কুষ্টিয়া

তাপদাহের মধ্যে সড়কের পাশের ১০ বছর বয়সী গাছ কাটার সিদ্ধান্ত, স্থানীয়দের ক্ষোভ

সড়কের পাশে ১০ বছর আগে রোপণ করা গাছগুলো কাটার জন্য চিহ্নিত করে রেখেছে বন বিভাগ। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সামাজিক বনায়নের আওতায় ১০ বছর আগে রোপণ করা তিন হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ।

খালের পাড় ধরে চলে যাওয়া সড়কে এসব গাছ ছায়া দিয়ে যাচ্ছে এতদিন ধরে। সড়কে ছায়া দেওয়া এসব গাছ কাটার বিরোধিতা করছেন স্থানীয়রা।

কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মমাফিক এসব গাছ কাটা হচ্ছে। 

সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কুমারখালীর লাহিনী বাঁধ বাজার থেকে চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের বেশি এই সড়কের পাশে ১০ বছর আগে রোপণ করা গাছগুলো কাটার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।

গাছগুলোর বেশিরভাগই আকাশমনি, গামারি, বাবলা জাতীয় বনজ গাছ।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়কের এই অংশে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল। 

স্থানীয় উপকারভোগী ও বন বিভাগ ছিল গাছগুলোর দেখভালের দায়িত্বে।   

স্থানীয় চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাঁধ বাজার থেকে চাপড়া বোর্ডঘর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার তিন সহস্রাধিক গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ। এই চলমান দাবদাহের ভেতর গাছগুলো কাটা কোনোভাবেই উচিত হবে না।'

খাল পাড় দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন ফারুক হোসেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাঠের লোকজন কাজের ফাঁকে এসব গাছের ছায়ায় বসতে পারে। গাছ কাটলে তাদের কষ্ট হবে। পথচারীদেরও পুড়তে হবে রোদে।'

এসব গাছ কাটার কারণ জানতে কুষ্টিয়ার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটা নির্দিষ্ট সময় পর সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে নতুন গাছের চারা রোপণ করা হবে, এটাই নিয়ম। শুধু কুষ্টিয়া নয়, দেশের সব জায়গায় একই নিয়মে চলছে।'

তিনি আরও বলেন, ২০১১ সাল থেকে এই সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় কুষ্টিয়ায় গাছ রোপণের কাজ হচ্ছে। নিয়মমতো গাছ কেটে আবার রোপণ করা হয়। কিন্তু এবারই হঠাৎ এত হইচই পড়ে গেছে।'

এই কর্মকর্তা বলেন, 'যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে, সেগুলোর মেয়াদ ১০ বছর। এই সময় শেষ হয়েছে। এখন গাছ কেটে আগামী জুনে নতুন চারা রোপণ করা হবে।'

বন অধিদপ্তরের বক্তব্য, স্থানীয় দরিদ্র জনগণকে উপকারভোগী হিসেবে সম্পৃক্ত করে পরিচালিত হয় সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম। পরিকল্পনা করা ও বাস্তবায়ন, বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা, বনজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা, লভ্যাংশ বণ্টন ও নতুন করে বনায়ন সব কাজেই তারা জড়িত থাকে। 

ভূমিহীন, দরিদ্র, বিধবা ও দুর্দশাগ্রস্ত গ্রামীণ জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করাই সামাজিক বনায়নের প্রধান লক্ষ্য।

বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, 'যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে, তার ৫৫ ভাগই পাবেন উপকারভোগীরা। ২০ ভাগ ভূমি মালিকের অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে এই টাকা পাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পাঁচ ভাগ পাবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। বন বিভাগ রেভিনিউ পায় ১০ ভাগ। আর বাকি ১০ ভাগের টাকা দিয়ে পুনরায় বৃক্ষরোপণ করা হবে জুনে।'

তবে, গাছ কাটা নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় বন বিভাগ আপাতত গাছ কাটার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে বলে জানান তিনি।

কাশ্যপী চন্দ্র বলেন, 'ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করছি চলমান দাবদাহে গাছগুলো না কাটার জন্য।'

একই প্রকল্পের আওতায় গত ডিসেম্বরে কয়েক হাজার গাছ কাটা হয়েছে। সেই জায়গায় জুনে নতুন চারা রোপণ করা হবে বলেও জানান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। 

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

5h ago