মুখস্ত শিক্ষার ওপর নির্ভরতা কমাতে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস থেকে নেওয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার শিক্ষার্থীদের মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশে বিশেষ করে মুখস্ত শিক্ষার ওপর নির্ভরতা কমাতে পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনছে।

তিনি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শুধুমাত্র মুখস্ত বিদ্যা শিখবে না। একটা শিশুর ভেতর যে মেধা ও মনন থাকে তাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া। তার ওই মেধা দিয়েই যেন সে এগিয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের শিক্ষা কারিকুলাম এবং শিক্ষা দেয়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার সকালে গণভবনে ডিজিটালভাবে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা-২০২৪-এর ফলাফল প্রকাশকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

এর আগে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সম্মিলিত ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এরপর নয়টি সাধারণ, একটি মাদ্রাসা বোর্ডসহ দশটি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কারিগরি বোর্ডের মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফলের পরিসংখ্যান হস্তান্তর করেন।

প্রি-প্রাইমারী শিক্ষাও আওয়ামী লীগ সরকারই শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসময় বাচ্চাদের হাতে খেলনার মাধ্যমেই অনেক কিছু তৈরি করা বা অনেক কিছু শেখার সুযোগ রয়েছে। তাদের জন্য ওই সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, তাদের কেবল বই দিয়ে বসিয়ে না রেখে খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া যেমন ফ্লোরে যদি একটি মানচিত্র থাকে যেখানে মহাদেশ ও মহাসগর থাকল, সেখানে বাচ্চাদের শেখানো যে একটা জায়গা থেকে আর একটা জায়গায় তোমরা লাফ দিয়ে যাও। তাহলে খেলতে খেলতেই সে ওই নামগুলোও জেনে যাবে। কাজেই খেলার মাধ্যমে তাদের শিক্ষা যেন প্রাথমিক পর্যায়ে আসে সেটা করে দেয়া যায়। তা করলে আমার মনে হয় তাদের কতগুলো মহাদেশ আর মহাসাগর তা মুখস্ত করতে হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেখবে, খেলবে, বিভিন্ন রং দেয়া হবে এক একটায়, সেভাবেই তারা শিখে যাবে। এধরনের অনেক কিছু আমাদের করতে হবে বলে আমি মনে করি।'

শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৫ বছরে ৫ হাজার ৯৭টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে এবং 'জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১' ও আমরা প্রণয়ন করেছি। সেই সাথে শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ সবধরনের সুযোগ-সুবিধা আমরা সরকারে আসার পর দিয়েছি।

'শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয় সেজন্য তার সরকার শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়' উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বলে গেছেন শিক্ষায় যে অর্থ ব্যয় হয় সেটা বিনিয়োগ। আমরা বিনিয়োগ করি।

আজ এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ায় আনন্দ অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি মনে করি শিক্ষাক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে অভিভাবকদেরও একটা আগ্রহ থাকবে যে তাদের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে সবসময় প্রচেষ্টা ছিল মানুষের মাঝে এই সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং শিক্ষার্থীদেরকে উৎসাহিত করা যেন তারা লেখাপড়ার দিকে মনযোগ দেয়। ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি স্বাক্ষরতার হার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি পাঠ্যক্রমে অংশ নেয়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমি বলব যদি কেউ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব তাদের স্কুলে পাঠানো এবং পড়াশোনা করানো।

তিনি বলেন, শুধু সাধারণ বিএ-এমএ পাশ করবে তা নয়, সাথে সাথে কারিগরি শিক্ষা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তিসহ সার্বিকভাবে শিক্ষিত হওয়ায় জন্য যা যা দরকার সে ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থাৎ বিশ্ব পরিমন্ডলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো শিক্ষা ব্যবস্থাই আমরা প্রবর্তন করতে চাই।

স্বাধীনতার পর পরই বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে জাতির পিতার শিক্ষা কমিশন গঠন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগী একটি শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, '৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সে নীতিমালা আর আলোর মুখ দেখেনি। '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর পরই অতীতের সেই শিক্ষা নীতির আলোকে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারায় তা আবার তিমিরেই হারিয়ে যায় এবং এরপর আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার আবারও উদ্যোগ নিয়ে সে নীতিমালা প্রণয়ণ করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটা সংশোধন ও পরিমার্জন করারও সুযোগ রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

38m ago