গ্রামীণফোন যেভাবে রবির চেয়ে বেশি আয় করে

ছবি: সংগৃহীত

গত বছর গ্রামীণফোনের মুনাফার হার (বিক্রির তুলনায় মুনাফা) রবি আজিয়াটার চেয়ে প্রায় সাত গুণ বেশি ছিল।

প্রতিষ্ঠান দুটির আর্থিক প্রতিবেদন দেখা গেছে, গত বছর দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের মুনাফা বেড়েছে ২১ শতাংশ। অন্যদিকে রবি মুনাফা করেছে তিন শতাংশ।

যদিও রবির গ্রাহক সংখ্যা গ্রামীণফোনের তুলনায় কম, তবুও সেবা ও বিস্তৃত নেটওয়ার্কের কারণে বিনিয়োগ প্রায় সমান। তাই মুনাফা হার কমে যায় প্রতিষ্ঠানটির।

সম্পদ ও ইক্যুইটির অনুপাতেও রবির মুনাফা গ্রামীণফোনের তুলনায় কম।

রবির পক্ষ থেকে দ্য ডেইলি স্টারকে জানানো হয়েছে, মুনাফা কম হলেও তা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে এবং আয় বাড়ার পাশাপাশি মুনাফার হারও বেড়েছে রবির।

২০২৩ সালে রবির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেড়ে ৩২০ কোটি টাকা হয়েছে। গ্রামীণফোন মুনাফা করেছে তিন হাজার ৩০৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।

টেলিযোগাযোগ খাতের সার্বিক কর কাঠামোও অপারেটরগুলোর অনুকূলে নয়। এই কাঠামো যেভাবে গড়া হয়েছে তাতে দেখা যায় ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য কর তুলনামূলক বেশি। রবির ভাষ্য, টেলিযোগাযোগ ব্যবসায় বড় প্রতিষ্ঠানের পরিচালন খরচ কম।

'ক্রমবর্ধমান প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও নীতিগত বাধা সত্ত্বেও রবি লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে।'

১৯৯৭ সালে একটেল নাম নিয়ে দেশে আসা অপারেটরটি পরে রবি নামে পরিচিত হয়। তখন নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রবি আজিয়াটা। ২০১৬ সালে এটি এয়ারটেল বাংলাদেশের সঙ্গে একীভূত হয়।

গ্রামীণফোনের যাত্রাও শুরু হয় ১৯৯৭ সালে।

প্রতিযোগিতামূলক বাজারে গুণগত মান-সেবা ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একই ধরনের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল স্থাপন করে রবিকে প্রায় একই বিস্তৃতিতে নেটওয়ার্ক কভারেজ দিতে হচ্ছে। খরচ গ্রামীণফোনের তুলনায় কম নয়।

গ্রামীণফোনের খরচ তার আয়ের ৬৬ শতাংশ ও রবির খরচ আয়ের ৯০ শতাংশ।

প্রতিষ্ঠান দুটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রবির স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ ও কর্মী সংখ্যা গ্রামীণফোনের তুলনায় বেশি। তাই খরচও বেশি।

২০২৩ সাল শেষে রবির নন-কারেন্ট অ্যাসেট ছিল ২০ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। গ্রামীণফোনের ছিল ১৭ হাজার ৫১১ কোটি টাকা।

স্থায়ী সম্পদ বেশি হওয়ায় রবির সম্পত্তি ও যন্ত্রপাতির অবমূল্যায়ন খরচ এক হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা বেশি। জিপির খরচ এক হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।

টেলিকম ব্যবসায় খরচ সব অপারেটরের জন্য প্রায় সমান। তবে যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক বেশি থাকে তাহলে খরচ কমে যায়।

এ ছাড়াও, এই খাতে প্রতি বছর প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। মূলধন খরচের ক্ষেত্রে এর আয়ের গড়ে ২০ শতাংশ পুনরায় বিনিয়োগ করতে হয়।

রবি জানায়, 'গ্রাহকদের সেরা সেবা দিতে আমরা নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ ও সর্বশেষ প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্য ক্রমাগত বিনিয়োগ করছি।'

২০২৩ সালে গ্রামীণফোনের কর্মী ছিল এক হাজার ২৭৭ জন। রবির কর্মী এক হাজার ৪৪৬ জন।

প্রতি মাসে রবির কর্মী উৎপাদনশীলতার অনুপাত (অর্থাৎ মাথাপিছু বিক্রির পরিমাণ) ছিল ৫৭ লাখ টাকা। জিপির ছিল এক কোটি তিন লাখ টাকা।

রবির মতে, প্রতিষ্ঠানের কর্মী উৎপাদনশীলতা অনুপাত একাধিক কারণের ওপর নির্ভর করে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি টেকনোলজি ও নেটওয়ার্কজনিত নানা ক্ষেত্র আউটসোর্সিংয়ের পরিবর্তে নিজস্ব কর্মী দিয়ে পরিচালনা করে তাই তাদের কর্মী সংখ্যা বেশি।

গ্রামীণফোন ২১ হাজার ২০০ ফোরজি সাইটের মাধ্যমে গ্রাহক পেয়েছে আট কোটি ২০ লাখ। অর্থাৎ, একেকটি সাইটের মাধ্যমে গড়ে তিন হাজার ৮৬৭ গ্রাহককে সেবা দেওয়া হয়।

প্রায় পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ গ্রাহকের চাহিদা পূরণে রবির আছে ১৬ হাজার ৮১৪টি সাইট। এতে দেখা যায়, একটি ফোরজি সাইট তিন হাজার ৪৯১ জন ব্যবহার করতে পারেন।

সাইটের মাধ্যমে রবির তুলনায় জিপি বেশি গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে।

রবির তুলনায় কয়েকটি সূচকে নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়ে গ্রামীণফোনের কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ কমে ২২৪ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়। রবির শেয়ারের দাম দুই দশমিক ২০ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ২২ টাকা ২০ পয়সা।

Comments

The Daily Star  | English
sirens sound in israel after iran missile attack

Sirens sounded after missiles launched from Iran, says Israeli army

Trump to decide within two weeks on possible military involvement

14h ago