কাজে আসেনি ২৭২ কোটি টাকার প্রকল্প, ভৈরব নদ যেন বদ্ধ জলাশয়

প্রকল্পের আওতায় ছিল যশোর সদর উপজেলা, অভয়নগর, চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলার ২২ হাজার হেক্টর এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণসহ ভৈরব নদ ও আশেপাশের খালগুলো খননের মাধ্যমে মাছ চাষের উন্নয়ন।
ভৈরব নদ
২৭২ কোটি টাকা খরচ করেও ভৈরব নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা যায়নি। ছবি: সংগৃহীত

যশোরের কয়েকটি এলাকায় ভৈরব নদের স্রোত থাকলেও, বেশিরভাগ অংশ স্রোতহীন। নদটি এখন যেন বদ্ধ জলাশয়। ২৭৯ কোটি টাকার প্রকল্পও নদের জলাবদ্ধতা দূর করতে পারেনি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ জুলাই ২৭২ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার টাকায় পাঁচ বছর মেয়াদী 'ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের' কাজ শুরু হয়।

পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ করা হয়। ২৭৯ কোটি ১২ লাখ ৭৫ হাজার প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, ভৈরবের নাব্যতা বাড়িয়ে নৌ-যোগাযোগের উন্নয়ন, মাথাভাঙ্গা নদের সঙ্গে ভৈরবের সংযোগ, ভৈরব নদ ও আশেপাশের খালগুলো খনন করে নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন।

প্রকল্পের আওতায় ছিল যশোর সদর উপজেলা, অভয়নগর, চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলার ২২ হাজার হেক্টর এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণসহ ভৈরব নদ ও পার্শ্ববর্তী খালগুলো খননের মাধ্যমে মাছ চাষের উন্নয়ন।

যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র ভৈরব নদের তীরে ২০০ মিটার এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়েছে সাত কোটি ৮০ লাখ টাকায়।

গত বছর জুনে নাব্যতা বাড়ানো, নৌযান চলাচল ও প্রবাহ সৃষ্টির জন্য নদের খননকাজ শেষ হয়। কোটি কোটি টাকা খরচ করেও নদটিকে প্রবাহমান করা যায়নি। কচুরিপানায় ভরাট হয়ে গেছে নদটি।

যশোর শহরের বারান্দিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদের মাঝখানের অংশে খনন হয়নি। পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া থেকে চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার নদ পুনর্খনন হয়েছে। ড্রেজিং করা হয়েছে বসুন্দিয়া থেকে আফ্রা ঘাট পর্যন্ত চার কিলোমিটার।

নদের পাড়ে গড়ে ওঠা ক্লিনিক-হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য ও আশেপাশের ভবনের শৌচাগারের বর্জ্য পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি ফেলা হচ্ছে ভৈরব নদে। নদের পানি এখন কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত।

ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান বলেন, 'নদের জন্য এত টাকা খরচ করে লাভ হলো না। স্রোত নেই, পানির রং কুচকুচে কালো। আগে যেমন ছিল এখন তেমনই আছে। নদে পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানি আছে।'

যশোর শহরের খয়েরতলা থেকে ক্যান্টনমেন্টের বাম পাশ দিয়ে প্রবাহমান ভৈরব নদ। পাঁচ কিলোমিটার এগিয়ে চুড়ামনকাটি এলাকা। এখানে কিছুটা ব্যবধানে নদের ওপর তৈরি হয়েছে দুটি সেতু। এর একটি পুরোনো, অপরটি নতুন। পুরোনো সেতু ভেঙে তৈরি করা হবে নতুন সেতু।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর সদরের নিমতলা মোড় থেকে কচুরিপানা আটকে মাছ চাষ করা হচ্ছে। নিমতলা ছাড়িয়ে সামনে দাইতলা। দাইতলা থেকে রূপদিয়া হয়ে ভৈরব গেছে রাজারহাটে। কচুরিপানায় ভরে আছে নদের এই অংশ।

ভৈরব নদের পাড়ের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, নদের দুই পাশে পানি বেশি, মাঝখানে কম। সেতুর পাশের মাটি কাটা হয়নি খননের সময়।

খননের আগে আফ্রা ঘাট থেকে ছাতিয়ানতলা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকায় বেশ জোয়ার ছিল। এখন জোয়ারের গতি অনেক কম।

এ নদের ওপর মোট ৫২টি সেতু আছে। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ২৩টি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের ১৯টি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের তিনটি, সড়ক ও জনপথের পাঁচটি, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নির্মাণ করা একটি করে সরু সেতু আছে।

যশোর ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার টাকা খরচ করে ভৈরব নদ সংস্কার করলেও নাগরিকরা সুফল পাচ্ছেন না। আমাদের দাবি ছিল, নৌ-চলাচল করার উপযোগী করে ভৈরব নদ খনন করা। নদের ওপরে থাকা অপরিকল্পিত ৫২টি সেতু সংস্কার করতে হবে। দর্শনায় মাথাভাঙ্গার সঙ্গে ভৈরব নদের সংযোগ দিতে হবে।'

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভৈরব নদ খনন করা হয়েছে সঠিকভাবে। নদের ওপর নির্মিত অপ্রশস্ত ৫২টি সেতুর কারণে জোয়ার আসছে না। সরু সেতুগুলো দ্রুত সম্প্রসারণে ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Babar Ali: Another Bangladeshi summits Mount Everest

Before him, Musa Ibrahim (2010), M.A. Muhit (2011), Nishat Majumdar (2012), and Wasfia Nazreen (2012) successfully summited Mount Everest. Mohammed Khaled Hossain summited Mount Everest in 2013 but died on his way down

22m ago