শত শত প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে সরকার কোনো কথা বলছে না: মির্জা ফখরুল

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

সরকার শুধু সরকারি স্থাপনায় হামলার কথা বলছে কিন্তু শত শত প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বুধবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শেষ হওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এটা কখনো হয়নি, অতীতেও হয়নি। আপনি যদি অতীতের ইতিহাস দেখেন, পাকিস্তান আমলের ইতিহাস দেখেন দেখবেন বহুবার আন্দোলন এসেছে, আন্দোলন এক পর্যায়ে হয়ত সেটা স্তিমিত হয়েছে তারপরে কিন্তু আরও বেগবান হয়েছে।'

এবারের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনকে 'আইওপেনার' অভিহিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এবারের আন্দোলনে সব সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এক বাচ্চা ছেলে তার মায়ের কাছে বলে চলে এসেছে যে, আমি যাব, সাধারণ মানুষ বেরিয়ে এসেছে, ওদের সঙ্গে আমাদের যেতে হবে।'

'সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে' মন্তব্য করেছে তিনি বলেন, 'আজ একদিকে কোটা আন্দোলন ছিল, অন্যদিকে সরকারের চরম ব্যর্থতা। সবক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে…দুর্নীতি করে তারা এত ব্যর্থ হয়েছে যে, রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সে কারণে জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েছে।'

'সাময়িকভাবে সেনাবাহিনী নামিয়ে, দমন-পীড়ন করে, নির্যাতন করে, তারা এটাকে হয়ত থামিয়ে দিতে পারে। এটার যদি রাজনৈতিক সমাধান না করে তাহলে কিন্তু কখনো এটার শেষ সমাধান হবে না,' যোগ করেন তিনি।

রাজনৈতিক সমাধান কী, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'রাজনৈতিক সমাধান, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'সরকার জনগণের সমস্যা নিয়ে কথা বলছে না। তারা যখনই কথা বলছে তারা সরকারি স্থাপনায় আক্রমণের কথা বলছে। শত শত প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না। পুলিশের গুলিতে যে মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে সেটার ব্যাপারে কিছু বলছে না।'

'তাদের মূল উদ্দেশ্য আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে ভিন্নভাবে চিহ্নিত করা। আন্দোলনের মূল দাবি পাশ কাটাতে…দেখবেন ছাত্রদের দাবি পূরণ হয়নি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেনি, এটা নিয়ে কথাও বলেনি,' যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'সমস্যাটা যখন শুরু হলো, তখনই মন্ত্রীরা বললেন যে, এটা আদালতের বিষয় আদালতই সমাধান করবে। যখন পরে আরও বেশি বেগবান হয়েছে, আন্দোলন জোরদার হয়েছে, তখন তারা বলতে শুরু করল অপেক্ষা করো, আদালত থেকে সমাধান আসবে। সমস্যার সমাধানে যদি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলত তাহলে এটা এতদূর পর্যন্ত গড়াত না।'  

তিনি বলেন, 'একটা আন্দোলন দমন করতে এরকম চরম শক্তি প্রয়োগ, শত শত মানুষকে হত্যা করা, আর্মি নামানো কারফিউ দেওয়া…এটাতে সরকারের চরম ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়েছে।'

'জনগণ যেন সত্য না জানতে পারে সেজন্য সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে রেখেছে। এতে শুধু সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়েছে তা না, ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, একটা ভিডিও তৈরি করে ব্যবসায়ীদের সভায় দেখানো হয়েছে সেটাতে সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করা হয়েছে,' বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন এখনো আছে। শুধু কোটা নয়, আরও যে দাবিগুলো আছে অবশ্যই সেসব দাবি সরকারের পূরণ করা উচিত।'

তিনি বলেন, 'এ সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। সে কারণে তারা জনগণের চোখের ভাষা, মনের কথা কখনো বুঝতে পারে না।'

গত কয়েকদিনে বিএনপির ২ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'ঠিকমতো তথ্য পাচ্ছি না। যোগাযোগ ব্যবস্থা সরকার বন্ধ করে রাখায় আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।' 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

2h ago