‘একজনকে মারতে কতগুলো গুলি লাগে, স্যার?’

কোটা আন্দোলনে নিহত
ছবি: এমরান হোসেন/ স্টার

গত শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছোটাছুটি করছিলেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপপরিদর্শক ময়নাল হোসেন ও তার স্ত্রী। তাদের হাতে ছিল ১৭ বছরের ছেলে ইমাম হোসেন তাঈমের একটি ছবি। যাকেই পাচ্ছিলেন ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছিলেন, এই ছেলেকে তারা কি কোথাও দেখেছেন?

বিকেল ৫টা থেকে পরের দুই ঘণ্টা তারা হতাহতদের তালিকায় তাঈমের নাম খোঁজেন। পরে ছবি দেখে একজন সাংবাদিক তাঈমের বাবাকে মর্গে খোঁজ নিতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বিভাগের লাশঘরের উদ্দেশে দৌড় দেন তিনি। একজন লাশঘরের দরজা খুলে দিলে ভেতরে ঢোকেন তারা। সেখানে পড়ে ছিল রক্তে ভেজা ছররা গুলিবিদ্ধ তাঈমের নিথর দেহ।

ছেলের মরদেহ দেখে স্তব্ধ হয়ে যান ময়নাল হোসেন। তার স্ত্রী মেঝেতে পড়ে মূর্ছা যাওয়ার আগে চিৎকার করে বলছিলেন, 'ও আল্লাহ! আমার পোলারে কে মারল! তুই আমারে না বইলা কেন বাইর হইছিলি?'

কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে কলেজশিক্ষার্থী তাঈম শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে তাদের যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এর আগে তিন দিন ধরে যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষ চললেও তাঈমকে ঘরে আটকে রাখা যায়নি।

ঘণ্টাখানেক পর তাঈমের বাবা-মাকে কেউ ফোন করে জানায় যে তাদের ছেলেকে গুলি লেগেছে; তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

ময়নাল বলেন, 'কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে আমার ছোট ছেলে তাতে যোগ দেয়। তাকে শুরু থেকেই না করেছিলাম আন্দোলনে যেতে। কারফিউয়ের মধ্যে তাকে বের হতেও না করেছিলাম। কিন্তু আমার কথা শোনেনি।'

মর্গে তাঈমের মরদেহ খুঁজে পাওয়ার পর ফোনে ময়নালকে বলতে শোনা যায়, 'স্যার, আমার ছেলেটা মারা গেছে। বুলেটে ওর বুক ঝাজরা হয়ে গেছে। স্যার, আমার ছেলে আর নেই।'

তিনি প্রশ্ন রেখে তাকে বলেন, 'একজনকে মারতে কতগুলো গুলি লাগে স্যার?'

ছেলে গুলিবিদ্ধ জানিয়ে ঊর্ব্ধতন কর্মকর্তার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে এসেছিলেন ময়নাল। ফোনে কথা বলার সময় অপর প্রান্তে কে ছিলেন তা নিশ্চিত করতে পারেনি দ্য ডেইলি স্টার।

Comments

The Daily Star  | English

Media freedom may turn into empty promise: TIB

The graft watchdog voices serious concerns over the state of press freedom in the country

50m ago