এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের কথা জানলেও চুপ ছিলেন আ. লীগ নেতা মিন্টু

এমপি আনার হত্যা
আনোয়ারুল আজীম আনার ও সাইদুল করিম মিন্টু। ছবি: সংগৃহীত

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার আগেই ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এ খবর জানতেন বলে প্রমাণ পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

গত ১৬ মে মিন্টু এমপি আনার হত্যার বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন, এমনকি ছবিও পেয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা নিহতের পরিবারকে তিনি জানাননি।

ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তার মোবাইল ফোনের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দারা এসব তথ্য পান।

এমনকি সাত দিনের রিমান্ডে থাকা বাবু ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে বলেছেন, তিনি তার ফোন মিন্টুকে দিয়েছিলেন এবং হত্যার তথ্য তার সঙ্গে শেয়ার করেছেন।

হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়ক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে ফোনে বাবুর যোগাযোগ হয়। আমানুল্লাহ ও বাবু জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলেন, তারা হোয়াটসঅ্যাপে হত্যার ছবি বিনিময় করেছিলেন এবং ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে দেখা করেছিলেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনারের সঙ্গে মিন্টুর বিরোধ ছিল।

গতকাল ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডিবি প্রধান বলেন, বাবুর মোবাইল ফোন কেন মিন্টুর কাছে ছিল এবং কেন তিনি হত্যার তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা নিহতের পরিবারকে জানাননি এসব বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, মিন্টু ঠিকঠাক জবাব দিতে পারলে তদন্ত কর্মকর্তা তাকে ছেড়ে দেবেন, নইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাবু রিমান্ডে রয়েছেন এবং সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

'আরও কয়েকজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যারা নির্দেশনা দিয়েছেন এবং যারা আজিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন তাদেরসহ কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমি এটাও বলতে চাই কারো প্ররোচনায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না।

এদিকে এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করে তার বাবার হত্যার বিচার দাবি করেন।

পরে ডরিন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি শুনেছেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, কোনো চাপে যেন তদন্ত বন্ধ না হয় সেজন্য তিনি মন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন।

ডরিন বলেন, তিনি শুনেছেন গ্রেপ্তার বাবু ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে টাকাপয়সার লেনদেন নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন। তিনি বলেন, যারা টাকা দিয়েছে তাদের নাম জানতে চাই। কেন তারা এটা করল?'

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে এবং তিনি বিচার চাইবেন এটাই স্বাভাবিক।

কোনো চাপ আছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, 'আমাদের ওপর কে চাপ দেবে? কোনো চাপ নেই। তদন্ত সঠিকভাবে চলছে।'

এদিকে এমপি আনারের খুনিদের শাস্তির দাবিতে ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন হয়েছে। মিন্টুকে আটকের প্রতিবাদে বিক্ষোভও হয়েছে।

গত ১২ মে কলকাতায় গিয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে ছিলেন এমপি আনার। পরের দিন তিনি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলে বের হন। ২২ মে ভারত ও বাংলাদেশের পুলিশ জানায়, এমপি আনার খুন হয়েছেন।

[আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য রেখেছেন।]

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice enemy of humanity: Tarique

This will endanger the environment for building a democratic culture, he says

19m ago