন দাবি করেন, কোভিড-১৯ মহামারির পর প্রায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তার তৈরি করা নীতিমালা সবচেয়ে কার্যকর হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সারা বিশ্বের ঈর্ষার কারণ, মাত্র তিন বছরে আমরা ১ কোটি ৫০ লাখ চাকরি

তিনি মার্কিন শ্রম ইউনিয়ন ও মধ্যবিত্তদের প্রশংসা করেন এবং অঙ্গীকার করেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে উপযুক্ত কর আদায় নিশ্চিত করবেন।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: A day of sharing for some, a day of struggle for others

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

51m ago