ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে যেভাবে সাহায্য করছে উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সফর বিশ্ব রাজনীতিতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে
উত্তর কোরিয়া সফরে এসে কিম জং উনের সঙ্গে অরাস গাড়িতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। ছবি: রয়টার্স
উত্তর কোরিয়া সফরে এসে কিম জং উনের সঙ্গে অরাস গাড়িতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। ছবি: রয়টার্স

পিয়ংইয়ং মস্কোকে কয়েক লাখ কামানের গোলা ও বন্দুকের গুলি সরবরাহ করেছে বলে জানা গেছে। বদলে রাশিয়াও তার এই মিত্র রাষ্ট্রের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

উত্তর কোরিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সফর বিশ্ব রাজনীতিতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এই সফরের মাধ্যমে গত কয়েক দশকের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

বিষয়টি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে কারণ, কিম জং উন এবং পুতিন একটি সামরিক চুক্তি সই করেছেন। এতে বলা হয়েছে, অন্য কোনো শক্তি এই দুই দেশের কোনো একটির উপর আক্রমণ চালালে অপর দেশটি তাকে সাহায্য করবে।

বছরখানিক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন দাবি করছিল, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার তৈরি কার্তুজ ও গোলা ব্যবহার করছে। শুধু তাই নয়, উত্তর কোরিয়ার ব্যালিসটিক ক্ষেপণাস্ত্রও রাশিয়া ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। অন্যদিকে, রাশিয়া ইউক্রেনকে সামরিক ও উপগ্রহ বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বারবার। যদিও দুই দেশই এ ধরনের অভিযোগ মানতে চায়নি। কারণ, উত্তর কোরিয়াকে সামরিক সাহায্যের দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আছে। রাশিয়াও তা ভাঙতে পারে না।

পিয়ংইয়ং আরো পঞ্চাশ লাখ গোলা দিতে পারে

পুতিনের সম্মানে আয়োজিত কনসার্টে দুই নেতা। ছবি: রয়টার্স
পুতিনের সম্মানে আয়োজিত কনসার্টে দুই নেতা। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিযোগ, সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে আরো পঞ্চাশ লাখ গোলা পাঠিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিন ওয়ানসিকের দাবি, তার দেশ অন্তত ১০ হাজার শিপিং কন্টেইনার উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ার দিকে যেতে দেখেছে। যাতে গোলা ছিল বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিন বলেন, 'আমরা ধারণা করছি, পিয়ংইয়ং সফরে এসে পুতিন আরো গোলাবারুদ পাঠানোর আবেদন করেছেন।'

এদিকে ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অস্ট্রিয়ার এক সামরিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে গত এক বছরে দশ লাখ গোলা দেওয়ার কথা ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর। কিন্তু তারা তার অর্ধেকও দিতে পারেনি। অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে রাশিয়া তার তিন গুণেরও বেশি গোলা আনিয়ে নিয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র

মার্কিন গোয়েন্দারা গত জানুয়ারিতে অভিযোগ করেছিলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে উত্তর কোরিয়ার তৈরি ব্যালিসটিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। যার পাল্লা প্রায় ৯০০ কিলোমিটার। পরে ইউক্রেনও একই দাবি করে। যদিও ব্যালিসটিক ক্ষেপণাস্ত্রের খুঁটিনাটি তথ্য মার্কিন গোয়েন্দারা দেননি।

উত্তরের কোরিয়ার আসল শত্রু দক্ষিণ কোরিয়া

সামরিক বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের বক্তব্য, উত্তর কোরিয়া প্রয়োজনের সময় রাশিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা দিয়ে সাহায্য করলেও তাদের মূল লক্ষ্য রাশিয়ার কাছ থেকে আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি আদায় করে নেওয়া। কারণ উত্তর কোরিয়া মূল শত্রু হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়াকে বিবেচনা করে। কোনোভাবেই তারা নিজেদের অস্ত্রাগার শূন্য করে রাশিয়াকে সাহায্য করবে না। কারণ, তারা জানে, যে কোনো সময় দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে লড়াই হতে পারে। বস্তুত, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোরিয়া সাগর অঞ্চলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান জোরালো করতে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র জোটবদ্ধ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে কূটনৈতিক এবং কৌশলগতভাবে প্রয়োজন তাদের।

উত্তর কোরিয়ার শ্রমিক

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, উত্তর কোরিয়া শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই রাশিয়াকে সাহায্য করছে না, তারা শ্রমিক পাঠিয়েও সাহায্য করছে। যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের যেসব এলাকা রাশিয়া নতুন করে দখল করতে শুরু করেছে, সেখানে শ্রমিক পাঠাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। কারণ, রাশিয়ার অধিকাংশ শ্রমিক এখন যুদ্ধক্ষেত্রে। রাশিয়ার জন্য এটাও একটি বড় সাহায্য। পাশাপাশি প্রথম দিন থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পাশে থেকেছে উত্তর কোরিয়া। এই বিষয়টিও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

চীন থেকে বাড়ছে দূরত্ব

কিমের সঙ্গে বাগানে হাঁটার সময় পোষা কুকুর দেখে আদর করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রাশিয়া
কিমের সঙ্গে বাগানে হাঁটার সময় পোষা কুকুর দেখে আদর করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রাশিয়া

গত কয়েক বছরে কিম জং উনের আগ্রাসী মনোভাব আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। যেভাবে একের পর এক সামরিক পরীক্ষা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন, তা অভূতপূর্ব। এবং এর কারণ হলো, রাশিয়ার মতো শক্তি তার পেছনে আছে।

অপরদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে কিমের এই সখ্যতা উত্তর কোরিয়াকে চীন থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে বলেও কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Take advance preparation for floods: PM

Prime Minister Sheikh Hasina instructed authorities to prepare for more potential floods this year, following discussions at an Executive Committee of the National Economic Council meeting held at the NEC auditorium in Sher-E-Bangla Nagar today

1h ago