নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এক ‘নজিরবিহীন অপমান’: ইসরায়েল

ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও এই উদ্যোগে নিন্দা জানিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: এএফপি

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি। এই উদ্যোগের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েল বলেছে, এটি 'নজিরবিহীন অপমান'। 

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও হামাসের তিন নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দেইফ এবং ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন প্রধান কৌঁসুলি করিম খান।

ইসরায়েল প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের দাবিকে 'নজিরবিহীন অপমান' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অপরদিকে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস এই উদ্যোগে 'তীব্র নিন্দা' প্রকাশ করেছে।

ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও এই উদ্যোগে নিন্দা জানিয়েছে।

ফ্রান্স জানিয়েছে তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নিরপেক্ষতা ও 'জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম' সমর্থন করে।

নেতানিয়াহু বলেন, 'হেগের (আইসিসি) কৌঁসুলি গণতান্ত্রিক ইসরায়েলের সঙ্গে গণহত্যাকারী হামাসের তুলনা করেছেন, যা আমি ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছি।'

আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান। ছবি: আইসিসির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান। ছবি: আইসিসির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

কৌঁসুলি করিম খান এক বিবৃতিতে জানান, তিনি 'স্বেচ্ছায় মানুষ হত্যা', ' (মানুষকে) নিশ্চিহ্ন করা এবং/অথবা হত্যাকাণ্ড পরিচালনা' এবং 'মানুষকে ক্ষুধার্ত রাখার' অপরাধে ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন

তিনি আরও জানান, এই যুদ্ধে ইসরায়েলে 'ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিস্তৃত আকারে ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলা' চালিয়েছ, যা একটি 'মানবতাবিরোধী অপরাধ'। 

৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নজিরবিহীন অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৬০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫০ জন।

এই ঘটনার জেরে কবির খান হামাস নেতাকে ইসমাইল হানিয়া ও ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে 'অপরাধী' বলে অভিহিত করেন এবং মন্তব্য করেন, তাদেরকে ৭ অক্টোবরের হামলার দায় নিতে হবে।

তাদের অপরাধের মধ্যে 'মানুষকে জিম্মি করা, 'ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন সহিংসতা' ও 'নির্যাতনের' কথা উল্লেখ করেন প্রধান কৌঁসুলি।

হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে (বাঁয়ে) ও ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ছবি: এএফপি
হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে (বাঁয়ে) ও ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ছবি: এএফপি

তিনি বলেন, 'সশস্ত্র সংঘাতের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। কোনো সেনা, কমান্ডার বা বেসামরিক নেতা—কেউই—দায়মুক্ত থাকতে পারেন না।'

আইসিসির বিচারকরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে আইসিসির ১২৪ সদস্য রাষ্ট্রের ওপর এই পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তারের বাধ্যবাধকতা আসবে। অর্থাৎ নেতানিয়াহু বা অন্যান্যরা এসব দেশ সফর করলে দেশটি নীতিগতভাবে তাদেরকে গ্রেপ্তার করার কথা।

এ বিষয়টি আলাদা করে উল্লেখ করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেফ বোরেল।

তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও সদস্যদের তা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করার কোনো প্রক্রিয়া নেই এই আদালতের।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আইসিসির উদ্যোগকে নাকচ করে বলেন, 'এটি অবিশ্বাস্য'। তিনি জানান, 'ইসরায়েল ও হামাস কোনো দিক দিয়েই তুলনার যোগ্য নয়।'

ইহুদিদের জন্য আয়োজিত হোয়াট হাউসের অনুষ্ঠানে জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স
ইহুদিদের জন্য আয়োজিত হোয়াট হাউসের অনুষ্ঠানে জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, 'এ ধরনের উদ্যোগে মনে হতে পারে হামাস ও ইসরায়েল একই কাতারে।'

বাইডেন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার আনা পৃথক এক অভিযোগকেও নাকচ করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা অভিযোগ করেছে, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন গণহত্যার সমতুল্য।

গতকাল সোমবার বাইডেন হোয়াইট হাউসে ইহুদিদের জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন, '(গাজায়) যা হচ্ছে তা গণহত্যা নয়।'

আইসিসির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার ও নিরবচ্ছিন্ন হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৫৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

 

Comments