হালদাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না

হালদা রক্ষায় এই নদীকে হেরিটেজ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু কোনো উদ্যোগই যেন হালদাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না। উল্টো দিনদিন নতুন করে দূষিত হচ্ছে এই নদী।

গত দুই সপ্তাহ ধরে টানা দূষণের শিকার হচ্ছে হেরিটেজ ঘোষিত নদীটি। প্রকাশ্যে দূষণ চললেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নীরব। পরিবেশ অধিদপ্তর এখনো দূষণের উৎস বের করতে পারেনি। উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য কার্যালয়সহ অন্যান্য সংস্থাগুলো দূষণের বন্ধে অস্থায়ী কোনো উদ্যোগও নেয়নি।

সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানা থেকে নির্গত কালো পানি হাটহাজারী উপজেলার কাটাখালী, খন্দকিয়া ও কৃষ্ণ খাল হয়ে সরাসরি হালদাতে গিয়ে পড়ছে। নদী ও খালের সংযুক্তস্থলে পানি কালচে রং ধারণ করেছে।

কাটখালী খালের মুখে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াজ উল্লাহ'র সাথে। তিনি বলেন, খালের পানিগুলো দূর্গন্ধযুক্ত। এগুলো সরাসরি নদীতে পড়ছে। উৎসমুখ বন্ধ করে দিলে এই বর্জ্যমিশ্রিত পানি থেকে হালদাকে রক্ষা করা যেত।

এদিকে, এই পানির উৎস সম্পর্কে প্রশাসন সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান নদী দূষণের কথা স্বীকার করেছেন। ইউএনও ডেইলি স্টারকে বলেন, দূষিত পানি আমার এলাকার তিনটি খাল হয়ে নদীতে মিশছে ঠিক, কিন্তু এই পানির উৎস হাটহাজারী নয়। সম্ভবত, নগরের চান্দগাঁও, কুলগাঁও, অক্সিজেন এলাকায় অবস্থিত কারখানা থেকে এসব দূষিত পানি আসছে।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হালদা নদীর কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা দেশের অন্য কোনো নদীতে নেই। প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- হালদা বাংলাদেশের একমাত্র জোয়ার ভাটার নদী যেখানে কার্প জাতীয় মাছ, রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ, প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে ডিম ছাড়ে। দ্রুত বড় হওয়ার কারণে এই ডিম থেকে হওয়া মাছের পোনার চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপী, তাই পোনার দামও অনেক চড়া।

জেলা মৎস্য অফিসার শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, আমরা দূষণকারীর বিরুদ্ধে সরাসরি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি না। ব্যবস্থা নেয়ার কাজটি করবে পরিবেশ অধিদপ্তর, তাই পরিবেশকে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। ২০২০ সালে ডিসেম্বরে হালদাকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণার পর এই নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। শুধু নির্দিষ্ট সময়ে মাছের ডিম সংগ্রহ করতে পারে সংগ্রহকারীরা।

কেন এতদিনে দূষণের উৎস শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, 'খালগুলো হয়ে দূষিত পানি নদীতে পড়ার খবর পেয়েছি। তবে এই পানির উৎস শনাক্ত এখনো সম্ভব হয়নি। আমরা ধারণা করছি, এসব কোনো ওয়াশিং ফ্যাক্টরির। আমরা চেষ্টা করছি দূষণকারীকে শনাক্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে।' এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'বেশিরভাগ সময় দূষণ বন্ধ থাকলে মাঝেমধ্যে কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান দূষিত পানি সরাসরি খালে ছেড়ে দেয়। জনবলের অভাবের কারণে আমরা নিয়মিত নজরদারি করতে পারছি না।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus joins stakeholders’ dialogue on Rohingya crisis in Cox’s Bazar

The three-day conference began with the aim of engaging global stakeholders to find solutions to the prolonged Rohingya crisis

1h ago