মিল্টনের আশ্রম থেকে উদ্ধার সেলিমের পেটের দাগ ‘দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা’য়

মো. সেলিমকে (৪০) ঢাকার মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ থেকে উদ্ধার করেছে পরিবারের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
মো. সেলিমকে (৪০) ঢাকার মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ থেকে উদ্ধার করেছে পরিবারের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ছয় মাস আগে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থেকে নিখোঁজ মানসিক ভারসাম্যহীন মো. সেলিমকে (৪০) ঢাকার মিরপুরে 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার' থেকে উদ্ধার করেছে পরিবারের সদস্যরা।

মো. সেলিম ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বৃ-পাঁচাশি গ্রামের মো. হাসিম উদ্দিনের ছেলে।

সেলিমের ছোট ভাই মাহিন মিয়া জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখে তারা সেলিমকে চিনতে পারেন। পরে ঈশ্বরগঞ্জ থেকে স্বজনরা ঢাকায় গিয়ে মিল্টন সমাদ্দারের 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার' আশ্রয়কেন্দ্র থেকে গত বৃহস্পতিবার তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সময় জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন কাগজ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হয়েছে।

মাহিন জানান, বাড়িতে আনার পর সেলিমের পেটের ডান পাশে বড় ক্ষতের দাগ দেখে তার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হতে পারে বলে তারা সন্দেহ করছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা তো হতদরিদ্র। টাকার অভাবে ভাইয়ের অঙ্গহানি হয়েছে কি না, সেটা পরীক্ষা করতে হাসপাতালে যেতে পারছিলাম না।'

সেলিমের ছোট বোন ফারজানা আক্তার জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে সেলিম সবার বড়। তার সংসারে দুটি মেয়ে আছে। তিনি এলাকায় বিভিন্ন কাজ করে পরিবারের ভরণপোষণ করতেন।

তিনি বলেন, 'বছরখানেক আগে ভাইয়ের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। মানসিক সমস্যার কারণে তিনি বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতেন। আবার কয়েক দিন পর ফিরে আসতেন। কিন্তু এবার তাকে খোঁজ করেও পাওয়া যাচ্ছিল না।'

সেলিমের স্ত্রী ফাতেমা জানান, ছয় মাস আগে এক সন্ধ্যায় তার স্বামী বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি।

তিনি বলেন, 'দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চলাতে পারছি না। ছোট মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। সেলিম আগে নিজে চলাফেরা করতে পারলেও এখন তার অন্যের সাহায্য লাগছে। পেটের দাগের বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেননি। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন।'

ফাতেমা জানান, তার স্বামীর মানসিক সমস্যা থাকলেও কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না। তার স্বামীর কোনো অঙ্গহানি হলে দায়ীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেন তিনি।

বড়হিত ইউপির চেয়ারম্যান মো. আজিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, মেডিকেল চেকআপ করাতে একজন ইউপি সদস্য ও একজন গ্রামপুলিশ সদস্যকে দিয়ে সেলিমকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম গতকাল।

সোনোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর বরাত দিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল রাজধানী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম জানান, পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে সেলিমের দুটি কিডনিই ভালো অবস্থায় আছে।

তার পেটের চারপাশে ক্ষতের চিহ্নের বিষয়ে তিনি জানান, 'সেলিমকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার কারণে এমন হয়ে থাকতে পারে।'

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, 'মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রম থেকে সেলিম নামে একজনকে উদ্ধারের ঘটনা জানার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে সেলিমের পরিবার থানায় কোনো অভিযোগ করেনি।'

Comments

The Daily Star  | English

Fund crunch hits Rohingyas hard

A humanitarian crisis in Cox’s Bazar Rohingya camps is brewing in the face of funding shortage for the refugees and more arrivals from the conflict-ridden Rakhine state of Myanmar.

10h ago