ফুটপাতের ‘যিশু’

লালবাতির নিষেধ ছিল না। তবু ঢাকার মতোই ‘ঝড়ের বেগে ধাবমান’ কলকাতা শহরকে এক লহমায় থামিয়ে দিয়েছিল টালমাটাল পায়ে রাস্তার এক পার থেকে অন্য পারে হেঁটে যেতে থাকা উলঙ্গ এক শিশু।
কারওয়ান বাজারের ফুটপাতে জন্মের কয়েক ঘণ্টা পর। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

লালবাতির নিষেধ ছিল না। তবু ঢাকার মতোই 'ঝড়ের বেগে ধাবমান' কলকাতা শহরকে এক লহমায় থামিয়ে দিয়েছিল টালমাটাল পায়ে রাস্তার এক পার থেকে অন্য পারে হেঁটে যেতে থাকা উলঙ্গ এক শিশু।

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে এমন একটি দৃশ্যই জন্ম দিয়েছিল 'কলকাতার যিশু' শিরোনামের সেই বিখ্যাত কবিতাটি। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী লিখেছিলেন, 'ভিখারি-মায়ের শিশু/কলকাতার যিশু, সমস্ত ট্রাফিক তুমি মন্ত্রবলে থামিয়ে দিয়েছ।'

কিন্তু মধ্যরাতে ফুটপাতে ছবির এই শিশুটির জন্ম আরেক চলিষ্ণু শহর ঢাকার কোনো কিছুই থামিয়ে দিতে পারেনি। তবে সদ্যজাত এই শিশুটি হাসি ফুটিয়েছে তার ছিন্নমূল বাবা-মায়ের ঠোঁটে।

শিশুটির বাবা সুমন এই নির্মম শহরে ভাঙারি কুড়িয়ে বিক্রি করেন। মা নুপুরও একই কাজ করতেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় তার সেই কাজে ছেদ পড়ে।

রাতের বেলায় ঢাকার লাখো নাগরিক যখন ফিরে যান আপন নিবাসে, তখন একদল সহায়-সম্বলহীন মানুষ বিছানা পাতেন সড়ক দ্বীপে, ফুটপাতে, গাছের তলায়। সুমন-নুপুরের মতো এদের প্রত্যেকেরই আছে আলাদা আলাদা গল্প। কেউ কেউ দু-তিন প্রজন্মও কাটিয়ে দিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। ছবির শিশুটির মতো যাদের অনেকের জন্ম ফুটপাতে, মৃত্যুও সেখানে।

শিল্পী কবীর সুমনের গানেও দেখা মেলে এমন সব মানুষের। তিনিও লেখেন, 'প্রথম দেখা ভিখারিনীর কোলে শহীদ শিশু/প্রথম দেখা আস্তাকুঁড়ে কলকাতার যিশু'।

আবার ফুটপাতের মতোই শহরের কোনো গাছের তলায় সংসার পাতা প্রান্তিক নাগরিকদের কথাও অনুষঙ্গ হয় সুমনের গানে—'গাছ তলাতেও সবই চলে, দুরন্ত প্রেম ঝগড়া ঝাঁটি/রাতের সোহাগ ভোরের লজ্জা দুপুর বেলার চড় চাপাটি'।

নিদারুণ দারিদ্র্য আর প্রবল বঞ্চনার ভেতর বাস করা নুপুরদের ফুটপাতের সংসারেও কিছু থেমে থাকে না। জীবন এখানেও বহমান। কিন্তু 'সদ্য হাঁটতে শেখার আনন্দে' তাদের শিশুরা কখনো কখনো পুরো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় পেতে চায়। আর টলমল পায়ে হেঁটে চলে 'পৃথিবীর এক-কিনার থেকে অন্য-কিনারে'।

গত ২৯ এপ্রিল কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং সংলগ্ন ফুটপাত থেকে ছবিটি তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী প্রবীর দাশ

Comments

The Daily Star  | English

Scorched at work: Global report revealed dire heat risks for workers

A joint report released by the World Health Organisation (WHO) and the World Meteorological Organisation (WMO) exposed the growing dangers of extreme heat on workers’ health and productivity worldwide.

34m ago