‘বাবা কেন আমায় ফোন করছে না?’

তাহির জামান প্রিয়। ছবি: সংগৃহীত

গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছোড়া গুলি মাথায় এসে বিদ্ধ হলে নিহত হন সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয় (২৮)।

গুলির শব্দ শোনার পরেই ঘটনাস্থলে থাকা প্রিয়র বন্ধুরা তাকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেন।

তখন একাধিকবার তারা প্রিয়র কাছে যেতে চাইলেও পুলিশের গুলির কারণে পিছু হটতে বাধ্য হন। পরে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রিয়র মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যেতে দেখেন।

পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে প্রিয়র বন্ধুরা তার মরদেহের খোঁজে এক থানা থেকে আরেক থানায় খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু কোনো থানা থেকেই তারা প্রিয়র মরদেহের তথ্য জানতে পারেননি।

পরদিন তারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে। প্রয়োজনীয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর তারা মর্গে ঢুকছিল, তাদের মনে তখন এক অজানা শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কা সত্যি হয় যখন তারা মর্গে প্রিয়র মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

বাবা হারানো সন্তান

চার বছর বয়সী মেয়ে সাদিরা জামানকে রেখে গেছেন প্রিয়।

যদিও বাবা-মেয়ে ভিন্ন শহরে থাকত, কিন্তু প্রতিদিন রাতেই ভিডিও কলে কথা হতো দুজনের।

১৯ জুলাই থেকে দাদিকে একটি প্রশ্নই ক্রমাগত করছে সাদিরা, 'বাবা কেন আমায় ফোন করছে না?'

কিন্তু এই প্রশ্নের কী উত্তর দেবেন, জানেন না প্রিয়র মা শামসি আরা জামান।

'এই ছোট্ট শিশুকে আমি কী বলব?', বলেন তিনি।

স্ত্রীর সঙ্গে প্রিয়র বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। কাজের সূত্রে ঢাকায় আসার আগ পর্যন্ত মেয়ে সাদিরা ও বাবা প্রিয় একসঙ্গেই থাকত। এরপর থেকে রংপুরে প্রিয়র মায়ের সঙ্গে থাকছে সাদিরা।

প্রিয়র মরদেহ তার বাসায় নেওয়ার পর যারা এসেছিলেন, তাদের সাদিরা বলেছে, 'বাবা ঘুমোচ্ছে, তোমরা ডিস্টার্ব কোরো না।'

এত মানুষের ভিড় দেখে দাদির কাছে এতজন আসার কারণও জানতে চায় সাদিরা।

অপূর্ণ স্বপ্ন

মা শামসি আরা জামান জানান, সিনেমাটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ ছিল প্রিয়র এবং আকাঙ্ক্ষা ছিল চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়ার। এইচএসসি পাস করার পর তাই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরিবর্তে ঢাকায় গিয়ে ভর্তি হন পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটে।

২৮ বছর বয়সী প্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্টে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন। শিগগির তার অন্য একটি পোর্টালে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।

২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন প্রিয়।

২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতেই প্রিয়র মা তাকে এতে অংশ নিতে না করেছিলেন। কিন্তু জবাবে প্রিয় বলেছিলেন, 'এটা ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন এবং এতে অংশ নেওয়া আমার দায়িত্ব।'

উল্লেখ্য, কোটা আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে অন্তত ১৬২ জন নিহত হয়েছেন (নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে)।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

5h ago