প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফরে ৫ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থাইল্যান্ড সফরকালে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রসারে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক ও একটি লেটার অব ইন্টেন্ট সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
পাঁচটি দলিল সই ও বহুমুখী সহযোগিতার বিষয়ে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা তাভিসিনের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে সরকারি সফর এবং ইউনাইটেড নেশনস ইকনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগদান করবেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, '২৬ এপ্রিল থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউজে দুদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সৌজন্যে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।'
তিনি বলেন, 'দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তির পাশাপাশি জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর জন্য একটি লেটার অভ ইন্টেন্ট সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের রাজপ্রাসাদে রাজা মহা ভাজিরা-লংকর্ন ফ্রা ভাজিরা-ক্লাচাও-উহুয়া এবং রাণী সুধিদা বজ্রসুধা-বিমলা-লক্ষণের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য ''মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি''র পর্যালোচনার পাশাপাশি অন্যান্য অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষত বিনিয়োগ, পর্যটন, জ্বালানি, স্থল এবং সমুদ্র সংযোগ, উন্নয়ন প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হবে।'
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে মানব-সম্পদ উন্নয়ন, বৌদ্ধ সার্কিট পর্যটন প্রচারণা, পর্যটন অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যৌথ কার্যক্রম ও দক্ষতা বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সুবিধা অর্জন করতে পারবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'পর্যটন শিল্পে এই সহযোগিতার ফলে উভয় দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।'
তিনি বলেন, 'এ ছাড়া বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি দেওয়া হলে উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর হবে এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও প্রশিক্ষণে সরকারী কর্মকর্তারা সময়মতো যোগদান করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে আসিয়ানের 'সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার' হিসেবে মর্যাদালাভে বাংলাদেশের আবেদনের বিষয়ে আরও জোরালোভাবে অনুরোধ করা এবং রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন ও মিয়ানমারে চলমান সংঘাত নিরসনে থাইল্যান্ডসহ আসিয়ান সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে আরও বেশি সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি আরও জানান, 'ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে ২৫ এপ্রিল এশীয় প্রশান্ত অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে জাতিসংঘের এজেন্ডা ২০৩০ ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বক্তব্য প্রদান করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।'
তিনি আরও জানান, 'একই দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইউএনএসক্যাপের নির্বাহী সচিব সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।'
স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশ থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীর এ সরকারি সফরটি সফল এবং ফলপ্রসূ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সচিবদের সফর ও সম্মেলনে যোগদানের কথা রয়েছে।
হাছান মাহমুদের সঙ্গে কিরগিজস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে আসা কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী আভাজবেক আতাখানভ সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সাক্ষাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান দুই দেশের মধ্যে প্রথম ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) সফলভাবে সমাপ্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর জন্য কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির প্রতি ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাবেক ইউএসএসআরের অংশ হিসেবে কিরগিজ জনগণের মূল্যবান সমর্থনের কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে। তিনি কিরগিজস্তানকে পোশাক, ওষুধ, পাটজাত পণ্য, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল, সিরামিক, আইটি পণ্য ও সেবা আমদানির অনুরোধ জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে ও ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধে কিরগিজস্তানের সহায়তা কামনা করেন।
একইসঙ্গে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট সইয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন দান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দেশের প্রার্থীদের সমর্থনের জন্যও কিরগিজস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
বৈঠকে কিরগিজ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আভাজবেক আতাখানভ কৃষিখাতসহ বিভিন্ন অঙ্গনে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং তার দেশে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে বলে জানান।
তিনি জানান, কিরগিজস্তান বিপুল বিদ্যুৎ শক্তি ও বছরে প্রায় ২২ থেকে ২৪ টন সোনা উৎপাদন করছে যেখানে ব্যাপক জনশক্তি নিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
কিরগিজস্তান ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট সইয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে বাংলাদেশের সমর্থন প্রত্যাশা করে উল্লেখ করলে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আভাজবেক আতাখানভকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ 'রিসিপ্রোসিটি'র ভিত্তিতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
Comments