আজ আন্তর্জাতিক শূন্য বর্জ্য দিবস

বর্জ্য ছুড়ে ফেলা মানে বর্জ্য থেকে মুক্তি নয়

বর্জ্য
কোনো বর্জ্য ছুড়ে ফেলা মানে বর্জ্য থেকে মুক্তি নয়, বরং ফেলার আগে ভাবতে হবে তা কোথায় গিয়ে পড়বে, এর শেষ পরিণতিই বা কী। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

খাবারের উচ্ছিষ্ট থেকে খবরের কাগজ, চকলেটের প্যাকেট, ছেঁড়া টি-শার্ট বা নষ্ট মোবাইল ফোন—ব্যবহার শেষে সব কিছুই পরিণত হয় বর্জ্যে। তবে কিছু বস্তুগত বর্জ্য শত বছরেও পরিবেশ থেকে নিঃশেষ হয়ে যায় না। এসব বর্জ্যের আছে দীর্ঘস্থায়ী পরিবেশগত প্রভাব।

আমাদের ফেলে দেওয়া এসব বর্জ্য ময়লার ভাগাড়গুলোতে জমে পাহাড়ের আকার নিয়েছে। নদী, সমুদ্র, মরুভূমি এমনকি মহাকাশেও জমা হচ্ছে বর্জ্য। এটি মানবজাতির বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপর বর্জ্যের ক্রমবর্ধমান ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচি (ইউএনইপি) ও জাতিসংঘের মানব বসতি কর্মসূচির (ইউএন-হ্যাবিট্যাট) উদ্যোগে ২০২২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩০ মার্চকে ইন্টারন্যাশনাল ডে অব জিরো ওয়েস্ট বা 'আন্তর্জাতিক শূন্য বর্জ্য দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ প্রথমবারের মতো দিবসটি উদযাপিত হয়।

বর্জ্য উৎপাদন কমানো, শক্তিশালী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সার্কুলার ইকোনমি প্রবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনে উৎসাহিত করা এই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়া সরকার, সুশীল সমাজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়াসহ অন্যদের মধ্যে শূন্য বর্জ্য উদ্যোগের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি উদযাপনে সবাইকে সম্পৃক্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়।

ডেটা বিশ্লেষণ ওয়েবসাইট স্ট্যাটিসটিকার হিসাব অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শুধু মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়েস্ট উৎপাদন প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়ে তিন দশমিক চার বিলিয়ন টনে গিয়ে দাঁড়াবে।

বিশ্বের প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ এসব বর্জ্যের নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা সুবিধার বাইরে আছে এবং তুলনামূলকভাবে এসব বর্জ্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির তথ্য অনুসারে, প্রতিবছর দুই বিলিয়ন টনেরও বেশি মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়েস্ট উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ (ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট) বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা হয় না।

এ ছাড়া, আমাদের দেশে মিউনিসিপ্যাল বর্জ্যের মধ্যে ১০ শতাংশই প্লাস্টিক। এই ১০ শতাংশের মধ্যে আবার ৪৮ শতাংশ যায় ভাগাড়ে। বাংলাদেশের ভাগাড়গুলোয় ময়লা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ১৫ শতাংশ প্লাস্টিক যায় নদী ও খালগুলোয়। আর তিন শতাংশ যায় এমন জায়গায়, যেখানে আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর ১২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে পড়ছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের তথ্য অনুসারে, প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণের কারণে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে।

জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচির (ইউএনইপি) হিসাব বলছে, প্রতিদিন প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। পরিমাণের দিক থেকে এটি বিশ্বে পঞ্চম। এই বর্জ্যের উৎস গঙ্গা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা হয়ে এসব বর্জ্য সাগরে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এখনই যদি প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তাহলে ২০৫০ সালে সাগরে যত মাছ থাকবে, তারা চেয়ে বেশি থাকবে প্লাস্টিক বর্জ্য।

দ্য ওয়ার্ল্ড কাউন্টস ডটকমের তথ্য অনুসারে, প্রাত্যহিক জীবনে মানুষ যেসব জিনিস কেনে তার ৯৯ শতাংশই ছয় মাসের মধ্যে ব্যবহারের পর ফেলে দেয়। এ জাতীয় পণ্য একাধিকবার ব্যবহারের মাধ্যমে বর্জ্য সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্জ্য সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যবহারের পর রিসাইকেল করা যাবে এমন পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানো। পাশাপাশি পরিবেশের বিপর্যয় রক্ষায় খাদ্যাভাসে পরিবর্তন, একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করা যায় এমন পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো।

এ ছাড়া বর্জ্য সমস্যা সমাধানে সামগ্রিক নীতি-পদ্ধতির পাশাপাশি যেটার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো স্পষ্ট নীতিমালা, সামাজিক প্রণোদনা ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে সচেতনতা সৃষ্টির মতো বিষয়গুলোর স্মার্ট সমন্বয়।

কোনো বর্জ্য ছুড়ে ফেলা মানে বর্জ্য থেকে মুক্তি নয়, বরং ফেলার আগে ভাবতে হবে তা কোথায় গিয়ে পড়বে, এর শেষ পরিণতি কী?

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

8h ago