‘পাচারের’ সময় ২০ স্বর্ণের বারসহ আটক ২, বৈধ কাগজ দেখানোয় ছাড়া

খুলশী থানা। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম শহর থেকে বাসে করে অবৈধভাবে রাজধানী ঢাকার শাঁখারীবাজারে স্বর্ণের বার পাচারের সময় দুজনকে আটক করেছিল নগরীর খুলশী থানা পুলিশ। 

পরে ওই বৈধ কাগজ দেখানো হলে ছাড়া পান স্বর্ণ বহনকারী ওই নারী ও পুরুষ, ফেরত দেওয়া হয় জব্দ স্বর্ণ।

স্বর্ণের বার জব্দের পর বৈধ কাগজ দেখিয়ে ছাড়া পাওয়ায় এ ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে বন্দরনগরীতে।

পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নগরীর ইমপেরিয়াল হাসপাতালের সামনে বিশেষ চেকপোস্টে একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ওই স্বর্ণের বারসহ দিপেন ও তার ভাবী পূর্ণিমাকে আটক করা হয়। 

তারা চট্টগ্রামের হাজারীগলির এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর হয়ে স্বর্ণের বারগুলো ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, ইমপেরিয়াল হাসপাতালের সামনে খুলশী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম দীপু, এএসআই ফারুক এবং এএসআই মানিকসহ পুলিশের চারজনের একটি টিম দায়িত্ব পালনের সময় ঢাকাগামী সেন্টমার্টিন পরিবহনের একটি বাস থামিয়ে তল্লাশি করেন। বাসে দিপেন ও তার ভাবী পূর্ণিমার কাছে ২০টি স্বর্ণের বার দেখতে পান তারা। 

কিন্তু, কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে সেখানে পুরো ঘটনার ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে তাদের দুজনকে খুলশী থানায় নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। থানার ওসি, জোনাল এসি, এডিসি, ও ডিসিকে বিষয়টি জানানো হয়।

থানায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা জানান, হাজারীগলির স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুমন ধরের স্বর্ণের চালান নিয়ে ঢাকার শাঁখারীবাজারে যাচ্ছেন তারা। 

স্বর্ণ আটকের খবর পেয়ে রাতেই থানায় হাজির হন সুমন ধর। তবে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে সময় চান তিনি। 

বিষয়টি নিয়ে রাতভর আলোচনার পর আজ মঙ্গলবার সকালে থানায় স্বর্ণের কাগজপত্র নিয়ে হাজির হন সুমন। সেই কাগজ যাচাইবাছাই শেষে দুপুরে ২০টি স্বর্ণের বার তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে হয় আটক দুজনকে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উত্তর জোনের উপ কমিশনার (ডিসি) মোখলেসুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা স্বর্ণ আটকের পর তাদের থানায় নিয়ে আসি। পরে স্বর্ণের মালিক সুমন ধর থানায় কাস্টমসের রাজস্বসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেন। বিমানবন্দরের কাস্টমের কাগজও ছিল।'

'থানার ওসি কাগজপত্র যাচাইবাছাই করে সবকিছু সঠিক পাওয়ায়, জব্দ করা স্বর্ণের বারগুলো জিডিমূলে ফেরত দেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন যে, ওই স্বর্ণগুলো ঢাকার আরেক ব্যবসায়ীর কাছে যাচ্ছিল। সুমন আমাদের বলেছেন, তারা এভাবেই পাঠান এগুলো,' বলেন মোখলেসুর।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নেয়ামত উল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুমন ধর প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা কাগজ দিয়েছেন। এগুলো এ বছরেই এসেছে। কাগজগুলো সঠিক পাওয়ায় তাদের মালামাল ফেরত দেওয়া হয়েছে।'

চট্টগ্রামে আগেও স্বর্ণের বার আটক করা হয়েছে। কিন্তু, জব্দ স্বর্ণ ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে আর শোনা যায়নি। 

গত বছরের ১৬ জুন কর্ণফুলী উপজেলায় পুলিশ চেকপোস্টে যাত্রীবাহী বাস থেকে সাড়ে ৯ কেজি ওজনের স্বর্ণের একটি চালান জব্দ এবং ২ নারীসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে আসা স্বর্ণের চালান নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের হাজারী গলির দিকে যাচ্ছিলেন এই ৪ জন।

২০১৯ সালের ৩ মার্চ চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে পাচারের সময় বিলাসবহুল জিপ ও ৬০০ পিস স্বর্ণের বারসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একইদিন চট্টগ্রামের সিআরবির সাতরাস্তা এলাকা থেকে একটি প্রাইভেটকারে পাচারের সময় ১০০ পিস স্বর্ণের বার জব্দ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে নগরীর রেয়াউদ্দিন বাজার থেকে এক অভিযানে ২৫০ পিস স্বর্ণের বার ও বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা জব্দ করে পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে চোরাচালান হয়ে আসা স্বর্ণ প্রথমে চট্টগ্রামে আসে এবং পরে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ঢাকায় যায়। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মিয়ানমার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে স্বর্ণের চালান কক্সবাজারে আসে এবং পরে স্বর্ণ বহনকারীর কাছে হস্তান্তর করা হয় যা চট্টগ্রাম ঘুরে তাঁতিবাজার হয়ে ভারতে পাঠানো হয়।
 

Comments

The Daily Star  | English

Trump orders to double tariffs on Indian imports to 50%

The tariff is set to take effect in three weeks and would be added on top of a separate 25% tariff entering into force on Thursday

32m ago