পদ্মায় আ. লীগ নেতার বালু উত্তোলন, ঝুঁকিতে ফরিদপুর শহররক্ষা বাঁধ

ফরিদপুরে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে জেলার শহর রক্ষা বাঁধ। একই কারণে এক রাতের ভাঙনে পদ্মায় তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী নয়টি বসতবাড়ি।
পদ্মার ভাঙনে যেকোনো সময় তলিয়ে যেতে পারে বসতঘর। সেই আশঙ্কা বুকে নিয়ে নদীর দিকে চেয়ে আছেন এক নারী। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

ফরিদপুরে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে জেলার শহর রক্ষা বাঁধ। একই কারণে এক রাতের ভাঙনে পদ্মায় তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী নয়টি বসতবাড়ি।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টার মধ্যে ফরিদপুর সদরের ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ধলার মোড় সংলগ্ন পালডাঙ্গী এলাকায় বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার এই ঘটনা ঘটে।

এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, অনেকদিন ধরেই মো. আজম মিয়া (৪৫) নামের এক বালু ব্যাবসায়ী পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন। তিনি ফরিদপুর পৌরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিন মাস আগে ওই এলাকায় নদীতে গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলনের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অভিযান চালিয়ে এ উদ্যোগ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও করে।

আজ সকালে এলাকাটিতে গিয়ে দেখা যায়, এক রাতের মধ্যে ঘরবাড়ি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ওইসব ঘরের মালিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। বসতঘরের সঙ্গে তাদের রান্নাঘর ও টয়লেটও ভেসে গেছে। এরপর থেকে তাদের চুলা জ্বলেনি। নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে সবাই ঘরের মালামাল সরানোর কাজে ব্যস্ত আছেন।

নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে বাঁশঝাড়। ঘর বাঁচানোর প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

বসতঘর হারানো এই ব্যক্তিরা হলেন—আফজাল শেখ, মজনু শিকদার, মো. হাসান মাস্টার, বাদশা শেখ, সাহেব শেখ, দেলোয়ার শেখ, সাদ্দাম শেখ, সালাম শেখ ও জাহানারা বেগম।

কথা বলে জানা গেল, বসতঘরের সঙ্গে তাদের কারও কারও বাঁশবাগান ও ঘরসংলগ্ন গাছপালাও নদীতে তলিয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, পদ্মায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি তোলার কারণে ধলারমোড়ের নিকটবর্তী পালডাঙ্গীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে।

ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো আফজাল শেখ বলেন, '৮৮ সালের বন্যার সময় পদ্মা নদীতে ঘরবাড়ি হারানোর পরে আমরা বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে আশ্রয় নেই। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমরা এখানে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছি। এর কাছাকাছি জায়গায় এভাবে বালু না তুললে ভাঙনের ঘটনা ঘটত না।'

ক্ষতিগ্রস্ত মজনু শিকদারের ভাষ্য, 'এই জায়গার নদীতে ৫০ ফুট গভীর করে বালি তুলে নিয়েছে। এতে এখন এই বেড়িবাঁধও ভাঙার উপক্রম হয়েছে।'

সালাম শেখ নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, 'আমাদের এখন পায়খানা-পেশাব করার কায়দাও নাই। টিউবওয়েলও নাই।'

ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান ফকিরও জানালেন, অনেকদিন ধরেই আওয়ামী লীগ নেতা আজম মিয়ার লোকজন বালু উত্তোলনের কাজ করে আসছেন। তিনি বলেন, 'যখন আমরা অভিযোগ দেই, তখন দুই-তিনদিন বালু তোলার কাজ বন্ধ থাকে। তারপর আবার শুরু হয়। এবার এ কারণে বেড়িবাঁধও আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। আর কয়েকফুট ভাঙলেই বাঁধে ভাঙন ধরে যাবে।'

খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা। তিনি বলেন, 'ভাঙন প্রতিরোধে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলা হবে।'

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, 'বালি কেটে যে এই সর্বনাশ করেছে তারা বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে।'

অবশ্য অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আজম মিয়ার দাবি, যে জায়গাটি ভেঙে গেছে তার মালিক তিনি। বিআইডব্লিউটিএ'র কাছ থেকে বালু কিনে তিনি সেখানে রেখেছিলেন।

ভাঙনে যারা বসতঘর হারিয়েছেন তাদের বিষয়ে আজম মিয়ার ভাষ্য, ৮৮'র বন্যার পর তিনি তাদের সেখানে মানবিক কারণে থাকতে দিয়েছিলেন। তাই এখানে তার দোষটা তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না।

Comments

The Daily Star  | English

Fugitives can’t run in national elections

The Election Commission has proposed stricter amendments to the election law, including a provision barring fugitives from contesting national polls.

9h ago