লালন উৎসব আজ বিকেল ৩টায়, সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে ভক্তদের অসন্তোষ

লালন উৎসব
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন সাঁইয়ের আখড়াবাড়ি। ছবি: আনিস মণ্ডল/স্টার

রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় এ বছর সংক্ষিপ্ত হচ্ছে লালন স্মরণোৎসব। তিন দিনের অনুষ্ঠান এক দিনে হওয়ায় বাদ যাচ্ছে অনেক আনুষ্ঠানিকতা। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন লালনের ভক্ত-অনুসারীরা।

তারা বলছেন, রেওয়াজ অনুযায়ী সাধুসঙ্গে তিনটি সেবাগ্রহণের যে আচার, তা এবার ঠিকঠাক করা যাবে না।

ফকির লালন সাঁই ভক্তদের নিয়ে দোল পূর্ণিমা তিথিতে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে সাধুসঙ্গ করতেন। গানে গানে তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতেন। সেই রেওয়াজ মোতাবেক প্রতিবছর উদযাপিত হয় লালন স্মরণোৎসব।

সাধারণত দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যায় অধিবাসে রাখালসেবার মধ্য দিয়ে সঙ্গ শুরু হয়। পরদিন সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণসেবা করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া তিন দিনব্যাপী লালন একাডেমি মাঠে বাউলমেলা ও লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

গতকাল শনিবার লালন একাডেমিতে কোর কমিটির বৈঠক হয়। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির আহ্বায়ক এহেতেশাম রেজা এতে সভাপতিত্ব করেন। পরে তিনি বলেন, 'রমজানের পবিত্রতা ও গাম্ভীর্যতা রক্ষায় একাডেমির এডহক কমিটিসহ সবাই প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি এবং স্মরণোৎসব এক দিনব্যাপী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

এবার লালনমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না করে শুধু আলোচনাসভা ও সাধুদের সেবাগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সে সময় সাধু-বাউলরা জেলা প্রশাসককে ঘিরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

প্রবীণ সাধু নহির শাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু প্রশাসনের মাধ্যমে সাঁইজির আখড়াবাড়ি পরিচালিত হচ্ছে, অতএব তাদের সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হবে। আমরা মূল ভুলে নকল নিয়ে ব্যস্ত থাকছি।'

রেওয়াজ অনুযায়ী আচার-অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না জানিয়ে এই সাধক আরও বলেন, 'অনুষ্ঠানটা ২৪ ঘণ্টাব্যাপী হওয়া উচিত ছিল। রোববার বিকেলে অধিবেশন শুরু হবে, পরদিন বিকেলে অধিবেশন শেষ হবে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা পূর্ণিমা তিথিটা বিরাজ করে। একদিনে তিনটি সেবা হবে না। সেবা তো সময়ান্তে হবে। সময় হাতে না পেলে সেবা কীভাবে হবে?'

লালন একাডেমির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান সাংবাদিকদের অনুষ্ঠানসূচি জানান। সূচি অনুযায়ী, আজ রোববার বিকেল ৩টায় আলোচনাসভা হবে একডেমির অডিটরিয়ামে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সন্ধ্যায় সাধু-বাউল পায়েস মুড়ি দিয়ে রাখাল সেবা দেওয়া হবে। এ ছাড়া রাতে ভাতমাছ, ডাল-সবজি ও দই দিয়ে সেবা দেওয়া হবে।

সাধু-বাউলদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তাইজাল বলেন, 'রমজানের মধ্যে সাধু-বাউলদের সেবা দিতে দিনের বেলায় আড়ম্বরভাবে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে। সে কারণে আয়োজন সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।'

গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত খুব বেশি সাধু-ফকিরদের আখড়াবাড়িতে আনাগোনা দেখা যায়নি। কলকাতা থেকে আসা কার্তিক চন্দ্র বণিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লালন মানবতার শিল্পী ছিলেন। এখানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Rawhide market disappoints again despite govt price hike

The Ministry of Commerce had increased the price of cowhide in Dhaka by Tk 5-10 per square foot, setting the official rate at Tk 60-65

11m ago