উড়ালসড়কের র‌্যাম্পের জন্য কাটা হবে সিআরবির ৪৬ গাছ

কাটার জন্য গাছগুলো ইতোমধ্যে মার্কিং করা হয়েছে। ছবি: সংর্গৃহীত

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প (গাড়ি ওঠার পথ) নির্মাণ করার জন্য সিআরবি এলাকার ৪৬টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

ইতোমধ্যে বনবিভাগ থেকে গাছ কাটার অনুমতিও পেয়েছে সংস্থাটি। যেকোনো দিন গাছগুলো কাটা হতে পারে বলে বনবিভাগ ও সিডিএ সূত্রে জানা গেছে।

গত ১৯ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ গাছের মার্কিং শেষ করে সিডিএকে একটি বনজদ্রব্য আহরণের লাইসেন্স দিয়েছে।

ওই লাইসেন্সের বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, ১১টি রেইনট্রি কড়ই গাছ, চারটি ডিসি গাছ, দুইটি ইপিল, একটি কৃষ্ণচূড়া, তিনটি মেহগনি, একটি পেয়ারা গাছ কাটা হবে। এ ছাড়া ২৪টি অন্যান্য জ্বালানি গাছ কাটতে হবে।

বনবিভাগের ফরেস্টার পিংকি কুমার ধর এই গাছগুলোর মার্কিং করেছেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এই র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য শতবর্ষী দুইটি রেইনট্রি গাছের ঢাল কাটতে হবে। বাকি গাছগুলো এখনো তেমন বড় হয়নি।

লাইসেন্সে গাছগুলোর আনুমানিক পরিমাণ ৫২৯ ঘনফুট এবং ৭৯ হাজার ৬০৩ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০২১ সালের একটি জরিপের হিসাব অনুযায়ী, সিআরবি এলাকায় মোট ২২৩টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান অপিনিয়ন (ইকো) নামে একটি বেসরকারি সংগঠন জরিপটি করেছিল।

উল্লেখ্য, সিআরবিকে নিজেদের প্রণীত ড্যাপে হেরিটেজ এরিয়া ঘোষণা করেছে সিডিএ। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত ড্যাপে সিআরবির কোনো অংশ বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যাবে না এবং সেখানে কোনো উঁচু স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না মর্মে গেজেট প্রকাশ করে সিডিএ।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্পের প্রয়োজনে গাছগুলো কাটতে হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যত কম গাছ কাটা যায়।'

প্রকল্পের পরামর্শক প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইকবাল ডেইলি স্টারকে বলেন, আমরা নিয়ম মেনে বনবিভাগ থেকে গাছ কাটার অনুমতি নিয়েছি। আইন অমান্য করে কিছু করা হচ্ছে না।

এদিকে, টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত র‍্যাম্পটি নির্মাণে ১৪ শতক জায়গা চেয়ে রেলওয়েকে ২৫ মার্চ চিঠি দিয়েছে সিডিএ। কিন্তু এখনো ভূমি সিডিএকে হস্তান্তর করেনি রেলওয়ে। এর মধ্যে তোড়জোড় করে গাছ কেটে ফেলতে চাচ্ছে সংস্থাটি।

রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল) ভূমি সম্পত্তি বিভাগের একজন কর্মকর্তা ডেইলি স্টার বলেন, তারা (সিডিএ) আবেদন করেছে। মাঠ পর্যায়ে আবেদনটি যাচাইয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এখনো তাদের নামে জমিটি লিজ দেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম কায়সার ডেইলি স্টারকে বলেন, আমরা আইন অনুযায়ী লাইসেন্স দিয়েছি। কিন্তু জায়গাটা রেলওয়ের এবং নির্মাণকারী সংস্থা সিডিএ। ফলে সেখানে গাছ কাটলে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই। চাইলে ভূমি মালিক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।

এমন সময়ে গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ, যার কিছুদিন আরেক সরকারি সংস্থা রেলওয়ে আন্দোলনের মুখে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল।

গাছ কাটা হলে তা প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়েছে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন।

গ্রিন ফিঙ্গারস বাংলাদেশের কো-ফাউন্ডার রিতু পারভী ডেইলি স্টারকে বলেন, সিআরবি হেরিটেজ ঘোষিত এলাকা। সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ করতে চাইলেও চট্টগ্রামবাসীর আন্দোলনের কারণে রেলওয়ে পিছু হটেছে। তাই র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য গাছ কাটার পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধেও আমরা আন্দোলন করব। ইতোমধ্যে সোমবার আমরা সিআরবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Emerging Cocaine Transit Hub

Bangladesh now a transit for cocaine smuggling

A sharp rise in the smuggling of cocaine, which mainly enters Bangladesh from African and South American countries, has become a new headache for authorities.

16h ago