মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের শোষণের অভিযোগ জাতিসংঘের

অনেক অভিবাসী মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেখেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ নেই এবং প্রায়ই তাদের ভিসাহীন থাকতে বাধ্য করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। তারা অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণের হাত থেকে রক্ষা করতে মালয়েশিয়াকে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ শুক্রবার দেশটির স্থানীয় অনলাইন ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, তারা বাংলাদেশিদের সঙ্গে প্রতারণা সম্পর্কিত এক প্রতিবেদন দেখে হতাশ হয়েছেন, মালয়েশিয়ায় কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে এসে যাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। 

এ বিবৃতিতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে পরিচালিত অপরাধমূলক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতারণামূলক নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অভিবাসীরা প্রতারিত হচ্ছেন, কারণ তাদের ভুয়া কোম্পানি দ্বারা নিয়োগ করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য করা হয়েছে, যা তাদের ঋণের জালে বন্দি করেছে।

তারা উল্লেখ করেন যে, অনেক অভিবাসী মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেখেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ নেই এবং প্রায়ই তাদের ভিসাহীন থাকতে বাধ্য করা হয়। যার ফলে তাদের গ্রেপ্তার হয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে দুর্ব্যবহার এবং নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

এ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় কয়েক মাস বা তার বেশি সময় ধরে কর্মহীন বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবস্থা খুবই নাজুক এবং অসম্মানজনক।

মালয়েশিয়াকে অভিবাসীদের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের শোষণ, অপরাধীকরণ এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রক্ষা করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। 

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমরা রিপোর্ট পেয়েছি যে, উভয় সরকারের কিছু উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এটা অগ্রহণযোগ্য এবং এর শেষ হওয়া দরকার। আর এই শোষণমূলক নিয়োগের জন্য অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে এসব বেসরকারি ব্যবসা ও প্রতারণামূলক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত 'অপর্যাপ্ত'।

জাতিসংঘের এ দাসত্ব বিষয়ক বিশেষ রিপোর্টটি তোমোয়া ওবোকাতা কর্তৃক জারি করা, যিনি পাচার সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক। এ ছাড়া, সিওভান মুল্লালি, যিনি অভিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক, গেহাদ মাদি এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বিশেষ এ রিপোর্টটি তৈরি করেছেন।

এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কিছু অভিবাসী তাদের শোষণের কথা জানানোর কারণে কঠোর প্রতিশোধের সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মালয়েশিয়াকে শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা গ্রহণে আরও কার্যকরভাবে শ্রমিক অভিবাসন পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তারা আরও বলেছেন, মালয়েশিয়াকে অবশ্যই ইউএন গাইডিং প্রিন্সিপালস অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের অধীনে বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হবে এবং মালয়েশিয়াকে অবশ্যই শোষণের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্ত, সুরক্ষা এবং সহায়তা করার জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করতে হব, ব্যক্তি পাচারের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনি সুরক্ষা কার্যকর করতে হবে এবং দেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে হবে।

তারা এর আগে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলেও জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ এ দলটি।

গত অক্টোবরে অভিবাসী অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধীনস্থ সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস অব দ্য হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটসের (ওএইচসিএইচআর) কাছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন।

শ্রমিকদের পরিস্থিতিকে 'ভয়াবহ' হিসেবে বর্ণনা করে তিনি তাদের দরিদ্র জীবনযাত্রার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে আবদ্ধ কোয়ার্টার, দুর্বল স্যানিটেশন ও সীমিত খাবার এবং কীভাবে তারা অতিরিক্ত নিয়োগ ব্যয়ের কারণে ঋণী হয়ে পড়েছেন।

অ্যান্ডি হল দাসপ্রথা, পাচার, অভিবাসী এবং দারিদ্র্যের বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্টারদের কাছে নথিযুক্ত অভিযোগও পাঠিয়েছিলেন, বিশেষ করে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এবং পিয়া ওবেরয়, যিনি জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিকের মাইগ্রেশন এবং মানবাধিকার বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা।

Comments

The Daily Star  | English

Abdul Hamid returns home after treatment in Thailand

Two police officials were withdrawn and two others suspended for negligence in duty regarding the former president's departure from the country

5h ago