পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে

একসময় পোশাক খাতের মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশের বেশি ছিলেন নারী
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিবিএস, উৎপাদন,
প্রতীকী ছবি। স্টার ফাইল ফটো

তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, অটোমেশন ও অন্যান্য খাতের তুলনায় মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় এই খাতে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ কমে গেছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, পোশাক খাতে নিযুক্ত মোট শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা কমে ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

অথচ একসময় পোশাক খাতের মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশের বেশি ছিলেন নারী। বিশেষ করে যারা গ্রামাঞ্চল থেকে রাজধানীতে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করতেন তারা এই খাতে কাজ নিতেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে অন্যান্য খাতে চাকরির সুযোগ খুব সীমিত থাকায় আশির দশকে মূলত অদক্ষ নারী শ্রমিকরা পোশাক খাতের হাল ধরেন।

তখন বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় অনেক কম হওয়ায় নারী শ্রমিকরা কম বেতন হলেও চাকরি নিতে আগ্রহী ছিলেন।

এরপর বহু বছর ধরে পোশাক খাতে পুরুষ শ্রমিকের বিপরীতে গড়ে অন্তত দুজন নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হতো।

তবে, সাম্প্রতিক সময়ে এই অনুপাত কমেছে। কারণ নারীরা এখন পোশাক কারখানায় শ্রম দেওয়ার চেয়ে করপোরেট চাকরিতে বেশি আগ্রহী।

বছরের পর বছর ধরে নারী শ্রমিকদের অবদানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। বিশ্ব বাজারে তৈরি পোশাকের ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, 'নারী শ্রমিকের প্রভাব এখন কমেছে।'

অটোমেশন ও স্পিনিং, উইভিং, ডাইং এবং ফিনিশিং সেক্টরের কারণে তা সম্ভব হয়েছে। এগুলো মূলত পুরুষ শ্রমিকরা পরিচালনা করে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া গত পাঁচ দশকে গ্রামাঞ্চলে শ্রমিকদের জন্য প্রচুর কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে তারা এখন জেলা পর্যায়ে বা নিজ শহরে কাজ করতে পারেন।

'তাই তারা পোশাক কারখানায় কাজ করতে শহরে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।'

গতকাল রাজধানীর হোটেল শেরাটনে এমআইবি আয়োজিত পোশাক খাতের উন্মুক্ত তথ্য নিয়ে এক আলোচনা শেষে ফজলে শাহীন এহসান দ্য ডেইলি স্টারকে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'অনেক পোশাক কারখানা শ্রমিক সংকটে ভুগছে। এজন্য কেবল নারী নয়, পুরুষরাও এখন পোশাক খাতে কাজ করতে চান না।'

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, 'কম মজুরি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, কঠিন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ও ভারী যন্ত্রপাতি চালানোর দক্ষতার অভাবে পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে।'

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, তরুণ প্রজন্ম পড়ালেখাতে আগ্রহী বেশি। তাই এ খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ার সম্ভাবনা এখন কম।

'কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা অনেক বছর ধরে কারখানায় কাজ করার পর স্বাবলম্বী হন। তখন তারা উদ্যোক্তা হন অথবা স্বামীর সঙ্গে কৃষিকাজের মতো পারিবারিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন,' বলেন তিনি।

Comments